শিশুর ঘুমের সময় পরিবর্তন করতে

নবজাতক শিশু দিন ও রাতের পার্থক্য বোঝে না। এমনিতে যদিও তারা দিনের বেশিরভাগ সময় ঘুমিয়ে কাটায়। তবে যখন বাবা মায়েরা বিশ্রাম নেন তখন দেখা যায় সন্তান জেগে বসে আছে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 March 2016, 08:31 AM
Updated : 2 August 2016, 11:00 AM

সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুকে কীভাবে ঘুমের সময়ের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে তাই জানিয়েছে অভিভাবকত্ব নিয়ে পরামর্শ দেয় এমন একটি ওয়েবসাইট—

দিন ও রাতের পার্থক্য বুঝতে পারা: শিশুদের ঘুমের সময়টা লম্বা হলেও তারা দিন রাতে পার্থক্য করতে পারে না। একটা শিশুর ঘুমের ধরণ ঠিক করার প্রথম ধাপ হচ্ছে তাকে দিন ও রাতের মধ্যের পার্থক্য তৈরি করতে সাহায্য করা। শিশুকে বোঝাতে হবে দিনের সঙ্গে জেগে থাকার এবং রাতের সঙ্গে ঘুমানোর একটি সম্পর্ক রয়েছে।

সারাদিন শিশুকে কিছুটা ব্যস্ততার অনুভব দিতে হবে, কথা বলে, হাত পা নাড়িয়ে দিয়ে দিনের জাগরণের অনুভূতি বোঝানো যেতে পারে।

রাত হলে এসব ব্যস্ততা কমিয়ে আনতে হবে, চোখে চোখ রেখে বা জোরে শব্দ করে কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে। ঘরের আলো ও শব্দ কমিয়ে শিশুর মনে এই প্রভাব দিতে হবে যে এখন শান্ত হয়ে ঘুমানোর সময়।

ছোট ছোট ঘুম: শিশুরা বেশি ক্লান্ত হয়ে গেলে তাদের শান্ত করা কষ্টকর। শিশু যখন ক্লান্ত হয়, একটু বিশ্রাম নিতে চায় তখন তারা কিছু সংকেত দেয়। এই সংকেত বোঝা খুব জরুরি।

এই সংকেত নানান রকম হতে পারে, নাক ঘষে, চোখ রগড়ে, চিৎকার করে বা কান্না করে সাধারণত শিশুরা বুঝিয়ে থাকে যে তাদের এখন বিশ্রাম দরকার। এরকম সংকেত দেখলে সঙ্গে সঙ্গে শিশুকে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিতে হবে।

প্রথম মাসেই শিশু তার ঘুমের একটি নিয়মিত রুটিন তৈরি করে নেয়। সাধারণত প্রতিবার ঘুম থেকে ওঠার দেড় ঘণ্টা পরে শিশু আবার ঘুমাতে চায়। এই ধরন বোঝার জন্য একটা ডায়েরিতেও ঘুম এবং জাগার সময়টা লিখে রাখা যায়। কিছু দিনের সূচি মিলিয়ে দেখলে দেখা যাবে- ঘুম ও জাগরণের নিয়মিত চক্র সে তৈরি করে ফেলেছে।

ঘুমের সূচির সঙ্গে পরিচয় ঘটানো: প্রতিদিন ঘুমের আগে নির্দিষ্ট কিছু অভ্যাস ঘুমের সময়কে বোঝতে সাহায্য করে। যেমন ঘুমের আগে পেট ভরে খাওয়া, পোশাক বদলানো, গা মুছে দেওয়া, প্রতিদিন নির্দিষ্ট একটা ঘুমের পোশাক পরা ইত্যাদি শিশুর মস্তিষ্কে সংকেত দেবে যে এখন ঘুমানোর সময় হয়েছে, এখন ঘুমাতে হবে।

