প্যাডেল স্টিমারে নদী ভ্রমণ

নদীমাতৃক বাংলার রূপ উপভোগ করতে প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহি এই জলযানের তুলনা নেই।

মুস্তাফিজ মামুনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 April 2016, 08:23 AM
Updated : 22 April 2016, 08:23 AM

বিআইডব্লিউটিসি’র বেশ পুরানো কয়েকটি স্টিমার একসময়ে ঢাকা থেকে খুলনা পর্যন্ত চলাচল করলেও কিছু নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় এখন এ রুট থেমেছে বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জে।

ঢাকার বুড়িগঙ্গা থেকে দেশের প্রধান প্রধান নদী পেরিয়ে এসব স্টিমার পৌঁছায় মোড়েলগঞ্জে।

স্টিমারে চড়ে দুচোখ ভরে দেখা যাবে রূপসী বাংলার অনন্য সৌন্দর্য। কোথাও জেলেদের মাছধরা, কোথাও পাল তোলা নৌকার সারি আবার কোথাও নদীর দুপাশ জুড়ে বিস্তৃত ধানক্ষেত।

সেই সঙ্গে বাড়তি পাওনা হিসেবে মিলবে নদীর বুকে সন্ধ্যা নামার মন হারানো দৃশ্য।     

ঢাকা থেকে খুলনার পথে এখনও চলে বাংলাদেশ আভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) পরিচালিত জাহাজ পিএস অস্ট্রিচ (১৯২৯), পিএস মাসহুদ (১৯২৯), পিএস লেপচা (১৯৩৮), পিএস টার্ন (১৯৫০) এবং এমভি শেলা (১৯৫১)।

আগে এগুলো কয়লার ইঞ্জিনে চললেও এখন চলছে ডিজেল ইঞ্জিনে।

সুগন্ধা নদীতে স্টিমার চলেছে।

গাবখান চ্যানেলে প্যাডেল বোটের এগিয়ে যাওয়া।

ঢাকা থেকে সন্ধ্যায় নোঙর তুলে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষা, মেঘনা এবং ডাকাতিয়ার বুক চিরে এ স্টিমার মধ্যরাতে প্রথম ভেড়ে ব্যস্ত নৌ বন্দর চাঁদপুরে। এরপরে পদ্মা, আড়িয়ালখাঁ, কীর্তনখোলা হয়ে এ স্টিমারের সকাল পৌঁছায় বরিশালে।

ব্যস্ত এই নৌ বন্দরে কিছুটা সময় থেমে আবার ভেঁপু বাজায় সুগন্ধার দক্ষিণাঞ্চলের আরেক প্রাচীন বাণিজ্যকেন্দ্র ঝালকাঠীর উদ্দেশ্যে। এর পরেই গাবখান চ্যানেল।

অনেকটা খালের মতো ছোট্ট এই চ্যানেল পার হতে ঘণ্টা দুয়েক সময় লাগে। তাই এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভুলবেন না।

এরপরে কাছাকাছি দূরত্বের দুটি স্টেশন সন্ধ্যা নদীর তীরে কাউখালি বন্দর। এখান থেকে সামান্য দূরে পিরোজপুরের নৌ-বন্দর হুলারহাট। কচানদী পেরিয়ে পরের ঘাট চরখালী। এরপর বলেশ্বরসহ আরও কয়েকটি নদী পেরিয়ে স্টিমার এসে পৌঁছায় তার শেষ গন্তব্য মোড়েলগঞ্জে।

এঁকেবেঁকে স্টিমার চলে গাবখান চ্যানেলে।

শান্ত নদী সুগন্ধায় এখনও পানি কেটে এগিয়ে চলে প্রাচীন স্টিমার।

দেশের বিভিন্ন নৌপথে এখন অনেক আধুনিক জলযান চললেও এখনও নিজের জায়গা ধরে রেখেছে বয়সে প্রবীণ সরকারী এ স্টিমারগুলো। যাত্রীসেবার মান, নিরাপত্তা সর্বোপরি একটা ঐহিত্যময় এ ব্যবস্থাপনা ধরে রেখেছে বিআইডব্লিউটিসি’র এসব জলযান।

স্টিমারে চলতে চলতে এক নস্টালজিক আবেগে তাড়িত হবেন যে কেউ।

প্রথম শ্রেণি, দ্বিতীয় শ্রেণির কেবিন ছাড়াও তৃতীয় শ্রেণির ডেক সার্ভিস আছে প্যাডেল স্টিামারে।

