যাই মধু আহরণে

দুঃসাহসিক অভিযান করতে চাইলে সুন্দরবন যান।

মুস্তাফিজ মামুনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 March 2017, 10:16 AM
Updated : 27 Feb 2018, 01:31 PM

আমাদের সুন্দরবন। পৃথিবীর মানচিত্রে সবচেয়ে বড় শ্বাসমূলীয় বন। নানান প্রাকৃতিক সম্পদের অফুরন্ত ভাণ্ডার। মধু এর মধ্যে অন্যতম।

প্রাকৃতিক মধুর এই বিশাল উৎসকে কেন্দ্র করে সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালিনী বন ঘেঁষে বহুকাল ধরে বসবাস করে আসছে একদল মানুষ। মধু সংগ্রহই যাদের পেশা। পেশাদার মধুসংগ্রাহদের বলে মৌয়াল। কথিত আছে, বাঘের ডেরা ঢুঁরে এরা মধু নিয়ে ফেরে। 

সুন্দরবনে আছে সুন্দরী, খলিশা, বাইন, পশুর, গেওয়া, কেওড়া, হেতাল, কাঁকড়া, গর্জন, ধুন্দল ইত্যাদি  গাছগাছালি। বসন্তে মৌমাছিরা ফুল থেকে মধু নিয়ে বড় বড় চাক তৈরি করে গাছগুলোর ডালে। বেশি মধু সংগ্রহ করা হয় আড়পাঙ্গাশিয়া ও খোলপেটুয়া নদীর দুই ধারের জঙ্গলগুলোতে।

গহীন বনে চাক কাটছেন মৌয়ালরা। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন।

মধু সংগ্রহের আদর্শ স্থানগুলোর অন্যতম বুড়িগোয়ালিনী। মুন্সীগঞ্জ, কলাগাছিয়া, দোবেকী, কাটেশ্বর, কৈখালী, কোবাদক, কদমতলায়ও মধু সংগ্রহের বড় অভিযান পরিচালিত হয়। বনের ভেতর থেকে মধু আনতে অনুমতি লাগে।

মৌয়ালরা তিন মাসের জন্য অনুমতি সংগ্রহ করেন। পয়লা এপ্রিল যাত্রা শুরু হয়। যাত্রার শুরতে হয় প্রার্থনা সভা। তারপর মৌয়ালরা হাতে একটি করে লাল কাপড় বেঁধে নেন। তাঁরা বিশ্বাস করেন, লাল কাপড় বনের রাজার ক্রোধ থেকে তাঁদের রক্ষা করবে। তারপর মৌয়ালরা নৌকায় গিয়ে ওঠেন। বন কর্মকর্তা আকাশে গুলি ছুঁড়ে বৈঠা চালানোর অনুমতি দেন।

এক যাত্রায় ফিরে আসা পর্যন্ত ১৫ দিন হয়। মৌয়ালরা বনে প্রবেশ করেন বেজোড় সংখ্যায়। দলে থাকে সাত থেকে ১৩ জন। হাতে থাকে দা আর ধামা। মৌয়াল দলের নেতাকে বলে বহরদার। কেবল তিনিই চাক কাটার সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। মৌসুমের প্রথম কাটা চাকের মধু সবাই মিলে পরখ করেন। কিছু অংশ মেখে দেন নৌকার গলুইয়ে।

কখন যাবেন

এপ্রিল থেকে জুন সুন্দরবনে মধু সংগ্রহের মৌসুম। তাই যেতে হবে এ সময়ের মধ্যে। 

কীভাবে যাবেন

মৌয়ালদের সঙ্গে গভীর সুন্দরবনে গিয়ে রোমাঞ্চকর মধু সংগ্রহের সে কলাকৌশল দেখার ব্যবস্থা করেছে বেসরকারী ভ্রমণ সংস্থা বেঙ্গল ট্যুরস। সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগের সঙ্গে সঙ্গে মৌয়ালদের এ মধু সংগ্রহ অভিযান সচক্ষে দেখা যাবে এ ভ্রমণে।

ঢাকা থেকে ৩১ মার্চ সকালে খুলনা থেকে যাত্রা শুরু করে সুন্দরবন ঘুরে ৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় খুলনা পৌঁছে দেবে তারা। তিন রাত তিন দিনের এ ভ্রমণে জনপ্রতি খরচ হবে ১১ হাজার ও বিদেশিদের জন্যে ১৫ হাজার টাকা।

ভ্রমণ মূল্যে অন্তর্ভুক্ত খুলনা থেকে লঞ্চের দ্বৈত কেবিনে থাকা, খাবার, সুন্দরবনে প্রবেশ মূল্য, গাইড ও অস্ত্রসহ নিরাপত্তা কর্মী ইত্যাদি।

যোগাযোগ: ০১৯২৫২৫৮৭৬০।

 

সঙ্গে নিতে হবে

ক্যামোফ্লেজ ট্রাউজার, জঙ্গল বুট, ফুল হাতা টি শার্ট, নেট ঘেরা ক্যাপ, দূরবিন, হাত মোজা, পা মোজা, রোদ টুপি, ছাতা, হেড ল্যাম্প কিংবা টর্চ, পতঙ্গ নিরোধক ক্রিম, প্রয়োজনীয় ওষুধ-পত্র, জিপিএস ইত্যাদি।

সাবধানতা

বুড়িগোয়ালিনীতে মানুষখেকো বাঘের আনাগোনা বেশি। নিরাপত্তা কর্মীছাড়া বনে প্রবেশ করবেন না।  মশা আর পোকা-মাকড়েরও উপদ্রব আছে। সঙ্গে পতঙ্গ নিরোধক ক্রিম রাখুন। মৌমাছির কামড় থেকে বাঁচতে প্রয়োজন নেট ঘেরা হ্যাট। এছাড়া শরীরের কোনো অংশই যেন উন্মুক্ত না থাকে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।