অবহেলা নয়, সচেতনতাই কাম্য

ঘরে ও বাইরে কাজের তাল মেলাতে গিয়ে মেয়েরা প্রায়ই নিজেকে উপেক্ষা করেন। এই উপেক্ষা থেকেই নানান ধরনের ব্যাধির সূত্রপাত হতে পারে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 March 2016, 11:27 AM
Updated : 15 March 2016, 11:39 AM

অনেক মহিলাই বাইরে কাজে বের হন। দিন শেষে ঘরে ফিরে আসার পরে শুরু হয় নতুন আরেকটা কাজের ক্ষেত্র।

ব্যস্ত এই রুটিনে অভ্যস্থ নারীর কোথাও তো একটা ফাঁক অবশ্যই থেকে যায়। দিনের এত কাজের মাঝে কবে মাসিকের তারিখ পার হয়ে যায় অথবা পিঠে ব্যথা করে তা কেইবা লক্ষ করে। কখনও সখনও ডাক্তারের সঙ্গে আলাপ করলেও ব্যস্ততায় আর চিকিৎসা ফলো আপ করা হয় না।

স্বাস্থবিষয়ক একটি ওয়েবসাইট জানিয়েছে, সামান্য এই সমস্যাগুলোই হতে পারে বড় কোনো সমস্যার পদধ্বনি। এগুলো অবহেলা করে একজন নারী নিজেকে এগিয়ে নিচ্ছে পলিস্টরয়েড ওভারি সিন্ড্রম, অকালে বার্ধক্য এমনকি জরায়ু ক্যান্সারের মতো মারাত্বক ব্যাধির দিকে। তারা এই সমস্যাগুলো থেকে বাঁচতে বিশেষ পাঁচটি বিষয় লক্ষ রাখা জরুরি বলে মনে করছে—

সময় মতো মাসিক: মাসিক সময়মতো হওয়ার অর্থ হচ্ছে শরীরের ভিতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো সঠিকভাবে চলছে। কোনো ধরনের অনিয়ম দেখা দিলেই চট করে গায়নোকলজিস্টের সঙ্গে দেখা করা জরুরি।

অনেকেই সমস্যা সমাধানে গুগলের সাহায্য নিয়ে থাকেন। তবে মাসিক চক্রের অনিয়ম বিষয়টি এত সহজ নয়, এর অনিমের মানে অনেক কিছুই হতে পারে। যেমন: হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, শরীরের মধ্যভাগে কোনো ইনফেকশন, ওভারি বা জরায়ুর ক্যান্সার পর্যন্ত।

ভারতের ইনফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ গীতা ভাদিয়া জানান, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়ত সামান্য সমস্যা থেকেই হতে পারে। তবে এভাবে রক্ত যেতে থাকলে রোগী রক্তশূণ্যতায় ভোগে। অনেকদিন ধরে চলা এই রক্তশূন্যতা থেকে হাড়ের ঘনত্ব হ্রাস, অকাল বার্ধক্য, হাড় ক্ষয় রোগ, অথবা থাইরয়েড হরমোনের অনিয়ন্ত্রণ জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।

পলিয়েস্টিক ওভারি সিন্ড্রম যেটা অধিক রক্তক্ষরণের জন্য বিশেষত দায়ী থাকে। লক্ষণগুলো হল: অনিয়মিত মাসিক, ঘন চুল হওয়া, ওজন বৃদ্ধি এবং ব্রণ। অনেক নারীই জিমে বা ব্যায়ামাগারে যান এবং সেখানে থাকা পুষ্টিবিদের পরামর্শ মতো খাবার খান। জীবনে গায়নোকলজিস্টের প্রয়োজনীয়তা এক অর্থে তারা উপেক্ষাই করেন যার মূল্য ভবিষ্যতে গিয়ে তাদের পোহাতে হয়।

জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি: রয়েছে নানা রকমের জনশ্রুতি। কেউ বলে এগুলো সেবন করলে ওজন বেড়ে যায়, কেউ বলে এগুলো খেলে মানুষ সন্তান জন্মদানে অক্ষম হয়ে পরে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন এই কথাগুলোর পেছনে তেমন জোড়ালো ভিত্তি নেই। বাজারে নানান ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি পাওয়া যায়। সবগুলো সবার উপযোগী নয়। ডাক্তারের পরামর্শ মতো না খেলে শরীরে সুবিধার চেয়ে সমস্যাই বেশি হবে।

পরামর্শ ডাক্তারের থেকে গুগলের থেকে নয়: গুগলের কাছে শত কোটি পরামর্শ রয়েছে যেগুলো একে অপরের সঙ্গে মেলে না। এছাড়াও সঠিক কোনো পরীক্ষা ছাড়া অন্য কারও পরামর্শে ব্যবস্থা নেওয়া ঠিক নয়।

ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষেরা এখনও ডাক্তারের চেয়ে কবিরাজ, হুজুর, গুরু এদের পরামর্শ বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এরকম নিজেদের বিশেষজ্ঞ ঘোষণা করা লোকেরা মনগড়া একটা ব্যবস্থাপনা দিয়ে দেন। কখনও কখনও ঝড়ে বক মরলেও পরে অন্য সমস্যা তৈরি হয়।

পরিছন্নতা জরুরি: যে নারীর ঘাম কম হয় তারা গোসল করতে গড়িমাসি করেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন মহিলাদের সব সময় ঘেমো কাপড় দ্রুত পরিবর্তন করে গোসল করে ফেলা উচিত কেননা স্যাঁতস্যাঁতে অবস্থায় ইস্ট খুব দ্রুত বংশ বিস্তার করে, যা সংক্রমণের কারণ হয়। তাই পরিছন্নতা খুবই জরুরি। বিশেষ করা যারা সারাদিন অফিস করেন তাদের জন্য।

বিশেষজ্ঞরা নারীদের এই সব সংক্রমণ থেকে দূরে থাকতে কয়েকটি বিষয়ে যত্নশীল হতে পরামর্শ দেন। মাসিকের সময় স্যানিটারি ন্যাপকিন প্রতি তিন থেকে চার ঘণ্টার মধ্যে বদলাতে হবে। কেউ ট্যাম্পোন ব্যবহার করলে রক্তপাতের মাত্রা বিবেচনা করে চার থেকে আট ঘণ্টার মধ্যে তা বদলে ফেলতে হবে। গোপনস্থানে মৃদু কোনো সাবান দিয়ে পরিছন্ন করতে হবে। রাতে ট্যাম্পোন না পরাই ভালো। এটি ভিতরের দিকে ঢুকে যাওয়ার ভয় থাকে।

তুচ্ছ সমস্যাও সমাধান যোগ্য: অনেক নারীই ইউরিনের ইনফেকশোনে ভোগেন এবং প্রস্রাব ধরে রাখতে পারেন না। যারা সন্তান প্রসব করেছেন তাদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। হাসতে গিয়ে কাশতে গিয়ে তারা প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে এই সমস্যা সহজেই সমাধানযোগ্য তবে সমস্যা ধরে রাখা যাবে না।

ছবি: রয়টার্স।