বেড়িয়ে আসুন বান্দরবান

সুউচ্চ পাহাড়, সবুজ বনানী, ঘন মেঘমল্লা'র দল, বাহারি রংয়ের আকাশ, সাঙ্গুর বহতা স্রোত, দুর্গম অরণ্য ঘেরা হাজারো ঝরনার ধারায় বেঁচে থাকা পাহাড়- সব মিলিয়ে এখন বান্দরবানে বেড়িয়ে আসতে পারেন আরামে।

সমির মল্লিকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Dec 2016, 05:50 AM
Updated : 6 May 2020, 04:59 AM

পাহাড়ের দেশ বান্দরবান সফর ধরা দিল হেমন্তের পাতা ঝরার সূচনা লগ্নে। হেমন্ত হলেও পাহাড়ে যে শীতের আমেজ শুরু হয় গেছে, তা ভোরে বাস থেকে নামার পরই বোঝা গেছে।

ভোরের কুয়াশার চাদর মুড়িয়ে হোটেলের দিকে রওনা হলাম। হোটেলে কিছুক্ষণের বিশ্রাম নিয়ে রওনা হলাম পাহাড় চূড়োয় দাঁড়িয়ে থাকা স্বর্ণমন্দিরের দিকে।

কুয়াশা কেটে সকালের সোনালি রৌদ্দুর, সূর্যের কিরণ কুয়াশার দল ক্রমশ ফিকে হয়ে যাচ্ছে। রির্জাভ গাড়িতে বান্দরবান শহর থেকে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের পথ স্বর্ণমন্দির।

পাহাড় বেয়ে উপরে উঠতে, মন্দিরের দরজা। সিঁড়ি বেয়ে মূল মন্দির প্রবেশ করলাম, সোনালি আভায় জড়ানো পবিত্র বৌদ্ধমন্দির। চারপাশে নানা কারুকার্য মন্দিরজুড়ে। মন্দির প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে অনেক দূর পর্যন্ত ছড়ানো পাহাড়গুলোকে পাখির চোখে এক পলকে দেখা যায়। চারপাশে বৃত্তের মতো ছড়ানো সবুজ পাহাড়গুলো। পাহাড়ের সকাল, বিকেল দুটোই সবচেয়ে সুন্দর।

বিকেলে রওনা হলাম-নীলাচলের পথে। পাহাড়ের ডানায় দাঁড়িয়ে থাকা নীলাচল, পড়ন্ত বিকেলের আলোয় পাহাড় যেন মেলে তার সৌর্ন্দয্যের সব পালক। নীলাচলের চূড়ায় দাঁড়িয়ে দেখা যায়- পাহাড়ি গ্রাম আর সবুজ উপত্যকা।

নীলাচল থেকে সুবিশাল উপত্যকা পেরিয়ে চিম্বুকের চূড়া। অদ্ভুত লাগছিল! কি দারুণ বিশালতায় দাঁড়িয়ে আছে।

দূরের পাহাড়ে হেলান দেওয়া সূর্যের লাল রংয়ে ছেঁয়ে গেছে, কাছে-দূরের পাহাড়গুলোর সবুজ রং, যেন মুহূর্তেই বদলে গেল! সবুজ পাহাড় জুড়ে সোনালি রংয়ের রাজত্ব। দূরের পাহাড়ে ডুবে যাওয়া সূর্য মায়াবী গোলূধী নামিয়ে দিল পাহাড়ের পৃথিবীতে।

নীলাচল থেকে নেমে এসে একটু পাহাড়ি খাবারের স্বাদ নিলাম। বাজারের মধ্যম পাড়ায় আদিবাসী রেস্তোরাঁয় খেলাম বান্দরবানের বেশ জনপ্রিয় খাবার ‘মুণ্ডি’। শীতের পাহাড়ে কিছুটা উষ্ণতা পেলাম গরম গরম মুণ্ডির স্বাদে।

নীলগিরি'র পথে রওনা হলাম পরদিন সকালে। ভোরের আলো তখনও ফোটানি, পাহাড়জুড়ে ঘন কুয়াশা। কুয়াশা মাখানো রাস্তা ধরে এগিয়ে চলছে খোলা ছাদের জিপ, পথের দুধারে পাহাড়ের বন্ধন, সামনে পথ চলতে হঠাৎ মেঘের দেখা।

পাহাড়জুড়ে ছড়িয়ে আছে সাদা মেঘ আবার কোথাও কোথাও মেঘের বুকে জেগে আছে পাহাড়ের চূড়া, যেন মেঘের সমুদ্রের বুকে জেগে থাকা সবুজ দ্বীপ।

পাহাড়ের উঁচু-নিচু পথ পেরিয়ে অবশেষে সকাল সকাল পৌছালাম নীলগিরি। নীলচে পাহাড়ে বুকে মেঘের সমুদ্র। যতটুকু চোখ যায় কেবল দুধ সাদা ঘন মেঘ। দিগন্তব্যাপী আকাশ ছোঁয়া পাহাড়গুলো যেন ডুবে আছে মেঘের সমুদ্রে। মেঘের রং বদলায় সকালের সূর্যের আলোয়।

নীলগিরিতে যেন হাজির হয়েছে মেঘের দেবতা। রেলিংয়ে দাঁড়িয়ে মনে হয়, নীলচে পাহাড় আর মেঘ যেন অবিচ্ছিন বন্ধনী, সময়ে সময়ে বদলে পাহাড়ের রূপ। পাহাড়ি লোকালয়ের পথে চলতে চলতে মনে হচ্ছে বিস্ময়ের ডানায় ভর করেছে বান্দরবানের মায়াবী পাহাড়!

প্রয়োজনীয় তথ্য: প্রতিদিন ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান শহর পর্যন্ত নিয়মিত বিভিন্ন পরিবহনের্ এসি এবং নন-এসি বাস চলাচল করে।

চট্টগ্রাম থেকে প্রতি ৩০ মিনিট পরপর বান্দরবানের বাস পাওয়া যায়। তাছাড়া চট্টগ্রাম পর্যন্ত ট্রেনে এসে রির্জাভ গাড়িতে বান্দরবানে যেতে পারবেন।

ছুটির দিনগুলোতে আগে থেকে হোটেলের রুম বুকিং দিয়ে যাবেন।

বান্দরবানে অভ্যন্তরীন ভ্রমণের জন্য রির্জাভ চান্দের গাড়ি ভাড়া পাওয়া যায়। গাড়ি ঠিক করা দরদাম এবং কোথায় ঘুরবেন, সে বিষয়ে কথা বলে নেবেন।

বান্দরবানসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে (রাঙামাটি, সাজেক, খাগড়াছড়িতে) ভ্রমণের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন স্থানীয় ভ্রমণ সংস্থা হিল টুরিজমের ০১৮১৫-৮৫৬৪৯৭ নম্বরে।