দুধ খাওয়া এবং ঘুমানো আলাদা বিষয়:
অধিকাংশ মা শিশুকে দুধ খাওয়াতে খাওয়াতে ঘুম পাড়ান। এই অভ্যাস বেশ অস্বাস্থ্যকর। কারণ শিশুর ঘুমের সঙ্গে কিছু চোষার একটা সম্পর্ক বের করে ফেলে এবং ঘুমানোর জন্য কিছু না কিছু চোষার আশ্রয় নিতে চায়।

এ থেকে রক্ষা পেতে শিশুকে দুধ খাওয়ানো এবং ঘুমের মধ্যে অন্য কিছু একটা করতে হবে যেন দুধ খাওয়া ও ঘুমের মধ্যকার সম্পর্কটা ভেঙে যায়।

যেমন- খাওয়ানোর পরে গা ধুয়ে দেওয়া যায়, অথবা বই পড়ে শোনানো যায়। এতে শিশু চোষার উপরে নির্ভর হওয়া বাদ দিবে।

ঘুমের জায়গা চেনা: শিশুকে ঘুম পাড়াতে সবাই কম বেশি দোল দেওয়া, কোলে নিয়ে হাঁটা ইত্যাদি করেন। চেষ্টা করতে হবে এটা যেন শিশুর অভ্যাসে পরিণত না হয়।

তাই যখন শিশু ঘুম ও জাগরণের মাঝামাঝি অবস্থায় থাকবে তখনই তাকে নিজের শোবার জায়গায় পাঠিয়ে দিতে হবে। এতে শিশু নিজের শোবার জায়গা চিনতে এবং বুঝতে শুরু করবে। আর সেই জায়গায় নিজেকে অভ্যস্ত করে ফেলবে।

ঘুমের জায়গায় শোবার পরে শিশুর তন্দ্রা যেন টুটে না যায় সে জন্য হালকা আওয়াজে নরম শব্দের সুর শোনানো যেতে পারে। ঘুম পাড়ানি গান, হালকা গুনগুন আওয়াজও একই রকম উপকারী।

শিশুকে নিজের বিছানায় স্থায়ী করা খুব জরুরি। কেননা রাতে নানান কারণে শিশুর ঘুম ভেঙে যেতে পারে। হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে অচেনা একটি জায়গায় নিজেকে আবিষ্কার করলে শিশু ঘাবড়ে যেতে পারে।

নিরবিচ্ছিন্ন ঘুমে সাহায্য করা:
ঘুম এবং জাগরণের মধ্যের চক্র একটা নবজাতক শিশুর ক্ষেত্রে হয় সর্বোচ্চ ৬০ মিনিটের। অর্থাৎ ৬০ মিনিট পরে নবজাতকের ঘুম ভেঙে যায়।

তিন মাসে গিয়ে এই চক্র হয় ৯০ মিনিটের। এই ঘুম ভাঙার পরে তাদের নিজেদেরকে আবার নিজে থেকে ঘুমিয়ে পড়ার মতো সাহায্য করতে হবে।

এই সাহায্যই তাকে সারা রাত নিরবিচ্ছিন্ন ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তুলবে।

এত কিছুর পরেও যদি মনে হয় ঘুমের সূচিতে পরিবর্তন আসছে এবং শিশু কিছুতেই সঠিক সময়ে ঘুমাচ্ছে না অথবা ঘুমালেও ক্ষণে ক্ষণে জেগে উঠছে তাহলে দেখতে হবে শিশুর কোনো সমস্যা হচ্ছে কি-না।

 সে পেট ভরে খেয়েছে কি-না, ডায়পার পরিচ্ছন্ন আছে কি-না অথবা তার খুব বেশি গরম বা ঠাণ্ডা লাগছে কি-না।

সব কিছু ঠিক থাকলে শিশুকে আবার ঘুমিয়ে পড়তে সাহায্য করতে হবে, হালকা নাড়িয়ে চাড়িয়ে, দোল দিয়ে শিশুকে আবার ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া যায়।

মডেল: অর্হ অপরাজিতা।