রাঙামাটির রংরাং পাহাড়ে

কাপ্তাই লেকের সবচেয়ে বেশি মাছ ধরা পড়ে লংগদু-কাট্টলি বিল অংশে। সারা রাত ধরে ছোট ডিঙিনৌকা নিয়ে জেলেরা মাছ ধরে। সকালে ঘাটে বহু রকমের মাছের পসরা নিয়ে বসে জেলেরা।

সমির মল্লিকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 March 2016, 03:41 AM
Updated : 9 March 2016, 03:41 AM

পাবদা, রুই, চিতল, বড় বোয়াল, শিং, মাগুর, চাপিলাসহ বহু রকমের তাজা মাছের সমাহার, দামও বেশ সস্তা। লংগদু'র লঞ্চ ঘাটে পাওয়া যায় গরুর দুধের চা। পরখ করতে ভুলবেন না।

দূর থেকে সাইরেন বাজিয়ে সংকেত দেবে রাঙামাটিগামী দিনের প্রথম লঞ্চ। বাঘাইছড়ি থেকে ছেড়ে আসা এই লঞ্চে প্রচুর যাত্রী। বেশিরভাগই স্থানীয়। বাঘাইছড়ি, মাইনী এবং লংগদু অঞ্চলে সঙ্গে রাঙামাটির যোগাযোগের প্রধানতম মাধ্যম হল পাকিস্তান আমলের কাঠের তৈরি এই দোতলা লঞ্চগুলো।

লঞ্চের ছাদেই নিজেদের জায়গা করে নিতে হল। কিছুক্ষণের বিরতি শেষে লঞ্চ চলতে শুরু করে রাঙামাটির পথে। লেকের ছোট ছোট মাছ ধরতে বসন্তের শুরুতেও এখানে পাখিদের ঝাঁক চোখে পড়ে। সারস, সাদা বক, পানকৌড়ির চলাচল পুরো লেক জুড়ে।

আকাশের নীল ছায়ায় লেকের জল বেশ স্বচ্ছ। গভীর পানি দিয়ে ঘুরে ঘুরে চলছে লঞ্চ। যাত্রামুখ রাঙামাটির রংরাং পাহাড়ের দিকে।

রংরাং শব্দের অর্থ ধনেশ পাখি। একটা সময়ে কাপ্তাই লেকের আশপাশের পাহাড়গুলোতে ধনেশ পাখির বিচরণ ছিল। এখনও গভীর পাহাড়ে মাঝে মধ্যে তাদের দেখা মেলে।

লঞ্চে লংগদু থেকে রংরাং যেতে সময় লাগে প্রায় তিন ঘণ্টা। পুরো যাত্রাপথে প্রকৃতির সাজানো ল্যান্ডস্কেপ, অসংখ্যা ছোট ছোট দ্বীপে সাজানো কাট্টলি বিল আর বিস্তৃত জলরাশি।

কাট্টলি বিল বাজারের চারপাশে জলের সীমারেখা, বাজারের ঘাটে পাঁচ মিনিটের লঞ্চ বিরতি। সাপ্তাহিক বাজার হওয়ায় দূর-দূরান্তের বাসিন্দারা নৌকায় বোঝাই করে নিয়ে এসেছে নিজেদের চাষকরা পণ্য। দ্বীপের ছোট্ট বাজারের একপাশে শুটকি পল্লী।

কাট্টলি বাজার থেকে গরম জিলাপি কিনে খেতে আবার লঞ্চে যাত্রা শুরু।

রংরাং পাহাড়ে পথে ছুটে চলছে লঞ্চ, ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় করে মাছ ধরার প্রতিযোগিতায় নেমেছে জেলেরা। দিগন্তবিস্তৃত নীল আকাশের নিচে গভীর লেকে মাছ ধরার ছোট ছোট নৌকাগুলোকে বেশ অদ্ভুত লাগে। ছোট-বড় দ্বীপ, কোথাও কোনো লোকালয় চোখে পড়ে না। মাঝে মাঝে কেবল বিচ্ছিন্ন বসতি।

কাপ্তাই লেকের নীল ঢেউ ছাপিয়ে ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে রংরাংয়ের পথে। দুপুর নাগাদ লঞ্চ নোঙর করে শুভলং বাজারে।

শুভলং বাজারের কোল ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে রাঙামাটির রংরাং পাহাড়। অনেকে একে টিঅ্যান্ডটি পাহাড় নামে চেনেন। শুভলং ঘাটে নেমে দেরি না করে হাঁটা শুরু করলাম পাহাড়ের চূড়ার দিকে। পথ যেন শেষই হয় না। সিঁড়ির পথে ছেড়ে সরু ট্র্যাক রুট ধরে এগুতে হয় চূড়ার দিকে। সবুজে ঢাকা পথ ছুঁয়ে চলতে চলতে চোখ পড়বে কেবল বড় বড় বৃক্ষরাজি।

পাহাড়ের সরু পথ বেয়ে ওপরে উঠতেই নিচের দৃশ্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যাবে।

রংরাং পাহাড় থেকে কাপ্তাই লেক বড়ই অন্যন্য। জালের মতো বিস্তৃত আর ছড়ানো  কাপ্তাই লেকের এমন রূপ প্রথম যারা দেখবেন তারা চোখ ফেরাতে পারবেন না।

লেকের জল সীমায় ছোট বড় ডিঙি নৌকাগুলো ছোট হয়ে উঠল। এযেন পাখির চোখে দেখা।

রংরাং পাহাড়ের শাখা থেকে ছড়িয়ে থাকা শুভলং বাজারটাকে কাপ্তাই হ্রদ থেকে জেগে ওঠা নতুন দ্বীপের মতো লাগে।

আর রংরাং পাহাড়ের চূড়া থেকে দীর্ঘ জলের অরণ্য পেরিয়ে দূরের বরকলের পাহাড়ের হাতছানিটা বিস্ময় হয়ে থাকবে যে কারো হৃদয়ে।

দরকারি তথ্য:
সরাসরি বাসে ঢাকা থেকে রাঙামাটি যাওয়া যায়। বিভিন্ন পরিবহন সংস্থার এসি এবং ননএসি বাস নিয়মিত চলাচল করে। চট্টগ্রাম থেকে বিআরটিসি, পাহাড়িকা নিয়মিত রাঙামাটিতে যাতায়াত করে।

রাঙামাটি থেকে রির্জাভ বোট নিয়ে রংরাং পাহাড়ে ঘুরে আসা যায়।

সব মিলিয়ে জনপ্রতি খরচ হতে পারে সাড়ে ৪ হাজার টাকা। এছাড়া প্যাকেজ ভ্রমণেরও ব্যবস্থা রয়েছে। যোগাযোগ করতে পারেন: সিএইচটি ট্র্যাভেলস ০১৫৫৬৭১০০৪৩।

খেয়াল রাখবেন: কাপ্তাই লেক বেশ গভীর। ভালো সাঁতার জানা না থাকলে পানিতে নামবেন না। বর্ষায় প্রতিকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ নৌভ্রমণে সর্তক হবেন। লেকের স্বচ্ছ জলে কোনো প্ল্যাস্টিকের দ্রব্য ফেলবেন না।