মিরসরাইয়ের পাহাড়ি ঝরনায়

চট্টগ্রামের মিরসরাই এলাকায় আছে বেশ কয়েকটি পাহাড়ি ঝরনা। চট্টগ্রাম উত্তর বনবিভাগের বারৈয়াঢালা জাতীয় উদ্যানের ভেতরে পাহাড়ের কোল থেকে বয়ে আসা এসব অনিন্দ সুন্দর এ জলপ্রপাতগুলো এক দিনেই বেড়ানো যায়।

মুস্তাফিজ মামুনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 August 2016, 08:28 AM
Updated : 19 August 2016, 08:42 AM

ঢাকা থেকে রাতের বাসে গিয়ে সারা দিন ঘুরে আবার সন্ধ্যার বাসেই ফিরে আসা যায়। নতুন চালু হওয়া চার লেইনের মহাসড়ক ধরে এ পথের ভ্রমণটিও এখন বেশ সহজ হয়েছে।

মিরসরাই এলাকার সুন্দরতম ঝরনা হল খৈয়াছড়া। একে একে নয়টি বড় ধাপে এ  জলপ্রপাতটি থেকে অনবরত ঝরনাধারা প্রবাহিত হয়।

এছাড়া ছোট আরও অনেকুগলো ধাপ আছে এ জলপ্রপাতে। সারা বছর এগুলোতে পানির প্রবাহ থাকলেও বর্ষা ও বর্ষা পরবর্তী সময়ে পানি বেশি থাকে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাই ছাড়িয়ে আরও কিছুটা সামনে গেলে বড় তাকিয়া বাজার। এর আগেই হাতের বাঁয়ে খৈয়াছড়া আইডিয়াল স্কুলের সামনে সহজেই চোখে পড়বে খৈয়াছড়া জলপ্রপাতের সাইনবোর্ড।

এখান থেকে সরু পিচঢালা পথটি চলে গেছে ভেতরের দিকে। এক কিলোমিটার সামনে গেলেই চোখে পড়বে ঢাকা-চট্টগ্রামের রেল লাইন। সেখান থেকে মেঠো পথ ধরে সামান্য পথ হাঁটার পরে একটি ঝিরিপথ। এই ঝিরিপথ ধরে আরও প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার হাঁটার পরেই পাওয়া যায় খৈয়াছড়ার প্রথম ধাপ। তবে স্থানীয় কোনো গাইডের সহায়তা নিলে পথ কিছুটা সংক্ষিপ্ত হতে পারে।

মিরসরাইয়ের সবচেয়ে সুন্দর ঝরনা ‘খৈয়াছড়া’।

মিরসরাইয়ের সবচেয়ে সুন্দর ঝরনা ‘খৈয়াছড়া’।

খৈয়াছড়ার প্রথম ধাপটি অসাধারণ। বেশ উঁচু থেকে পাহাড়ের নিঃশব্দতাকে ছাপিয়ে নিচে আছড়ে পড়ে সুশীতল পানি। এর পাশ দিয়েই খাড়া পাহাড় বেয়ে উঠতে হবে বাকী নয়টি ধাপ। খাড়া পাহাড়ের গা বেয়ে ওঠার পরে সামান্য কিছু নিচে নামার পরে এর দ্বিতীয় ধাপ। যেটা প্রথম ধাপ থেকে একেবারেই আলাদা। সরু জায়গা থেকে প্রবাহিত ঝরনাধারা একটু নিচে এসেই প্রসারিত হয়ে গেছে এখানে।

দ্বিতীয় ধাপ থেকে তৃতীয় ধাপটি আরও বেশি স্বতন্ত্র। এ জায়গা থেকে ভালো ভাবে তিনটি ধাপের প্রবাহ দেখা যায়। এখানে গোসল করার জন্যও বেশ ভালো। অনেকটা বড়সর পুকুরের মতো জলাধার আছে। এখান থেকে একেবারে ঝরনার পাশ থেকে খাড়া পাহাড় বেয়ে উঠতে হবে চতুর্থ ধাপে। তবে এ ধাপ থেকে পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম ধাপের উচ্চতা তুলনা মূলক কম। ওঠাও বেশ সহজ।

খৈয়াছড়ার অষ্টম ধাপটি আবার একটু উঁচুতে হলেও বেশ প্রসারিত। এখান থেকে কিছুটা খাড়া পাহাড় বেয়ে উপরে উঠলেই এর নবম ধাপ। এখানেও জলপ্রপাতটির ঠিক নিচে মাঝারি আকারের একটি গর্ত। এটিও গোসল করার জন্য ভালো।

মিরসরাইয়ের মিঠাছড়া ঝরনা।

মিরসরাইয়ের কুপিকাটাখুম ঝরনা।

খৈয়াছড়ার সর্বশেষ এ ধাপটি সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় দুই হাজার ফুট ওপরে। এ জায়গা থেকে পাহাড় বেয়ে আরও কিছুটা ওপরে ওঠা যায়। এখানে ওঠা খুবই কষ্টসাধ্য। তবে উঠতে পারলে ঝুলিতে ভরতে পারবেন বাড়তি একটি পাওয়ানা। তাহল পাহাড়ের চূড়া থেকে দূরের সমুদ্র দেখা।

