বিচ্ছেদের পরে স্বাভাবিক জীবন

বিবাহ বিচ্ছেদ- জীবনে একটা অমূল পরিবর্তন আনে। সঙ্গে লেগে থাকে মানসিক শূন্যতা এবং সামাজিক চাপও। এরকম পরিস্থিতিতে জীবনকে চালিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়া একটা কঠিন কাজই বটে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 June 2016, 11:24 AM
Updated : 9 June 2016, 11:24 AM

একটা সম্পর্ক যত তিক্তই হোক, শেষ হওয়ার পরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা বেশ কষ্টসাধ্য।

স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার কঠিন কাজটা কীভাবে করা যায় এই বিষয়েই পরামর্শ দিয়েছেন সম্পর্ক বিষয়ক একটি ওয়েবসাইট।

নিজের সমস্যা সমাধান করতে শেখা: সাধারণত পরিবারে পুরুষেরা বাইরের কাজ করে থাকে আর মহিলার ঘরের। এর উল্টোটাও স্বাভাবিক নিয়মেই হতে পারে। তবে মোদ্দা কথা হল সংসারের কাজগুলো ভাগাভাগি করা থাকে। ফলে একজন এক ধরনের কাজেই পারদর্শী হতে পারেন। বিচ্ছেদের পরে প্রত্যেকেই একজন স্বতন্ত্র মানুষ, যাদের নিজের কাজ নিজেকেই করতে হয়। সমস্যাগুলো নিজে থেকে সমাধান করতে শিখলে আর খারাপলাগাগুলো সেভাবে কষ্ট দিতে পারবে না।

পৃথিবীকে জানা: সম্পর্কে আবদ্ধ থাকা অবস্থায় হয়ত নানান কারণে ভ্রমণের সুযোগ পাওয়া যায়নি। তবে একাকী অবস্থায় নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নেওয়া যায়। তাই যতটা সম্ভব বাইরে বেড়িয়ে আসার চেষ্টা করুন। সেই বেড়ানো একাও হতে পারে আবার পছন্দ মতো বন্ধুদের নিয়েও হতে পারে। নতুন বন্ধু নতুন অভিজ্ঞতা জীবনে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন সময় এবং অর্থের অপচয় না হয়। একা থাকতে হলে এই দুই জিনিস বাঁচিয়ে রাখাও বুদ্ধিমানের কাজ।

নিজের অর্থ পরিকল্পনা করা: বিবাহ বিচ্ছেদের ধকল শেষ করার পরে প্রথম যেটা নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে তা হচ্ছে আর্থিক বিষয়। বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে এটা খুবই জরুরি। কেননা সামাজিক পরিস্থিতি নারীদের অযথা অনেক সমস্যার সম্মুখীন করে। যেটা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে হলে শক্তিশালী আর্থিক ভিত্তি থাকা আবশ্যক। বিবাহিত অবস্থায় হয়ত দুইজনের একটি সাধারণ খরচের হিসেব ছিল। বিচ্ছেদের পরে সেই খরচ শুধুই একার। এই খাতগুলো চিহ্নিত করে খরচের একটা সঠিক পরিকল্পনা করতে হবে। প্রয়োজনে কোনো পেশাদার ব্যক্তির পরামর্শ নিতে পারেন। এতে কিছুটা খরচ হলেও অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

সন্তানের রক্ষণাবেক্ষণ: একা সন্তানের দায়িত্ব নেওয়া কঠিন হলেও একটি তিক্ত সম্পর্কে সন্তান বড় করার চেয়ে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত তুলনামূলক ভালো। বড়দের মধ্যেকার অহং-এর যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হয় সন্তান। বিচ্ছেদের মধ্য দিয়ে যখন এই পুনঃ পুনঃ বিরোধ তিক্ততার অবসান ঘটে তখন বাবা-মা তাদের সন্তানদের জন্য একটা সুস্থ সময় বের করতে পারেন।

বিবাহ বিচ্ছেদের পরে সন্তান আলাদা আলাদা ভাবে মা-বাবার সঙ্গে থাকার সুযোগ পায়। এটা তাদের অধিকার এটা থেকে তাদের বঞ্চিত করা কিছুতেই উচিৎ নয়।

সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্ক যতই তিক্ত হোক সন্তান যেন তার বাবা অথবা মা- কোনো একজনের সান্নিধ্য বঞ্চিত না হয় এই বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।

অনেকেই সন্তানের কাছে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন এবং অপরপক্ষের সমস্যা তুলে ধরেন। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, বাবা-মা উভয়ই সন্তানের কাছে এক রকমের প্রিয়। কোনো একজনের বিরুদ্ধেও অভিযোগ শোনা তার জন্য কষ্টসাধ্য।

ভাঙা পরিবারের ঘায়ে এই অভিযোগ ‘নুনের ছিটা’ ছাড়া কিছুই দেয় না। উপরন্তু আশপাশের মানুষের আলোচনা ও অযাচিত প্রশ্নও সন্তানের মনে প্রভাব ফেলে।

এসব থেকে সন্তানকে দূরে রাখার দায়িত্ব বাবা-মা দুজনেরই। সন্তানকে বোঝাতে হবে স্বাভাবিক নিয়মেই কিছু সম্পর্ক ভেঙে যায়। দুজন মানুষ একসঙ্গে থাকতে না পারার কারণ কেউ ভালো বা খারাপ নয়, শুধু সম্পর্কটা ভালো ছিল না।

ছবি: রয়টার্স।