‘ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ ক্যান্সার প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ’য়ের তথ্যানুসারে স্বাস্থ্যবিষয়ক এক ওয়েবসাইট জানায়, ভারতে প্রায় ২৫ লাখ লোক ক্যান্সার নিয়ে বসবাস করছেন। প্রতিবেদনে আরও জানানো হয় প্রতিবছর সাত লাখেরও বেশি রোগী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে নথিভুক্ত হচ্ছে।
ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণগুলো জানা থাকলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব।
হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া: ভারতের ম্যাক্স সুপার স্পেসাল্টি হাসপাতালের মেডিকল ওনকোলজি’র বিভাগের পরিচালক ডা. মিনু ওয়ালিয়া বলেন, “শরীরচর্চা, ডায়েট ছাড়াই ওজন প্রায় ১০ পাউন্ড কমে যাওয়া সম্ভবত ক্যান্সারের সর্বপ্রথম লক্ষণ। অগ্ন্যাশয়, পাকস্থলী, অন্ননালী, ফুসফুস ক্যান্সারের সবচাইতে প্রচলিত উপসর্গের মধ্যে এটি অন্যতম। এক্ষেত্রে টিউমার অন্ত্রের নালীতে চাপ দিয়ে রাখে, ফলে খেয়েই আপনার পেট ভরা অনুভূতি হয় আর খাওয়ার রুচি কমে যায়।”
কোষ্ঠকাঠিন্য: দীর্ঘদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগতে থাকলে কোলন ক্যান্সারের পরীক্ষা করানো উচিৎ। প্রাথমিক পর্যারে রোগ সনাক্ত করা সম্ভব হলে আরোগ্য লাভের সম্ভাবনা থাকে প্রায় ৯০ শতাংশ।
ডা. ওয়ালিয়ার মতে, “ক্যান্সারের বয়স যত বাড়বে ততই বাড়বে মৃত্যুর ঝুঁকি।”
শরীরের কোনো অংশ ফুলে ওঠা: স্তন ক্যান্সারের অন্যতম লক্ষণ এটি। তাই স্তনের যেকোনো অংশে ফোলাভাব কিংবা গোটা উঠছে কিনা তা নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে। সন্দেহজনক কিছু অনুভব করার সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
পেটব্যথা ও পেট ফোলাভাব: তলপেট ও শ্রোণীচক্রে ‘অ্যাসসাইটস’ নামক তরল সৃষ্টি হতে পারে অস্বাভাবিক মাত্রায়। ফলে পেট ফোলা, ওজন বৃদ্ধি, কোমরের মাপ দ্রুত বেড়ে যেতে পারে। ‘অ্যাসসাইটস’ মূলত যকৃতের রোগ থেকে হয়, তবে শতকরা ১০ ভাগ ক্ষেত্রে এ থেকে ক্যান্সারও হয়। অনেক সময় এই তরলের পরিমাণ এতই বেড়ে যায় যে রোগীকে কয়েক মাসের গর্ভবতী মনে হয়।
মলত্যাগে সমস্যা: এক্ষেত্রে তাৎক্ষণিত ডাক্তারি পরামর্শ নেওয়া উচিৎ। কারণ অন্ত্র ও মলদ্বারের কোনো অংশে বাধা সৃষ্টি হলে ওই অংশের মল ক্রমাগত খাবার ও হজমে সহায়ক রস শুষে নিয়ে ফুলতে থাকে। যার ব্যথা অসহনীয়। আটকে থাকা এই বর্জ্য বের হওয়ার জন্য যখনই চাপ প্রয়োগ করবে তখনই এই ব্যথা উঠবে।
ক্রমাগত ব্যথা: সব ব্যথা ক্যান্সারের উপসর্গ না হলেও হাড়ের ক্যান্সার কিংবা অণ্ডকোষের ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ ক্রমাগত ব্যথা। নাছোড়বান্দা মাথাব্যথা, যা ওষুধ খেলে চলে যায়ে এবং বারংবার ফিরে আসে, তা সম্ভবত মস্তিষ্ক ক্যান্সারের পূর্বভাস। অন্ত্র, মলদ্বার কিংবা জরায়ু ক্যান্সারের একটি অন্যতম লক্ষণ পিঠ ব্যথা।
মুখে আলসার ও কষভাব: কিছুতেই সেরে উঠতে চায় না এমন আলসার, মাঢ়ি বা জিহ্বায় সাদা কিংবা লালবর্ণের ঘা হতে পারে ‘লিউকেমিয়া’ বা ‘ইরিথ্রোপ্লাকিয়া’র লক্ষণ। তিন থেকে চার সপ্তাহব্যাপি মুখে কষভাব, গলার স্বর পাল্টে যাওয়া ইত্যাদিও গুরুত্ব সহকারে পরীক্ষা করানো উচিৎ। তামাক ও পান চিবানোতে আসক্তদের ক্ষেত্রে এসব খাওয়ার কিছুক্ষণ পর মুখ পুরোপুরি হা করতে না পারা ক্যান্সারের মারাত্বক ভয়ংকর উপসর্গ।