চাটগাঁইয়া খাবারের আয়োজন

নওয়াব চাটগাঁয়ের মেজবানি মাংস কিংবা লইট্টা ফ্রাইয়ে উদরপূর্তিতে নবাবী মেজাজ আসতেই পারে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 April 2016, 12:03 PM
Updated : 28 April 2016, 12:03 PM

রাজধানীর অভিজাত এলাকায় এসির শীতল পরশে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবানি মাংস, কালাভুনা কিংবা ডাল মাংস খাওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে ‘নওয়াব চাটগাঁ’।

গুলশান এক নম্বরের ১৯ নম্বর রোডে চট্টগ্রামের খাবারের এই রেস্তোরাঁর কর্ণধারদের মধ্যে আছেন কণ্ঠশিল্পী এলিটা এবং তার ফুফা মো. শহীদুল ইসলাম। সঙ্গে আছেন ওয়াসিউদ্দিন এবং ইফতেখার হোসেন।

শহীদুল ইসলাম বলেন, “আমাদের বাড়ি চট্টগ্রামে। ছোটবেলা থেকেই তাই জানি এসব খাবারের স্বাদ কেমন হবে। ঢাকার একটি রেস্তোরাঁয় চট্টগ্রামের এই ধরনের খাবার খেয়ে মন ভরলো না। অথচ তারা ব্যবসা করছে বেশ। তখন মনে হল ঢাকার মানুষদের অন্তত খাঁটি মেজবানি মাংসের স্বাদ বোঝানোর জন্যে এরকম একটি রেস্তোরাঁ খুললে কেমন হয়। সেই ভাবনা থেকেই শুরু।”

তিনি আরও বলেন, “তাছাড়া আমার ইচ্ছেও ছিল একসময় রেস্তোরাঁর দিব। তো সেখানে চট্টগ্রামের খাবারই হোক আসল পদ।”  

নওয়াব চাঁটগার কর্ণফুলি কক্ষ।

নওয়াব চাটগাঁ’র খাবার তৈরির জন্য গরু বাছাই করে প্রক্রিয়াজাত করে তারপর রান্না করা হয়।

কারণ হিসেবে শহীদুল বলেন, “এই খাবারের চর্বি কম এরকম গরু রান্না করা হয়। কারণ বেশি চর্বির মাংস দিয়ে এই খাবার রান্না করলে তরকারি জমে যাবে। সাধারণ মেজবানি মাংস রান্নার জন্য ইন্ডিয়ান বোল্ডার গরু ব্যবহার করা হয়। আর আমরা এধরনের গরু সাপ্লাইয়ারদের কাছ থেকে সংগ্রহ করি।”

তিনি আরও জানান, খাবারে যাতে খাঁটি চাটগাঁর স্বাদ থাকে সেজন্য তার রসুইঘরের পাঁচজন পাচককেই চট্টগ্রাম থেকে আনা হয়েছে।

খাবারের গুণগত মান সম্পর্কে তিনি বলেন, “তেলযুক্ত খাবার বটে। তবে চর্বিহীন মাংস ব্যবহার করার জন্য এমনিতেই খাবারে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে। আর আমরা ব্যবহার করি সরিষার তেল। যে তেলে অন্যান্য খারাপ উপাদান খুবই কম থাকে।”

“সত্যি বলতে কী এই খাবার তো আর প্রতিদিনই কেউ খায় না। তাই খারাপ প্রভাবও পড়ে না।” বললেন শহীদুল।

প্রতিদিন একই গ্রাহক না আসলেও ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে চালু হওয়া এই রেস্তোরাঁয় কর্মদিবসের দুপুর বেলায় জায়গা পাওয়াই দায় হয়ে যায়। আর ছুটির দিনে দুবেলাতেই থাকে ক্রেতাদের ভিড়।

কারণ খাবারের মান ও পরিবেশের তুলনায় দাম নাগালের মধ্যে।

নওয়াব চাঁটগার মেজবানি মাংস।

এই বিষয়ে শহীদুলের সহজ উত্তর, “আমি টিপিকল রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী নই। মানুষ খাওয়াতে আমার ভালোলাগে। ৫০ জনের চাইতে একশজনকে খাইয়ে আমি একই লাভ করবো। ব্যবসার এই ধরন মাড়োয়ারিরা আমাদের শিখিয়ে গেছে। অথচ আমরা ভুলে গেছি। তাছাড়া সারাটা জীবন আমি মাল্টিন্যাশনাল দুটি প্রতিষ্ঠানে মার্কেটিং বিভাগে কাজ করেছি। কীভাবে রিজনেবল প্রাইসে প্রোডাক্ট বিক্রি করতে হয় সেই প্র্যাকটিস আমার আগেই হয়ে আছে।”

চাটগাঁইয়া আবহ তৈরি করতে রেস্তোরাঁর বিভিন্ন কক্ষে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী এলাকার ছবি এঁকে সেই নামেই নামকরণ করা হয়েছে।

শহীদুল বলেন, “অন্দরসজ্জার ধারণা আমাদেরই। দেয়ালে কর্ণফুলি সেতুর ছবি আঁকা ঘরটির নাম ‘কর্ণফুলি ঘর’। লবিতে কালো দেয়ালে আঁকা ছবিটি চেরাগী পাহাড়ের। আরেক ঘরের দেয়ালে আঁকা হয়েছে চট্টগ্রামের বটতলী রেলস্টেশনের ছবি, ঘরের নাম তাই বটতলী। আরেকটি ঘরের নাম পতেঙ্গা।”

শহীদুল জানান, খাবারের মধ্যে সবচাইতে জনপ্রিয় মেজবানি মাংস, কালাভুনা ও লইট্টা মাছ ভাজা। বেশির ভাগ খাবারই বিক্রি করা হয় ছোট, মাঝারি ও বড় এই তিন আকারের বাটিতে।

নওয়াব চাঁটগার চেরাগী পাহাড় কক্ষ।

মেজবানি মাংসের দাম ১৮০ থেকে ১ হাজার টাকা। কালাভুনার দাম ২৬০ থেকে ১ হাজার ৩শ’ টাকা। এছাড়াও আছে নলার ঝোল, চানার ডাল, মসুর ডাল, সবজি ইত্যাদি।

মাছ ভাজার মধ্যে আছে পমফ্রেট, লইট্টা, চিংড়ি ও কোরাল মাছ। পমফ্রেট ৩৬০ টাকা, লইট্টা আড়াইশ টাকা আর চিংড়ি ও কোরাল ২৬০ টাকা।

এছাড়া আছে বিভিন্ন রকম সেট মেন্যু। একজনের জন্যে হলেও অনায়াসে খেতে পারবেন দুজন। আরও আছে বোরহানী, লেমোনেইড, লাচ্ছি, ফলের সরবত ইত্যাদি।  

বসার ব্যবস্থা আছে ১১০ জনের। ওয়াইফাই আছে।