শরীরচর্চা নিয়ে ভুল ধারণা

শরীরচর্চা নিয়ে প্রচলিত আছে অসংখ্য উপদেশ। অনেক সময় কোনটা মানা উচিত কোনটা উচিত নয় তা নিয়েও দোটানা সৃষ্টি হয়।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 March 2017, 12:57 PM
Updated : 28 March 2017, 12:57 PM

ব্যায়ামের আগে কি কলা খাওয়া যাবে নাকি যাবে না! শুধু দৌড়ালেই কি ওজন কমবে নাকি ভারি ব্যায়াম করতে হবে?

ব্যায়াম নিয়ে প্রচলিত কিছু ভুল ধারণা তুলে ধরেছে শরীরচর্চা-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইট।

ব্যায়ামের আগে খাওয়া: অনেকে প্রশিক্ষকের আপত্তি থাকলেও গবেষণায় দেখা গেছে ব্যায়ামের আগে একটি কলা খেলে কিংবা পুষ্টিকর কোনো সরবত পান করলে তা শরীরকে যোগায় ভারী ব্যায়ামের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি। তবে খাওয়ার সময়টা উপযুক্ত হতে হবে যাতে খাবারটি ব্যায়ামের পথে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।

এক ঘণ্টার বেশি সময় ব্যায়াম: দুই ঘণ্টা ধরে ব্যায়াম করলেই বাড়তি চর্বি ঝরে পড়বে না কিংবা জাদুবলে চিকন হয়ে যাবেন না।

অভিজ্ঞ পুষ্টিবিদ ও ব্যায়াম প্রশিক্ষকদের মতে, “দৈনিক এক ঘণ্টা ব্যায়ামই স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্য যথেষ্ট। এরচাইতে বেশি ব্যায়াম পেশি ছিঁড়ে যাওয়ার কারণ হতে পারে।”

ওজন তুললেই শরীর বাড়বে: ভারসাম্য বাড়াতে এবং শরীরে সঠিক উপায়ে সুঠাম আকৃতি আনতে প্রয়োজন ভারোত্তলন ব্যায়াম। এটি শরীরের ‘লিন বডি ম্যাস’ বাড়ায়। শরীরের মোট ওজন থেকে চর্বির ওজন বাদ দিলে যা থাকে তাই হল ‘লিন বডি ম্যাস’। পাশাপাশি এটি বিপাক প্রক্রিয়ার গতি বাড়ায় যা বেশি ক্যালরি পোড়ায়। ওজন কমানোর সবচাইতে উপযুক্ত পন্থাগুলোর মধ্যে ভারোত্তলন ব্যায়াম অন্যতম।

শরীরের নির্দিষ্ট অংশের চর্বি ঝরানো: ‘আমি শুধু পেটের চর্বি কমাতে চাই’-এটাও শরীরচর্চা জগতের আরেক কুসংস্কার। সৌন্দর্যে চোখ ঝলসানো লাল শাড়িটি পরার জন্য চাইলেই শুধু কোমরের বেড় কমানো কিংবা বেড়াতে যাওয়ার আগে চাইলেই পেশিবহুল বাহু পাওয়া কোনোটাই সম্ভব নয়। শরীরের একটি নির্দিষ্ট অংশের মাংসপেশি লক্ষ্য করে ব্যায়াম করলেও পুরো শরীরের ক্যালরি পুড়বে, শুধু যে অংশের পেশিতে টান পড়ছে সেই অংশের নয়।

গ্লুটেন ও ল্যাকটোজ বাদ দেওয়া: ওজন কমাতে অনেকেই বেছে নেয় পাস্তুরিত দুধ, সয়া মিল্ক, আমন্ড মিল্ক ইত্যাদি যা ‘গ্লুটেন-ফ্রি’। চাহিদার কারণে বাজারে এসবের বিক্রিও বাড়তি। তবে স্থানীয় খাবার এড়িয়ে চলা কিংবা ছোট থেকে যেসব খাবার খাওয়া হয়নি, হঠাৎ করেই এমন খাবারকে নিত্যসঙ্গি বানিয়ে ফেললে ওজন কমার পরিবর্তে বাড়তে পারে।

কার্ডিও ব্যায়ামই যথেষ্ট: শুধু অ্যারোবিকস, নাচ, জগিং কিংবা ট্রেডমিল ব্যবহার ওজন কমানোর জন্য যথেষ্ট নাও হতে পারে। এরসঙ্গে থাকা চাই সঠিক মাত্রার ভারোত্তলন ও শক্তিবর্ধক ব্যায়াম।

শুধু ব্যায়ামেই ওজন কমে: প্রতিদিন দুই ঘণ্টা ব্যায়াম করে আর ইচ্ছেমতো খেলে ওজন একটুও কমবে না। ব্যায়ামের রুটিনে সঙ্গে মিল রেখে গড়তে হবে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসও। দুইয়ে মিলে লক্ষ্যে পৌঁছানোর গতি দ্রুত হবে।

অপর্যাপ্ত খাবার: শরীরচর্চা না করলেও আমাদের শরীর সারাদিন ক্যালরি খরচ করতে থাকে। তাই প্রতিদিন ১ হাজার ৮শ’ ক্যালরি খরচ করে মাত্র ১ হাজার ২শ’ ক্যালরি গ্রহণ করলে হয়ত দ্রুত ওজন কমে যাবে। তবে সেটা হবে ক্ষণস্থায়ী, যা ভবিষ্যতে ওজন আরও বাড়াবে এবং সঙ্গে আনবে আরও অনেক সমস্যা।

পেটের ব্যায়ামেই ‘সিক্স প্যাক’: পেটের পেশি বা ‘প্যাক’ পেতে ব্যায়ামের রুটিন ও খাদ্যাভ্যাসকে একত্রিত করতে হবে। আর এজন্য চাই ‘প্ল্যাঙ্কস’, ‘পুশ-আপ’ বা বুকডন ও ‘ওয়েট ট্রেনিং’ বা ভারোত্তলন ব্যায়াম। তাই শুধু ‘ক্রাঞ্চেস’য়ের উপর ভরসা করে থাকলে চলবে না।

ঘাম বেশি তো ক্যালরি পোড়ে বেশি: এটাই সম্ভবত সবচাইতে বেশি প্রচলিত ভুল ধারণা। ঘামের সঙ্গে ক্যালরি পোড়ার কোনো সম্পর্ক নেই। এটি ব্যায়ামের পর শরীরকে শীতল করার একটি শারীরিক প্রক্রিয়া মাত্র। ক্যালরি পোড়ে মূলত মাংসপেশির টানাপোড়ন বা নড়াচড়ার মাধ্যমে।

ছবি: রয়টার্স।