প্রথম শ্রেণির কেবিনগুলো দোতলায়, সামনে বড় খোলা জায়গায়, পুরানো আদলে বসার আসন, ভেতরে পরিপাটি বিছানা, আছে তাপনিয়ন্ত্রণেরও ব্যবস্থা। আর বিশেষ পোশাকে সার্বক্ষণিক সেবাকর্মী পাওয়া যাবে দোরগোড়ায়। প্রথম শ্রেণির জন্য খাবারের আয়োজনও একটু বিশেষ ধরনের। আগে বলে রাখলে পছন্দের খাবারও মেলে।

এছাড়া নিচের ডেকে রেস্তোরাঁয় পাওয়া যায় প্যাকেজে খাবার ব্যবসা।

কবে, কখন এবং দাম

স্টিমারের সারেঙঘর।

সন্ধ্যা নামে কীর্তনখোলায় তবুও যাত্রা থামায় না প্রাচীন জলযান।

ঢাকা থেকে রবি ও বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় পিএস অস্ট্রিচ, শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় পিএস লেপচা/ পিএস টার্ন, শনিবার এবং মঙ্গলবার পিএস মাসহুদ ছাড়ে। পরদিন দুপুরে পৌঁছায় মোড়েলগঞ্জ। মোড়েলগঞ্জ থেকে জাহাজগুলো ঢাকার উদ্দেশ্যে সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে ছেড়ে পরদিন সকালে এসে পৌঁছায়।

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির জন্য আগাম টিকেটও পাওয়া যায়। যোগাযোগের ফোন নম্বর: ঢাকা ০২-৯৫৫৯৭৭৯, চাঁদপুর ০৮৪১-৩১৩৫, বরিশাল ০৪৩১-৫৬৪৩৬, খুলনা ০৪১-৭২৫৯৭৮)।

বিভিন্ন গন্তব্যের ভাড়াও নির্ধারিত।

ঢাকা থেকে চাঁদপুর ভাড়া জনপ্রতি প্রথম শ্রেণি ৪০০ টাকা, দ্বিতীয় শ্রেণি ২৪০ টাকা এবং তৃতীয় শ্রেণি ১০০ টাকা।

ঢাকা-বরিশাল প্রথম শ্রেণি ১ হাজার টাকা, দ্বিতীয় শ্রেণি ৬৩০ টাকা এবং তৃতীয় শ্রেণি ২৫০ টাকা।

ঢাকা-ঝালকাঠি প্রথম শ্রেণি ১ হাজার ১৯০ টাকা, দ্বিতীয় শ্রেণি ৭৬০ টাকা এবং তৃতীয় শ্রেণি ২৭০ টাকা।

ঢাকা-কাউখালী প্রথম শ্রেণি ১ হাজার ২৪৫ টাকা, দ্বিতীয় শ্রেণি ৮৪০ টাকা এবং তৃতীয় শ্রেণি ২৮০ টাকা।

ঢাকা-হুলারহাট (পিরোজপুর) প্রথম শ্রেণি ১ হাজার ৩৮০ টাকা, দ্বিতীয় শ্রেণি ৮৫৫ টাকা এবং তৃতীয় শ্রেণি ৩শ’ টাকা।

ঢাকা-চরখালী প্রথম শ্রেণি ১ হাজার ৪২৫ টাকা, দ্বিতীয় শ্রেণি ৮৮৫ টাকা এবং তৃতীয় শ্রেণি ৩২০ টাকা।

ঢাকা-বড় মাছুয়া প্রথম শ্রেণি ১ হাজার ৬১৫ টাকা, দ্বিতীয় শ্রেণি ১ হাজার ১০ টাকা এবং তৃতীয় শ্রেণি ৩৫০ টাকা।

ঢাকা-মোড়েলগঞ্জ প্রথম শ্রেণি ১ হাজার ৬১৫ টাকা, দ্বিতীয় শ্রেণি ১ হাজার ৫০ টাকা এবং তৃতীয় শ্রেণি ৩৬০ টাকা।

ঢাকায় বাদামতলীতে স্টিামারঘাট। সারাদিন সেখানে নোঙর করে থাকলেও স্টিমারগুলো বিকেল ৫টা থেকে ছাড়ার আগ পর্যন্ত থাকে সদরঘাটে।

তৃতীয় শ্রেণির টিকিট ছাড়াও আসন খালি থাকা সাপেক্ষে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির টিকিটও মিলবে বাদামতলী ও সদরঘাটের স্টিমার ছাড়ার স্থানে।

ছবি: লেখক।