অফিসে অনুচ্চারিত নিয়মগুলো

কর্মক্ষেত্রে কিছু অলিখিত নিয়ম থাকে। যতই অলিখিত বা অনুচ্চারিত হোক না কেনো, সেগুলো লিখিত নিয়মের চেয়ে কম জরুরি নয়।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 April 2016, 06:05 AM
Updated : 18 April 2016, 06:07 AM

অফিসে সহকর্মী এবং বসয়ের সঙ্গে নানা রকম কথা হয়। হাসি মুখেও চলে কাজের মধ্যে কথাবার্তা। তবে কার মনের ভিতরে কী চলছে তা কি কেউ জানে! মনের কথার মতো হাজারটা অকথিত অনুচ্চারিত নিয়ম অফিসে থাকে যেগুলো মেনে চলার উপরই নির্ভর করে চাকরি জীবনের সাফল্য।

কোন বিষয়গুলো বুঝে চললে অফিসের অলিখিত নিয়মগুলো ঠিকঠাক থাকে তাই জানিয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক নিয়ে কাজ করে এমন একটি ওয়েবসাইট।

কাজের বাইরের কাজগুলোও ভূমিকা রাখে: অফিসে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সব কাজ খুঁটে খুঁটে দেখতেই পারেন। তবে অফিসের বাইরেও কে কী করে সে বিষয়ে বস মোটেই অনবগত নন।

আমেরিকায় কর্পোরেট কাউন্সিলিং করেন এমন একটি কোম্পানির কর্ণধার এডিথ অনড্রিক হারভেয় বলেন, “সোশ্যাল মিডিয়াতে কোনো কিছু ‘শেয়ার’ করার আগে চিন্তা করুন, সেটা কি আপনার বসকে দেখাতে চান কিনা। কেউ যদি যৌক্তিক কারণে ছুটি নিয়ে অন্য কিছু করে সময় অতিবাহিত করেন অথবা সহকর্মীদের নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন তবে একসময় অবশ্যই অফিসের উচ্চপদস্থের নজরে পড়বেন। তখন তিনি বা তারা আপনাকে পেশাগত হালকা চোখেও দেখতে পারেন।”

সামাজিক আচরণ দায়িত্ব পালনের মতোই জরুরি: অফিসের পলিটিক্স সব সময়ই গুরুত্ব বহন করে, হোক সেটা প্রতিদিনের ঘটনা অথবা দূরবর্তী কোনো বিষয়। আজকের আচরণ অবশ্যই কালকে সবাই মনে রাখবে। অনেক সময় অফিসের নির্দিষ্ট কাজের বাইরেও কিছু কাজ করতে দেওয়া হয়। কখনও কেউ বলে দেয় না যে এগুলো কাজের মতোই জরুরি। অনেক সময় এসব কাজ দিয়েই অফিস কাজের দক্ষতা পরীক্ষা করে। এ কাজগুলো সমাধা করার মধ্যমেই অফিস এবং সহকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করা যায়।

নিজেকে প্রকাশ করা: কর্মক্ষেত্রে সাফল্যের আরেকটি বড় বিষয় হচ্ছে নিজেকে প্রকাশ করা। ক্যারিয়ার বিশেষজ্ঞরা বলেন, সারাদিন ডেস্কে বসে থাকা কর্মচারীর প্রতি ব্যবস্থাপনা পরিষদ কখনও তেমন আগ্রহ দেখায় না বরং যারা নতুন কিছু চিন্তা করে তা খোলাখুলি ভাবে আলোচনা করে এবং নিজে উপরে ওঠার আগ্রহ দেখায় তাদের বিষয়ই অফিস মনোযোগী হয়।

অনুসরণ করা: বস যখন কোনো নির্দেশনা ফোন, ইমেইল, মিটিং বা সামনাসামনি দিয়ে থাকেন তখন সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে। কোনো কারণে যদি নির্দেশনা বুঝতে সমস্যা হয় তবে বিনা দ্বিধায় জিজ্ঞেস করে নেওয়াই ভালো। এক্ষেত্রে যেটা মনে রাখা জরুরি তা হচ্ছে প্রতিটা মানুষ এক ধরণের নয়। মানুষটার ধরণ কেমন তাও বিবেচনায় আনা জরুরি। কোনো বস একটু অন্তর্মুখী হতে পারে তার সঙ্গে সামনে গিয়ে কথা না বলে ইমেইল দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।

নিজের বাঁশি নিজেই বাজান: বস যতই দেখেশুনে রাখুক না কেনো, কে কত ভালোভাবে কাজ করতে পারে তা নিজ উদ্যোগেই বসকে জানালে ভালো। কোনো লক্ষ্য পূরণ হলে বা কোনো সাফল্য অর্জন করতে পারলে সেটার কথা মেসেজ দিয়ে বসকে জানিয়ে রাখতে পারেন। বসের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার এটা একটা খুবই ভালো উপায়। পাশাপাশি বছর শেষে যখন কাজের দক্ষতা পরিমাপ করা হয় তখন বসের হাতেই প্রমাণ থাকবে যে কোন কোন কাজ সাফল্যের সঙ্গে সমাধান করার হয়েছিল এবং সেটা কে করেছিল।

কর্মদক্ষতার পর্যালোচনা শুনাতে হবে: বছর জুড়ে কে কী কর্মদক্ষতা দেখালো এটা আলোচনা করা যেমন বিরক্তিকর ঠিক তেমনি সেটা শোনাও। তবে নিজের কর্মদক্ষতা নিজেকেই জানাতে হবে বিশেষ উপায়ে যেন মনে না হয় কাউকে শোনানোর উদ্দেশ্যে বা নিজেকে জাহির করার উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে না। যেমন কোনো কথার প্রসঙ্গে কোনো সফল সিদ্ধান্তের ঘটনা উত্থাপন করা যায়। এতে কাজও হবে আবার বাজেও দেখাবে না।

পোশাক পরিচ্ছদ সব সময় মার্জিত হতে হবে: ‘সেট ফ্রি লাইফ’ সেমিনারে বিজনেস ম্যানেজার সু থমসন বলেছেন, সব সময় এমন পোশাক পরতে হবে যেন যে কোনো সময় প্রতিষ্ঠানের মালিকের সঙ্গে মিটিং করতে হবে। পোশাক পরিচ্ছদের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার অবশ্যই আছে তবে পেশাগত অগ্রগতির ক্ষেত্রে এটাও কম অর্থ বহন করে না।

ইতিবাচক মূল্যায়ন করতে হবে: সবসময় ইতিবাচক ধারণা রাখতে হবে। যে ব্যাপারগুলোতে সম্পর্ক নেই বা ধারণা কম সেগুলো সম্পর্কে কোনো মতবাদ দিতে হলেও ইতিবাচক থাকতে হবে। এটা এক ধরণের অভ্যাস যা কারও সম্পর্কে সবার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিতে পারে।  

সমস্যার সমাধান করা: অফিসে যে কারও সমস্যায় যদি কোনোভাবে জীবনে জড়িয়ে যায় অথবা শুধুই দৃষ্টিগোচর হয় সেগুলাও সমাধান করার চেষ্টা করা উচিত। মনে রাখতে হবে ছোট ছোট সমস্যা অনেকটা ছোট ছোট জটের মতো। আর একটা সমস্যা সব সময়েই অন্য সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। সমস্যা তা যত ছোটই হোক, সমাধানের মাধ্যমে আসলে একটা বড় সমস্যা সমাধানের দিকেই এগিয়ে যাওয়া যায়।

ছবি: রয়টার্স।