এয়ার কন্ডিশনারের দরদাম

এসি কেনার আগে ঘরের আয়তন জানতে হবে। খরচ একটু বেশি হলেও ভালো ব্র্যান্ডের এসি কেনা উচিত।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 August 2016, 10:28 AM
Updated : 2 August 2016, 10:28 AM

এ সম্পর্কে রাজধানীর বসুন্ধরা সিটির ‘সোর্স ট্রেডিং’য়ের বিক্রয় প্রতিনিধি চঞ্চল বাশার বলেন, “এসি কেনার আগে ঘর কত স্কয়ার ফিট তা জানা দরকার। ঘরের আয়তন সর্বোচ্চ ১৪০ স্কয়ার ফিট পর্যন্ত হলে এক টন ক্ষমতাসম্পন্ন এসি কিনলেই চলবে। তবে ঘরের আকার ১৪০ থেকে ১৯৬ স্কয়ার ফিটের মধ্যে হয় তবে দেড় টন কার্যক্ষমতার এসি কিনতে হবে।”

যে ঘরে এসি বসাবেন তাতে যদি জানালা থাকে তবে পছন্দ অনুসারে ভালো ব্র্যান্ড দেখে ‘উইন্ডো এসি’ কিনে নিতে পারেন। ঘরের আকার যদি ছোট হলেও এই ধরনের এসি কেনা যেতে পারে। এক্ষেত্রে দামটাও তুলনামূলক কম।

তবে ঘরের আকার যদি বড় হয় কিংবা ঘরে যদি কোনো জানালা না থাকে তবে ‘স্প্লিট এসি’ কিনতে হবে। মূলত বসার ঘর কিংবা অফিসের বড় রুমে ব্যবহারের জন্য ‘স্প্লিট এসি’ কেনা হয়।

তিনি আরও বলেন, “যে রুমে এসি লাগাবেন তা যদি টপ ফ্লোরে হয় তবে ঘর আকারে ছোট হলেও তুলনামূলক বেশি ক্ষমতার এসি লাগাতে হবে। কারণ সাধারণত ভবনের উপরের তলায় সূর্যরশ্মির তেজ বেশি থাকে এবং ঘর বেশি গরম থাকে।”

তাছাড়া এয়ার কন্ডিশনারে 'ইনভার্টার' কিংবা 'ইকোন্যাভি' নামক পাওয়ার সেইভিং অপশন থাকে। এ সম্পর্কেও ধারণা থাকা দরকার।

বিদ্যুৎ খরচের ধারণা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিকন্ডাক্টর টেকনোলজি রিসার্চ সেন্টারের ইলেক্ট্রিকাল ইনস্ট্রুমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার সাজেদুল হোসেন সরকার এই বিষয়ে বলেন, এসির বিদ্যুৎ খরচ কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। ঘরের আয়তনের তুলনায় এসির ক্ষমতা যদি কম হয় তবে ঘরটি ঠাণ্ডা করতে এসি বেশিক্ষণ চালাতে হবে। ফলে বিদ্যুৎ খরচ বেশি হবে। আবার ঘরে যদি মানুষ বেশি হয় তাতেও ঘর ঠাণ্ডা হতে বেশি সময় লাগবে, বিদ্যুৎ খরচ বাড়বে। পাশাপাশি বাসা, ভবনের সর্বোচ্চ তলায় হলে সূর্যের তাপ সরাসরি বাসার ছাদে পড়ে। ফলে ঘর বেশি গরম হয়, এক্ষেত্রে ঘর ঠাণ্ডা করতে সময় বেশি লাগতে পারে, তখনও বিদ্যুৎ খরচও বাড়ে।”

তিনি আরও বলেন, “ঘরের তাপমাত্রা কত রাখতে চাচ্ছেন তার উপরও বিদ্যুৎ খরচ নির্ভর করে। যদি ১৫’তে এসি চালান তবে বিদ্যুৎ বিল আসবে অনেক বেশি, বাসার অন্যান্য এসির তুলনায় ১০ গুণ বেশিও বিল আসতে পারে। এছাড়াও এসির ক্ষতিও হতে পারে। ২৫ থেকে ২৮ তাপমাত্রায় দীর্ঘসময় এসি চালালেও বিদ্যুৎ খরচ কম হবে।”

দরদাম: গরমের কথা মাথায় রেখে দেশীয় প্রতিষ্ঠান ‘ওয়ালটন’ বাজারে এনেছে বিভিন্ন মডেলের এয়ার কন্ডিশনার। বিভিন্ন জায়গায় ওয়ালটনের শো রুমে পাওয়া যাবে চারটি ভিন্ন ভিন্ন মডেলে। মানভেদে এসব এয়ার কন্ডিশনারগুলোর দাম ৪২ হাজার থেকে ৬৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। শর্তসাপেক্ষে ওয়ালটন এসিতে দিচ্ছে ছয় মাসের রিপ্লেসমেন্ট গ্যারান্টি এবং তিন বছরের সার্ভিস ওয়ারেন্টি।

এছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন বিপনিবিতান ঘুরে জানা গেলো বর্তমানে বাজারে প্যানাসনিক, এলজি, সনি, ক্যারিয়ার, শার্প এবং ওয়ারপুল ব্র্যান্ডের এসির চাহিদা বেশি।

বসুন্ধরা সিটির ‘সোর্স ট্রেডিং’য়ে ‘প্যানাসনিক’ ব্র্যান্ডের এক টন ক্ষমতার ইনভার্টার এসি পাওয়া যাবে ৮২ হাজার টাকায়। দেড় টন ক্ষমতার ইনভার্টার এসি কিনতে হলে গুনতে হবে ১ লাখ টাকা। একই ব্র্যান্ডের ইকোন্যাভি এসির দাম এক থেকে দেড় টনের জন্য ৭৫ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা।

এছাড়া প্যানাসনিক’য়ের এক টন ক্ষমতার এসিতে ইনভার্টার এবং ইকোন্যাভি অপশন একই সঙ্গে পেতে হলে খরচ করতে হবে ১ লাখ টাকা থেকে দেড় লাখ টাকা। এই এয়ার কন্ডিশনারগুলোর উপর দুই বছরের পার্টস ওয়ারেন্টি এবং তিন বছরের বিক্রয়োত্তর সেবা দেওয়া হচ্ছে।

এলজি’র নিজস্ব শো রুমে পাওয়া যাবে বিভিন্ন মডেলের স্প্লিট এয়ার কন্ডিশনার। এক্ষেত্রে এক থেকে দেড় টন ক্ষমতার এলজি এসি গুলোর দাম হতে পারে ৬৫ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এলজি’র এসিগুলোর দাম কিস্তির মাধ্যমে দেওয়া যাবে। এক্ষেত্রে এসির মূল দামের ৫০ শতাংশ পরিশোধ করে বাকি টাকা সাড়ে তিন শতাংশ সুদ হারে তিন কিস্তিতে পরিশোধ করা যাবে।

এছাড়াও র‌্যাংগস’য়ের এক থেকে দুই টন ক্ষমতার এসি ৬০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকায়, ‘ক্যারিয়ার’ ব্র্যান্ডের এসি ৪৫ হাজার থেকে ৯৫ হাজার টাকায় এবং ‘ওয়ারপুল’য়ের দেড় থেকে দুই টনের এসি ৭৪ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকায় পাওয়া যাবে। ‘স্যামস্যাং’য়ের এক টন ক্ষমতার এসি পাওয়া যাবে ৫৮ হাজার থেকে ৬৫ হাজার টাকায়।

উইন্ডো এসি’র ক্ষেত্রে জেনারেল’য়ের দেড় টনের এসি পাওয়া যাবে ৫২ থেকে ৫৫ হাজার টাকায়। একই ব্র্যান্ডের দুই টনের উইন্ডো এসি কিনতে হলে গুনতে হবে ৬৫ থেকে ৬৯ হাজার টাকা। ‘ক্যারিয়ার’য়ের উইন্ডো এসি পাওয়া যাবে ৪৫ থেকে ৬০ হাজার টাকার মধ্যে। একই দামের মধ্যে ‘গ্রি’ ব্র্যান্ডের উইন্ডো এসি পাওয়া যাবে।

যত্নআত্তি: শহরের বিভিন্ন এয়ার কন্ডিশনার শো রুমের বিক্রয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল এসির ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হল ‘কুলিং’ বা ঠাণ্ডা করার ক্ষমতা কমে যাওয়া। এক্ষেত্রে এসির ভেতরের নেট খুলে ডাস্ট ক্লিনিং করে নিতে হবে। ব্যবহারকারী নিজেই সাধারণ উপায়ে এসির ইনডোর খুলে নেট ওয়াশ করে নিতে পারেন।

এছাড়া কুলিং একেবারে বন্ধ হয়ে গেলে বুঝতে হবে এসির ভেতরে গ্যাস ফুরিয়ে গেছে। এক্ষেত্রে সংশিষ্ট প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক সেবা প্রদানকারী প্রতিনিধিদের মাধ্যমে গ্যাস রিফিল করে নিতে পারেন। বিক্রয়োত্তর সেবা প্রদানের সময় পার হয়ে গেলে সার্ভিস চার্জ প্রদান করতে হবে।