খুব সকালে খৈয়াছড়া অভিযানে গেলে দুপুরের মধ্যেই শেষ করা সম্ভব।

খৈয়াছড়া ভ্রমণ শেষ করে আবারও ফিরে আসতে হবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহসড়কে। সেখান থেকে অটো রিকশায় যেতে হবে নয়দুয়ারীর হাট। লোকাল অটো রিকশায় জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ১৫ থেকে ২০ টাকা। নয়দুয়ারীর হাট থেকে তিন-চার কিলোমিটারের মধ্যে আরও তিনটি অসাধাধরণ ঝরনা হল কুপিকাটাখুম, মিঠা ছড়া এবং বান্দরখুম। আর এ ঝরনাগুলোতে যাওয়ার সুন্দর দীর্ঘ ঝিরিপথটি নাপিত্তাছড়া নামে পরিচিত।

এ পথে প্রায় ত্রিশ মিনিট হাঁটার পর পাওয়া যাবে কুপিকাটাখুম। এটি একটি সরু পাহাড়ি ঝরনা। যেটার গোড়ায় বড় আকারের জলাধার আছে। কুপিকাটাখুম থেকে সরু পাহাড়ি পথ বেয়ে উপরে উঠে ঝিরি পথ ধরে সামনে আরও প্রায় এক ঘণ্টা হেঁটে একটি জায়গায় দুটি ঝিরিপথ দুই দিকে চলে গেছে।

মিরসরাইয়ের নাপিত্তাছড়া ঝরনা।

নাপিত্তাছড়া ঝরনার পথে পর্যটক।

ডানের পথে প্রায় আধা ঘণ্টা হাঁটা পথে নাপিত্তাছড়া। নাপিত্তাছড়া দেখে একই পথে ফিরে এসে বাঁয়র পথটি ধরে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা হাঁটা পথে মিঠাছড়া ঝরনা।

কীভাবে যাবেন

মিরসরাইয়ের ঝরনায় বেড়াতে হলে সড়কপথে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের বাসে যেতে হবে। রাতে রাতে পৌঁছুলে নামতে হবে মিরসরাই কিংবা তাকিয়া বাজার। সকাল হলে খৈয়াছড়া আইডিয়াল স্কুলের সামনে নামলেই হবে।

ঢাকার ফকিরাপুল, সায়দাবাদ থেকে সোহাগ পরিবহন, গ্রীন লাইন পরিবহন, সৌদিয়া পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, টি আর ট্রাভেলস, দেশ ট্রাভেলস, সেন্টমার্টিন সার্ভিসের এসি বাস যায় চট্টগ্রাম। ভাড়া ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২শ’ টাকা।

নাপিত্তাছড়া ঝরনার পথে পর্যটক।

নাপিত্তাছড়া ঝরনার পথে পর্যটক।

এছাড়া শ্যামলী, হানিফ, সৌদিয়া, ইউনিক, এস আলম ইত্যাদি পরিবহনের নন এসি বাসও চলে এ পথে। ভাড়া ৪৮০ টাকা। মিরসরাই এ পর্যটকদের থাকার উপযোগী ভালো হোটেল নেই।

প্রয়োজনীয় তথ্য

খৈয়াছড়া জলপ্রপাতের পুরো এলাকাটিই বেশ পিচ্ছিল। এ ভ্রমণে ট্রেকিং স্যান্ডেল ব্যবহার করা উচিত। যাদের পাহাড়ে ওঠার অভ্যাস নেই তাদের ওপরের ধাপগুলোতে না যাওয়াই ভালো।

পিচ্ছিল বলে ধাপগুলোর পাশে যাওয়াও বিপজ্জনক। এছাড়া সবগুলো ধাপ দেখতে চাইলে সঙ্গে শক্ত রশি নেওয়া উচিত। ওঠা কিংবা নামার সময় রশির সাহায্য নিয়ে কষ্ট কম হবে। তাড়াহুড়া করে ওঠা কিংবা নামা উচিত হবে না। সঙ্গে ওয়াকিং স্টিক নিলে ভালো হয়।

নাপিত্তাছড়া ঝরনার পথে পর্যটক।

নাপিত্তাছড়া ঝরনার পথে পর্যটক।

বৃষ্টি থাকলে এ পথে কিছুটা জোঁকের উপদ্রব থাকে। তখন পায়ে মোজা পড়ে নিলে সুফল পাওয়া যাবে। খৈয়াছড়াসহ অন্যান্য ঝরনাগুলোতে বেড়ানোর জন্য স্থানীয় গাইডের সহায়তা নিলে ভালো। ভ্রমণে গিয়ে প্লাস্টিকের বোতল, চিপসের প্যাকেট, কিংবা এ ধরনের যে কোনো অপচনশীল জিনিসপত্র ফেলে আসবেন না। এসব জিনিস অবশ্যই সঙ্গে করে ফেরত নিয়ে আসুন।

এ ভ্রমণে অবশ্যই শুকনা খাবার রাখা উচিত। পানি না রাখলেও চলবে। ঝরনার পানি বিশুদ্ধ।

ছবি: নয়ন কুমার।