প্রদর্শনীতে শিল্পী নব কুমার ভদ্রের রিকশাচিত্র ও তাঁর অনুষাঙ্গিক বিষয়বস্তু প্রদর্শিত হচ্ছে। ‘রঙে ভরা গ্রীষ্ম’ শিল্পীর তৃতীয় একক প্রদর্শনী, এছাড়াও তিনটি দলীয় প্রদর্শনীতেও স্থান পেয়েছে তাঁর শিল্পকর্ম।
এবারের আয়োজনে শিল্পীর ২৪টি চিত্রকর্ম, ১৭টি পেন্সিল স্কেচ ও টিনের উপর করা ২৪টি চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে।
শিল্পকর্মের বিষয়বস্তু অনেক বিস্তৃত। বনের রাজা বাঘ মামা, শিয়াল পণ্ডিতের ধরা, আড্ডা, রাধা-কৃষ্ণ, পরিবার, মাঝদরিয়া- এরকম শিরোনামই বলে দেয় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য থেকে শুরু করে লোকশিল্পের নানাবিষয় নিয়ে কাজ করেছেন তিনি।
এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়, সিনেমার ব্যানারের আদলে আঁকা সব চিত্রকর্মের কথা।
ঐতিহ্যগতভাবেই আমাদের রিকশাচিত্রের একটি বড় অংশ জুড়ে আছে সিনেমার নায়ক-নায়িকার ছবি কিংবা সিনেমা পোস্টারের ছবি। শিল্পী নব কুমারের কাজেও এর ব্যতিক্রম নেই।
একসময় রিকশাচিত্রের কাজও করতে শুরু করেন। আসলে সিনেমার ব্যানার আর রিকশাচিত্রের কাজ প্রায় একই ধরনের কারখানাতেই হত সে সময়।
নব কুমার বলেন, “সংসারের প্রয়োজনে কারখানাতে কাজ করতে যাই। আস্তে আস্তে কাজ শেখার পর, বাড়তি রোজগারের জন্য বাড়িতেও কাজ করা শুরু করি। মোটামুটি পরিচিতি পাওয়ার পর বিভিন্ন জায়গা থেকে রিকশার কাজ আসা শুরু করে। সেসময় আমার সংসার চলত এই টাকায়।”
“এভাবে চলতে চলতে ১৯৯৯ সালে একটি দলীয় প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়ার জন্য ডাক আসে আমার। একই সঙ্গে আঁলিয়স ফ্রঁসেজেও চাকরি হয় আমার।” বললেন এই শিল্পী।
বর্তমানে চাকরিসুত্রে আঁলিয়স ফ্রঁসেজের সঙ্গে যুক্ত হলেও, শিল্পচর্চা একেবারেই ভুলে যাননি। বরং আর্থিক স্বচ্ছলতার সঙ্গে সঙ্গে আরও গভীরভাবে অনুধাবন করতে পেরেছেন রিকশাচিত্রের সঙ্গে জড়িত মানুষের কষ্টের কথা।
বরাবরই এনামেল পেইন্টে রিকশাচিত্রের কাজ করতেন শিল্পী নব কুমার। তবে প্রদর্শনীতে তাঁর কিছু স্কেচও রয়েছে। এছাড়া রিকশার জায়গা ভেদে ছবিগুলোও যে ভিন্ন ভিন্ন হয় সে কথাও জানিয়েছেন শিল্পী।
যেমন– পাতা, টানা, পানবোর্ড, চট্টি, হুড, লেওয়াজ এরকম একই রিকশার বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন নকশার কাজ হয়। পাশাপাশি মালিকের ইচ্ছা অনুযায়ী নকশাতেও বৈচিত্র্য আসত এক সময়। পছন্দের নায়ক-নায়িকার পাশাপাশি মালিকের স্ত্রী-সন্তান কিংবা বাবা-মা’র ছবিও কখনও কখনও উঠে এসেছে রিকশার গায়ে।
তবে সব কিছু জায়গা দিতে পারেননি এবারের প্রদর্শনীতে। তারপরও রিকশাচিত্রের পাশাপাশি খুদে মডেল রিকশা, প্রায় বিলুপ্ত হলুদ বেবি ট্যাক্সি ও মাটির সরাও রেখেছেন এই প্রদর্শনীতে।
আঁলিয়স ফ্রঁসেজের ঠিকানা: ২৬, মিরপুর রোড (ধানমণ্ডি সড়ক তিনের পাশে), ধানমণ্ডি, ঢাকা-১২০৫।
ছবি: লেখক।