পাহাড়ের চূড়া তখন হালকা কুয়াশায় আচ্ছন্ন। বসন্তের শেষ বিকাল পেরিয়ে পশ্চিমের আকাশ বিদায়ী সোনার সিংহ-সূর্যদেবতা তখন পাহাড়ের কোলে হেলে পড়ছে মাত্র। সূর্যের সোনালি রংয়ে মোড়ানো সবুজ পাহাড়। দিন শেষে এই রং যেন পুরো পাহাড়কে সোনায় মুড়িয়ে রাখে।
অদূর সীমান্তে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে ভারতের মিজোরাম রাজ্যের ‘ব্লু মাউনন্টেইন’গুলো। উপত্যকা পেরিয়ে ক্রমশ পাহাড়ের ভাঁজ যেন আকাশচুম্বী হয়েছে ওখানে। আর এই দীর্ঘ ভূখণ্ডজুড়ে অরণ্যের সীমানা।
বিকাল পেরিয়ে সন্ধ্যা নামতেই নৈর্সগিক নিরবতা পাহাড়ের চারপাশে। কেবল মৌসুমি হাওয়ার মতো তীব্র বাতাস ছুটে আসছে নিচের পাহাড়গুলো ছুঁয়ে।
অত্যন্ত নির্জন পাহাড় চূড়ার পাড়া কংলাক। মৌসুমি হাওয়ায় থেমে থেমে বয়ে যাচ্ছে পাহাড়ের চূড়ায়।
হিম শীতল বাতাসের বুকে মাচাংয়ে পেতেছি তাবু, রাতটা তাবুতে কাটাব। পাহাড়ের রহস্যের ডানা মেলতে হিম হওয়া রাতে, হাজার ফুটের পাহাড় পেরিয়ে রাতের দিগন্তে দেখা দেয় পূর্ণিমায় শীতল আলো। জোছনায় ঢাকা প্রকৃতি।
রাতের আকাশে মেঘ উড়ে যাচ্ছে থেমে থেমে। যেন গ্রাস করে নিচ্ছে চন্দ্রের মায়াবী আলো। পাহাড়ের নির্জনতায় কেবল জেগে থাকা দূর থেকে ভেসে আসে অচেনা পাখির ডাক।
কংলাকের চূড়ায় বসে এমন রাত পাওয়ায় সত্যিই বিমুগ্ধ করে। পাড়ায় বসবাসরত লুসাই ও ত্রিপুরা বসতিগু্লো তখন ঘুমের রাজ্যে।
রাতের খাবার শেষ করে তাবুতে বসে দেখছি। ধীরে ধীরে মেঘ জমছে উপত্যকার ভাঁজে ভাঁজে। মেঘের সাদা রঙে ঢেকে যাচ্ছে সবুজ বনানী। পূর্ণিমা রাতে মেঘ যেন বৃত্তের মতো চারপাশ থেকে ঘিরে রাখছে পাহাড়ের গ্রাম কংলাককে।
১ হাজার ৮শ’ ফুটের এ পাড়া যেন ‘সাজেক ভ্যালি’রমুকুট। পুরো সাজেক উপত্যকার সবোর্চ্চ চূড়ার কংলাক পাড়া যেন রাঙামাটিরর ছাদ।
কংলাক থেকে মেঘ মুক্ত আকাশে চোখে পড়ে দূরের কাপ্তাই লেকের জলধারা। তাবুতে শুয়ে নীল মেঘের সমুদ্র পেরিয়ে পাহাড় দর্শনের জন্য সাজেক উপত্যকার সবোর্চ্চ চূড়া কংলাক যেন অনন্য।
খাগড়াছড়ি থেকে চাঁন্দের গাড়ি কিংবা পিকআপ রির্জাভ নিয়ে সাজেকে পৌঁছাতে পারবেন। তবে ছুটির দিনে সাজেকে রাত কাটাতে হলে আগে থেকেই রির্সোট বুকিং দিয়ে যাওয়া উচিত হবে।
সাজেকে প্রায় দেড় কিলোমিটারের দূরের গ্রাম কংলাক। গাড়ি বা হাঁটা পথে কংলাক পৌঁছাতে পারবেন। বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করতে পারেন ০১৮১৫-৮৫৬৪৯৭ নম্বরে।
ছবি: লেখক এবং এএইচ সুজন।
আরও পড়ুন-