তিরিশে স্ট্রোক

বয়স কম বলেই যে এরকম জটিল রোগ থেকে বেঁচে যাবেন এমন কোনো কথা নেই। তাই সাবধান হওয়া জরুরি।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Sept 2016, 10:32 AM
Updated : 29 Sept 2016, 10:32 AM

‘স্ট্রোকের বয়সই হয়নি এখনও’ বয়স ৩০ পেরিয়ে গেলেও এই ভুল ধারণার কারণে শরীরের প্রতি অবহেলা করেন অনেকেই।

৬০ থেকে ৬৫ বছর বয়সের আগে স্ট্রোক হয় না এমনটাই প্রচলিত ধারণা। তবে ভারতের পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের সাম্প্রতিক জরিপ অনুযায়ি, প্রায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ স্ট্রোকই হয় ৪০ বছর বয়সের আগেই।

আবার স্ট্রোকের ঝুঁকি নারীদের তুলনায় পুরুষদের বেশি। শারীরিকভাবে অক্ষম হওয়ার একটি অন্যতম কারণ স্ট্রোক, বড় মাপের স্ট্রোক হতে পারে মৃত্যুর কারণ।

ইন্দ্রপ্রষ্ঠা অ্যাপোলো হসপিটালের স্নায়ুবিদ্যার জৈষ্ঠ্য পরামর্শদাতা পিএন রঞ্জন বলেন, “৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সিরা উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, ডায়বেটিস, স্থুলতা, ধূমপান, মদ্যপান ইত্যাদি সমস্যা ও বদভ্যাসে বেশি আক্রান্ত।”

স্ট্রোক কী: ভারতীয় নিউরো থেরাপিস্ট গুনদিপ সিং বলেন, “ডাক্তারি ভাষায় স্ট্রোককে বলা হয় সেরেব্রো ভাসকুলার অ্যাক্সিডেন্ট (সিভিএ)। মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণে স্নায়বিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়াকে স্ট্রোক বলা হয়। এর কারণে নড়াচড়া, জ্ঞান অর্জন, অনুভুতি, ইন্দ্রিয় এবং ভাষা ইত্যাদি বিষয়ের উপর মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণ নষ্ট হতে পারে। তবে স্নায়বিক এই সমস্যাগুলো ২৪ ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হলেই কেবল তাকে স্ট্রোক ধরা হয়।”

তিনি আরও বলেন, “স্ট্রোক দুই ধরনের হয়ে থাকে, ডাক্তারি ভাষায় নাম ‘ইস্কেমিক’ ও ‘হেমরজিক’। রক্ত সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটার কারণে ঘটে ‘ইস্কেমিক’, আর ‘হেমোরেজিক’য়ের কারণ হল রক্তনালীর সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া কিংবা অস্বাভাবিক রক্তনালীর গঠন। ৮৭ শতাংশ স্ট্রোকই হয় ‘ইস্কেমিক’।”

ভারতের ভিভো হেলথকেয়ার হাসপাতালের অ্যাসিসটেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট বিকাশ ত্রিপাঠি বলেন, “স্ট্রোক রোগীদের মানসিক সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, উপসর্গের মধ্যে আছে অস্থিরতা, খিটখিটে মেজাজ ও উৎকণ্ঠা, অদমনীয় কান্না, উদাসীনতা, ‘হ্যালুসিনেসন’ বা দৃষ্টিভ্রম ইত্যাদি।”

শারীরিক পরিশ্রম কী যথেষ্ট: শারীরিকভাবে পরিশ্রমি হলেই যে স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকবে না এই ধারণাটি ভুল।

ভারতের ফোর্টিস হাসপাতালের ডা. আতুলএন.সি. পিটারস বলেন, “শারীরিক পরিশ্রম স্ট্রোকে ঝুঁকি কমায় তবে পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত করে না। খাদ্যাভ্যাস এবং দৈনন্দিন জীবনাযাত্রার উপর স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকটাই নির্ভরশীল।”

সংক্ষেপে বলতে গেলে, অতিরিক্ত ধূমপান, মদ্যপান, অলস জীবনযাপন, শরীরচর্চার অভাব, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়বেটিস, স্থূলতা এবং ঘরে-বাইরে সবখানেই অবিরত দুশ্চিন্তা সবকিছুই স্ট্রোকের পেছনে দায়ি। পাশাপাশি বংশগত প্রভাবও রয়েছে এই জটিলতার।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েইন স্টেট ইউনিভার্সিটির স্নায়ুবিদ ডা. সীমান্ত চতুর্বেদী বলেন, “সমস্যাটি আরও বেশি গুরুতর হয় কারণ রোগীরা স্ট্রোকের উপসর্গগুলো নিজে নিজেই সেরে যায় কিনা তা দেখার জন্য অপেক্ষা করেন। ফলে স্ট্রোকের ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টা পরে রোগীকে হামপাতালে আনা হয়, যা সমস্যা তীব্রতা বাড়িয়ে দেয়।”

ঠিক মতো খাওয়া: চন্ডিগড়ের পুষ্টিবিদ মানসি ছাত্রাথ বলেন, “বর্তমান সময়ে কম বয়সে স্ট্রোক করার একটি বড় কারণ হল রেস্তোরাঁয় খাওয়া। যেসব খাবারে ক্যালরি, চিনি, লবণ সবই থাকে প্রচুর পরিমাণে। এগুলো স্বাস্থ্য জটিলতার একটি ‘টাইম বম্ব’ তৈরি করে, যা যে কোনো সময় ফাটতে পারে।”

আরও বলেন, “প্রক্রিয়াজাত ও প্যাকেটজাত প্রায় সব খাবারই ক্ষতিকর তালিকায় ফেলা যায়। কারণ বেশিরভাগেই থাকে অস্বাস্থ্যকর পরিমাণে চর্বি, চিনি ও লবণ। সতেজ খাবার যেমন অপরিশোধিত শষ্যজাতীয় খাবার, ফল সবজি ইত্যাদি খাওয়া সবচাইতে ভালো। পাশাপাশি প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি খেতে হবে।

স্ট্রোকের লক্ষণ

- কোনো কারণ ছাড়াই প্রচণ্ড মাথা ব্যথা।

- মুখ. হাত, পা কিংবা শরীরের একপাশে আকস্মিক দূর্বলতা, প্যারালাইসিস কিংবা আসাড়তা দেখা দেওয়া।

- চোখে অন্ধকার দেখা, বিশেষত এক চোখে।

- মাথা ঝিম ঝিম, টলমাটাল শরীর।

- কথা বলায় আড়ষ্টতা বা কথা বলতে না পারা।

স্ট্রোক চেনার উপায়: মনে রাখতে হবে এফ.এ.এস.টি। এফ- ফেইস ড্রুপিং বা মুখ বেঁকে যাওয়া, এ- আর্ম উইকনেস বা হাতে শক্তি না পাওয়া, এস- স্পিচ ডিফিকাল্টি বা কথা বলাতে অসুবিধা, টি- টাইম টু কল অ্যাম্বুলেন্স বা হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করা।

ছবি: রয়টার্স।