বেঙ্গলমিটের খুচরা বিক্রয় কেন্দ্রগুলোর সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুমুল হক বলেন, “গরু মোটাতাজা করার জন্য একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি রয়েছে। এই পদ্ধতিতে ইউরিয়া, চিটাগুড়, খড় মিশিয়ে গরুকে খাওয়ানো হয়। এই পদ্ধতিতে গরুকে মোটাতাজা করতে চার থেকে পাঁচ মাস সময় লাগে। তবে ঈদের বাজারে ভালো দাম পেতে তিন সপ্তাহ থেকে দুই মাসের মধ্যে গরুকে মোটা করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ওষুধ, ইঞ্জেকশন ও রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী।”
তিনি আরও বলেন, “এসব ওষুধ, ইঞ্জেকশন বা রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারে গরু আসলে স্বাস্থ্যবান হয় না বরং শরীরে পানি জমে যাওয়ার কারণে হৃষ্টপুষ্ট দেখায়। এসব ওষুধ ও রাসায়নিক দ্রব্য গরুর শরীরের স্বাভাবিক বিপাক প্রক্রিয়া ও বৃক্কের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা নষ্ট করে। ফলে শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের হতে পারে না।”
কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা গরু চেনার উপায় সম্পর্কে মোহাম্মদ মাসুমুল হক বলেন, “স্বাভাবিকভাবেই গরুর গায়ে আঙুল দিয়ে চাপ দিলে মাংস একটু দেবে যায়। সুস্থ গরুর ক্ষেত্রে এই চাপ ছেড়ে দিলেই মাংস স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। তবে কৃত্রিম প্রক্রিয়ার মোটাতাজা করা গরুর গায়ে আঙুলের চাপ দিলে তা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে বেশি সময় নেবে।”
“পাশাপাশি দেখতে হবে গরু চটপটে কিনা। শরীরে পানি জমার কারণে কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা গরুগুলো এক জায়গায় বসে থাকে, নড়াচড়া কম করে।”
এরকম গরু সম্পর্কে সচেতন হওয়ার জন্য আরও বেশকিছু পদ্ধতি জানান মোহাম্মদ মাসুমুল হক।
পাশাপাশি ট্যাবলেট খাওয়ানো গরুর মাংসে পানি জমার কারণে মাংস অত্যান্ত নরম হয়ে যায়। এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে পেছনের রানের মাংস পরীক্ষা করতে হবে। সুস্থ গরুর রানের মাংস থাকবে শক্ত। আর ট্যাবলেট খাওয়ানো গরুর ক্ষেত্রে তা হবে নরম। এ ধরনের গরুর প্রস্রাবের পরিমাণও কমে যায়।
হাটের যে চকচকে চামড়ার গরু আপনার নজর কাড়ছে সেই গরুই ট্যাবলেট প্রয়োগ করা গরু হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মানুষের শরীরের কোনো অংশ ফুলে গেলে বা পানি জমলে সেই অংশের ত্বক যেমন চকচক করে, ট্যাবলেট খাইয়ে মোটা করা গরুগুলোও তেমনি চকচকে হয়।
তাই গরুর স্বভাবসুলভ উশকোখুশকো চেহারা, চামড়ার উপর দিয়ে পাঁজরের কয়েকটা হাড় বোঝা যাচ্ছে এমনটা দেখেই কেনা উচিত।
ট্যাবলেট খাওয়ানো গরুর আরেকটি লক্ষণ হল মুখে অতিরিক্ত লালা বা ফেনা থাকা।
হাট থেকে কোরবানির পশু কেনার সময় পশুটি কোনো রোগে আক্রান্ত কি না সেটাও খেয়াল করতে হবে।
এ বিষয়ে মোহাম্মদ মাসুমুল হক বলেন, “অ্যানথ্রাক্স, ফুড অ্যান্ড মাউ ডিজিস (এফএমজি), ডায়রিয়া, ঘা ইত্যাদি গবাদিপশুর সাধারণ রোগ। শ্বাসকষ্ট, গায়ের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকা, পশুর নাকের মাজল শুকনা থাকা ইত্যাদি রোগাক্রান্ত পশুর লক্ষণ। পাশাপাশি মুখে, ক্ষুরের ফাঁকে ঘা হওয়াও প্রচলিত লক্ষণ।”
তিনি বলেন, “গরুর উপর স্টেরয়েড ট্যাবলেটের যে প্রভাব পড়ে, ওই গরুর মাংস খেলে আমাদের শরীরেও একই প্রভাব দেখা যায়। এর মধ্যে আছে শরীরে পানি জমে যাওয়া, মূত্রনালী ও যকৃতের বিভিন্ন সমস্যা, চামড়া পাতলা হয়ে যাওয়া, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া ইত্যাদি।”
কামরুল আরও বলেন, “তবে কোরবানির কয়েকদিন এই মাংস খেলেই যে অসুস্থ হয়ে যাবেন তা নয়। শরীর যদি সুস্থ থাকে তাহলে হয়ত ধাক্কাটা সামলে নিতে পারবে। তবে যাদের আগে থেকেই আর্থ্রাইটিস, হাঁপানি ইত্যাদি রোগ আছে তাদের ক্ষেত্রে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।”
তাই গরু কেনার আগে সাবধান হন। সুস্থ পশু কেনার চেষ্টা করুন।