গেঁটেবাত ও গিঁটের ব্যথা থেকে রক্ষা

রক্তে জমে থাকা ইউরিক অ্যাসিড থেকে এই ধরনের ব্যথা হয। শরীর থেকে এই উপাদান বের করে দেওয়া গেলে বাত ও হাড়ের জোড়ার ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 August 2016, 11:09 AM
Updated : 19 August 2016, 11:09 AM

স্বাস্থবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে জানানো হয়, গেঁটেবাত একটা সাধারণ সমস্যা। তবে এই সমস্যা তৈরি হওয়ার কারণ খুব সাধারণ নয়। এটা মূলত একটি অসুখ। এর কারণ বিপাকীয় পদ্ধতিতে শরীর থেকে ইউরিক অ্যাসিড বের হতে না পারা।

এই ইউরিক অ্যাসিড যখন হাতে পায়ের তরুণাস্থিতে গিয়ে জমা হয় এবং ফিরে ফিরে প্রচণ্ড ব্যথার অনুভূতি দেয়। তখন একে আরথ্রাইটিস বলে অভিহিত করা হয়।

এভাবে হাড়ের গিঁটে গিঁটে ইউরিক অ্যাসিড জমে যাওয়ার ফলে, সেই অংশ ফুলে শক্ত হয়ে যায়; আগের মতো নড়াচড়া করা সম্ভব হয় না। খুব অল্প সময়ের মধ্যে এই সমস্যা তৈরি হতে পারে এবং আকস্মিকই হাতে পায়ের গিঁট (জোড়া) ফুলে যেতে পারে।

এভাবে হাড়ের জোড়ায় ফুলে যাওয়ার মূল কারণ শরীর থেকে অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড নিষ্কাশিত হতে না পারা।

শরীরের ইউরিক অ্যাসিডের উৎস হচ্ছে পিউরিন নামক উপাদান যা আমাদের বিভিন্ন খাদ্যে উপস্থিত থাকে। পিউরিনের ভগ্নাংশ ইউরিক অ্যাসিডে পরিণত হয়। এই ভগ্নাংশের নাম হাইপিউরোরিসেমিয়া যা রক্তের ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় এবং গিঁট ফুলে যায়।

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড মূত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। সমস্যা বাঁধে যখন বৃক্ক ইউরিক অ্যাসিড বের করে দিতে অক্ষম হয়ে যায়। রক্তে মধ্যে জমে থাকা ইউরিক অ্যাসিড স্ফটিক গঠন করে নরম হাড়ের জোড়ার স্থানগুলোতে জমা হতে থাকে। এতে জায়গাগুলো ফুলে যায় এবং শক্ত হয়ে যায়। 

ইউরিক অ্যাসিড জমে যাওয়ার এই সমস্যা থেকে বাঁচতে হলে স্বাস্থ্যের কিছু উন্নয়ন দরকার। জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাস বদলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার পূর্বশর্ত।

পাশাপাশি সঠিক খাদ্য পরিকল্পনা, স্বাস্থ্যকর খাদ্য, ফলমূল, শাকসবজি, চর্বিমুক্ত মাংস, সামুদ্রিক খাবার, পূর্ণ শস্যের প্রক্রিয়াজাত না করা খাবার অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারে।

খাদ্য তালিকা থেকে প্রক্রিয়াজাত করা চিনি, সম্পৃক্ত চর্বি এবং অ্যালকোহল যতটা সম্ভব বাদ দিতে হবে।

প্রচুর পরিমাণে পানি খেলেও উপকার পাওয়া যায়। পানি শরীরকে আর্দ্র রাখে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে। ফলে, ইউরিক অ্যাসিডও রক্তে জমে থাকতে পারে না।

শরীরকে আর্দ্র রাখতে পানি, ফলের রস, ভেষজ চা, খাওয়া যেতে পারে। তবে এগুলোতে আলাদা করে চিনি না দেওয়াই ভালো। এতে হীতে বিপরীত হবে। এসবের পাশাপাশি নিয়ম করে শারীরিক পরিশ্রম করা যেতে পারে।

ইউরিক অ্যাসিড থেকে চট জলদি রক্ষা করতে পারে এইসব ঘরোয়া কিছু উপায়—

* বেইকিং সোডা গেঁটেবাত থেকে মুক্তি পেতে খুবই কার্যকরী। এটি শরীরের ইউরিক অ্যাসিড নিষ্কাশনে সাহায্য করে। এক গ্লাস পানিতে আধা চা-চামচ বেইকিং সোডা গুলিয়ে প্রতিদিন পান করলে শরীর থেকে ইউরিক অ্যাসিড দূর হয়।

* লেবুপানি গেঁটেবাত দূর করতে খুবই কার্যকরী। যখন শরীরে ক্ষার বেশি হয়ে যায় তখন শরীর নানা রকমের সমস্যা সহজে দূর করতে পারে। এমন একটি সমস্যা হচ্ছে গেঁটেবাত। লেবুর পানি একটি ক্ষারীয় অবস্থা তৈরি করে যা ইউরিক অ্যাসিডকে দূরীভূত করে।

অর্ধেক লেবুর রস ২০০ মি.লি. গ্রাম উষ্ণ পানিতে চিপে সকালে খালি পেটে খেলে উপকার পাওয়া যায়।

* অ্যাপেল সাইডার ভিনিগার লেবুর পানির মতোই শরীরের ক্ষার বৃদ্ধি করে। এটা পরিপাকে সহযোগিতা করে এবং ইউরিক অ্যাসিডও শরীর থেকে বের হতে সাহায্য করে। এক চা-চামচ অ্যাপেল সাইডার ভিনিগার ২০০ মি.লি. গ্রাম পানিতে মিশিয়ে দুপুরে এবং রাতের খাবারের আগে খেতে হবে। এতে পেট পরিষ্কার হয়। ফলে ইউরিক অ্যাসিডও জমে থাকার সুযোগ পায়না।

* হলুদে কু্রকিউমিন বলে একটা পদার্থ থাকে। ইউরিক অ্যাসিডকে নিয়ন্ত্রণ করতে এটিও বেশ ভালো। এটি মলদ্বারকে সুরক্ষিত রাখে এবং রক্তের প্রদাহ নিরাময় করে।