ক্যাফেইন কথন

কফি পান করলে তরতাজা লাগে। কারণ ক্যাফেইন। আবার এই উপাদান অতিরিক্ত শরীরে গেলে মৃত্যুও হতে পারে।

নিলয়বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Feb 2016, 08:31 AM
Updated : 28 Feb 2016, 08:31 AM

স্বাস্থ্যবিষয়কএকটি ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয় ক্যাফেইন সম্পর্কে কিছু চমকপ্রদ বিষয়।

চা, কফি ছাড়াও— প্রকৃতিতে ৬০টি উদ্ভিদেরমধ্যে ক্যাফেইন পাওয়া যায়। এর মধ্যে আছে কোকোয়া বিন, যা চকলেট তৈরির মূল উপাদান।

ক্যাফেইন গ্রহণের পর কার্যকরিতা শুরুহতে সময় নেয় ১০ মিনিট— আর এর প্রভাব সবচেয়ে কার্যকর হয় ৪৫ মিনিটের মাথায়। এমনকি তিন থেকেপাঁচ ঘণ্টা পর্যন্ত শরীরে এর প্রভাব থাকে। তবে ক্যাফেইনের স্থায়িত্ব নির্ভর করে শরীরকত দ্রুত ক্যাফেইন হজম করতে পারছে তার উপর।

বয়স, জাতি ও লিঙ্গ ভেদে ক্যাফেইনের কার্যকরিতাভিন্ন হয়—সাধারণত, নারীরা পুরুষদের তুলনায় দ্রুত ক্যাফেইন হজম করতে পারে। এছাড়া ধূমপায়ীদের দেহেক্যাফেইন প্রক্রিয়াজাত হয় অধূমপায়ীদের চেয়ে দ্বিগুণ গতিতে।

ঘুম থেকে উঠেই কফি নয়— কারণ সকালে ঘুম থেকে ওঠার২০ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে দেহে কর্টিসল নামক হরমোনের আধিক্য থাকে। উচ্চমাত্রার কর্টিসলেরসঙ্গে ক্যাফেইনের সমন্বয় ক্যাফেইনের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়।

সুস্থসবল শরীরে— ক্যাফেইনের সাধারণ সহ্যসীমাদিনে চারশ গ্রাম। আর এই তথ্য দিয়েছে

যুক্তরাষ্ট্রেরমায়ো ক্লিনিক।

এস্প্রেসো কফিতে ক্যাফেইনের পরিমাণ সবচেয়েবেশি— প্রতিআউন্স এস্প্রেসো কফিতে ক্যাফেইন থাকে ৫১.৩ গ্রাম। সাধারণ কফিতে থাকে মাত্র ১৮.১ গ্রাম।কফি বিনের কারণে নয়, মূলত প্রস্তুত প্রক্রিয়ার ভিন্নতার কারণে ক্যাফেইনের মাত্রার পার্থক্যতৈরি হয়।

কফি ও গ্রিন টি দুটোই ক্যাফেইনের ভালোউৎস— দুইধরনের পানীয়তেই প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। তবে গ্রিন টি’য়ে আছে ক্যাথেচিন এবংপ্রাকৃতিকভাবে মেদ ঝরাতে কার্যকর কিছু উপাদান। তাই সব দিক থেকে বিবেচনা করলে গ্রিনটি ক্যাফেইনের ভালো উৎস।

সবচেয়ে ক্ষতিকর উৎস এনার্জি ড্রিংকস— এই ধরনের পানীয়তে উপস্থিতঅন্যান্য ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদনের কারণে এসব পানীয়ের ক্যাফেইন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

ক্যাফেইনে আসক্তি হতে পারে— কারণ ক্যাফেইন গ্রহণ করারফলে মাস্তিষ্কের অভ্যন্তরে কিছু রাসায়নিক পরিবর্তন হয়। এ থেকে মস্তিষ্কে অধিক ক্যাফেইনেরচাহিদা সৃষ্টি হয়। তাই অনেকেরই চা বা কফিতে আসক্তি জন্মায়।

অত্যধিক ক্যাফেইন গ্রহণে বিষক্রিয়া হতেপারে— এমনকিমরণও ডেকে আনতে পারে। তবে সঠিক মাত্রাটি এখনও জানা যায় নি। ধারণা করা হয়, মাত্রাটিহতে পারে প্রতি ২ দশমিক ২ পাউন্ড ওজনের জন্য দেড়শ থেকে ২শ মিলিগ্রাম মাত্রার ক্যাফেইনস্বল্প সময়ে একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে। অবশ্য এই পরিমাণ ক্যাফেইনেরজন্য প্রয়োজন ৭৫ থেকে ১০০ কাপ কফি।

অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণের ফলে ওজন বৃদ্ধিহতে পারে—কারণ অধিক ক্যাফেইন কর্টিসল নামক হরমোনের পরিমাণ বাড়ায়। কার্টিসল আমাদের শরীর নিয়ন্ত্রণেসহায়তা করলেও, এই হরমোন দেহের ওজন বৃদ্ধির জন্য দায়ী।

গর্ভাবস্থায় কফি পান নিরাপদ— তবে সেটি নির্দিষ্ট মাত্রারমধ্যে। মায়ো ক্লিনিক’য়ের তথ্য মতে, দিনে ২০০ গ্রাম কফি মা ও গর্ভের শিশুর জন্য ক্ষতিকরনয়। 

ক্যাফেইন ত্যাগ করার প্রতিক্রিয়া— অন্য অনেক মাদকের মতো ক্যাফেইনওস্নায়ুতন্ত্র প্রভাবিত করতে পারে। তাই একবার কফির ওপর নির্ভরশীল হয়ে যাওয়ার পর ছেড়েদিতে চাইলে মানসিক চাপ বেড়ে যেতে পারে। স্বস্তির বিষয় হল, সময়ের সঙ্গে এই প্রভাব কেটেযায়।

স্মৃতিশক্তি বাড়ায় ক্যাফেইন— যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্সবিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গবেষণায়, অংশগ্রহণকারীদেরকে কিছু ছবি দেখানো হয়। এর ২৪ ঘণ্টা পরদেখা যায় যারা ক্যাফেইন গ্রহণ করেছেন, তারা অন্যদের তুলনায় বেশি সংখ্যক ছবি মনে রাখতেপেরেছেন। 

হজমের ক্ষমতা বাড়ায়— গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যাফেইনগ্রহণের পরের কয়েক ঘণ্টায় দ্রুততর গতিতে হজম হয়েছে। তবে অতিরিক্ত নয়, সহনীয় পরিমাণেক্যাফেইন গ্রহণ করতে হবে।

শরীরচর্চায় সাহায্য করে ক্যাফেইন— চা বা কফি পানের পরপরই এরক্যাফেইন রক্তে অ্যাড্রেনালিন হরমোনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এই হরমোন শরীর চাঙ্গা করেতোলে। তাই ব্যায়াম শুরুর ৩০ মিনিট আগে এক কাপ কফি পান করা যেতে পারে। এতে ক্লান্তিবোধ কম হবে।

পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে-- দিনের শুরুতে ঘুম কাটাতেচা-কফি পান করার অভ্যাস অনেকেরই। তবে শুধু ঘুম কাটিয়ে চাঙ্গা করতেই নয় পাশাপাশি পেটপরিষ্কার করতেও সাহায্য করে এই পানীয়তে থাকা ক্যাফেইন।

ছবি: রয়টার্স।