পাহাড়ের উৎসব বৈসাবি

চাকমাদের ‘বৈসু’, মারমাদের ‘সাংগ্রাই’ এবং ত্রিপুরাদের ‘বিহু’- তিন সম্প্রদায়ের বর্ষবরণ উৎসবের তিন নাম। ‘বৈসাবি’ নামকরণ হয়েছে তাদের এই তিন উৎসবের প্রথম অক্ষরগুলো নিয়ে। প্রায় চারদিন ধরে চলা এই আয়োজন উপভোগ করতে চাইলে যেতে পারেন খাগড়াছড়ি-সাজেক।

সমির মল্লিকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 April 2017, 07:48 AM
Updated : 12 June 2017, 12:25 PM
পাহাড়বাসীদের উৎসব হলেও বৈসাবি হয় সার্বজনীন। পাহাড়ের সবচেয়ে বড় এই আয়োজনে রংয়ে রঙিন হয় পাহাড়-অঞ্চল। আমেজ ছড়িয়ে পড়ে দুর্গম পাহাড়েও।

বৈসাবিতে ফুল বিজু'র মাধ্যমে উৎসবের সূচনা হয়। শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া চেঙ্গী নদীতে ফুল ভাসায় আদিবাসী পুরুষ-নারী, তরুণ-তরুণী এমনকি শিশুরাও। রঙিন বাহারি আদিবাসী পোশাকে তরুণ-তরুণীরা বিজুফুল, মাধাবী লতা, অলকান্দ, জবা, নয়নতারাসহ বিচিত্র সব ফুল নদীতে ভাসায়।

বৈসাবির অন্যতম আর্কষণ পানি খেলা বা ‘জলকেলি উৎসব’। বর্ণাঢ্য র‌্যালি, গড়িয়া-নৃত্যসহ দারুণ সব আয়োজন। উৎসবের রং ছড়ায় পাহাড়ের দর্শণীয় এলাকাগুলোতে।

উৎসব উপভোগ করার পাশাপাশি এসব এলাকা ঘুরে প্রকৃতির অনাবিল সৌন্দর্যে ডুব দিতে পারেন। খাগড়াছড়ি শহরের কাছেই আলুটিলা'র রহস্য সুড়ঙ্গ।

গাড়ি থেকে নামতেই চোখে পড়বে বিশাল বটবৃক্ষের পাদদেশে লেখা, ‘আপনি কি একজন সাহসী অভিযাত্রী, তাহলে রহস্যময় সুড়ঙ্গে আপনাকে স্বাগতম।’

সুড়ঙ্গে পথ চলার জন্য সঙ্গে নিতে হয় বাঁশের মশাল। ভেতরে ঢুকতেই শীতল জলের প্রলেপ, পাথুরের পথ বেয়ে জলের স্রোত বয়ে যাচ্ছে সুড়ঙ্গের ভেতর দিয়ে। মশালের আলোয় সুড়ঙ্গের ঘুটঘুটে অন্ধকার কাটিয়ে সামনে যেতেই চোখ পড়বে প্রাগৈতিহাসিক সময়ের প্রাচীন পাথরে মোড়ানো গুহার কালো আবরণ। পাথুরে পিচ্ছিল পথের গুহাতে হাঁটতে বেশ সাবধান হতে হবে।

আলুটিলা পাহাড় থেকে খাগড়াছড়ি শহর দেখতে বেশ, মনে হয় কোনো পাখির চোখে পুরো শহরটাকে দেখছি। পাহাড়ের পাদদেশ বিস্তৃত, শহরে সীমানা পযর্ন্ত। সকালে আলুটিলা ঘুরে দুপুরের নাগাদ রিছাং ঝরনার পথে রওনয়া দেওয়া যায়। মূল সড়ক থেকে রিছাং ঝরনার দূরত্ব প্রায় ২.৫ কিলোমিটার।

পথের অপরূপ সৌন্দর্যের স্বাদ নিতে নিতে পৌছে যাবেন সেখানে। পাহাড়ের ওপর থেকে বয়ে আসা ঝরনার স্রোতধারা আবার দীর্ঘ ক্যাসকেড বেয়ে আছড়ে পড়ছে নিচের দিকে। রিছাং খুব বেশি বড় না হলেও ঝরনার নান্দনিক কাঠামো মুগ্ধ করবে সবাইকে।

রিছাং ঝরনা শীতল জলের পরশ গায়ে লাগিয়ে ফিরতে ফিরতে দূর পাহাড়ের গায়ে হেলান দেবে সুর্য। শেষ বিকেলের আলোয় পাহাড়ের বুকে ডুবন্ত রবির রঙিন দৃশ্য দেখতে দেখতে ফিরতে পারবেন শহরে।

খাগড়াছড়ি শহরের আশপাশের ভ্রমণ পর্ব শেষ করে, হাতে আরেক দিন সময় বাড়িয়ে ঘুরে আসতে পারেন সাজেক উপত্যকায়। হালের ‘ক্রেইজ’ এই উপত্যকার সৌন্দর্যের স্বাদ নিতে থাকতে হবে এক রাত।

ভৌগিলিক অবস্থান রাঙামাটিতে হলেও যাতায়াত সহজ পথ খাগড়াছড়ি। এই শহর থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে মেঘের উপত্যকা সাজেক। যেখানে করতে পারবেন মেঘের সঙ্গে মিতালি।

প্রয়োজনীয় তথ্য: ঢাকা থেকে এসি/ননএসি বাসে পৌঁছাতে পারবেন খাগড়াছড়ি। শ্যামলী,এস আলম, ইকোনো, রিফাত, হানিফ, সেন্টমার্টিনসহ বেশ কিছু এসি/ননএসি বাসে নিয়মিত যাতায়াত করে।

খাগড়াছড়ি থেকে চাঁন্দের গাড়ি কিংবা পিকআপে রির্জাভ নিয়ে সাজেকে পৌঁছাতে পারবেন। তবে ছুটির দিনে সাজেকে রাতযাপন করতে হলে আগে থেকেই রির্সোট বুকিং দিয়ে যেতে হবে। সাজেক থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটারের দূরের গ্রাম কংলাক। গাড়ি বা হাঁটা পথে কংলাক পৌঁছাতে পারবেন।

এছাড়াও বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করতে পারেন ০১৮১৫-৮৫৬৪৯৭ নম্বরে।

ছবি: লেখক ও জীবন চৌধুরী।