শহর খাগড়াছড়ির আশপাশে

অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা এই জেলা শহরের একপাশ দিয়ে এঁকেবেঁকে বয়ে গেছে পাহাড়ি নদী চেঙ্গি। আশপাশে বেড়ানোর জন্য আছে অসামান্য সুন্দর জায়গা।

মুস্তাফিজ মামুনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Feb 2016, 11:26 AM
Updated : 26 Feb 2016, 11:26 AM

এক দিনেই বেড়িয়ে ফিরে আসা যায় শহরে।

খাগড়াছড়ি শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে নুনছড়ি এলাকার উঁচু এক পাহাড়ের চূড়ায় আছে দেবতার পুকুর। এর আরেক নাম ‘মাতাই পুখিরি’। ত্রিপুরা ভাষায় ‘মাতাই’ শব্দের অর্থ দেবতা আর পুখিরি শব্দের অর্থ পুকুর।

মহাসড়ক ছেড়ে পাহাড়ের ঢালে আঁকাবাঁকা পথে বেশ কিছুটা দুর্গম পথ পেরিয়ে পৌঁছতে হবে দেবতার পাহাড়ের নিচে। ছোট্ট একটি ঝিরিপথ পার হয়ে পাহাড়ি পথ বেয়ে উঠতে হবে উপরে। হাঁটতে হাঁটতে বিশাল উঁচু পাহাড়ের একেবারে চূড়াতেই বিশাল এই জলাধার।

স্থানীয়দের বিশ্বাস দেবতার আশির্বাদে পাহাড় চূড়ার এ পুকুরের পানি কখনও কমে না। দেবতার পুকুরের পাড়েই আছে একটি শিব মন্দির। এ মন্দির ঘিরেই প্রতিবছর চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে বসে তীর্থ মেলা।

শহর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরে মনোরম প্রাকৃতিক ঝরনা রিসাং। আলুটিলা পাহাড়কে পিছু ফেলে কিছুক্ষণ চলার পর মহাসড়ক ছেড়ে হাতের বাঁয়ে উঠতে হবে পাহাড়ি পথে। এ পথে কিছু দূর চলার পর গাড়ি রেখে হাঁটা পথ।

খাগড়াছড়িতে আলুটিলা গুহার প্রবেশ পথ।

এখানে হাঁটা পথ বেশ দুর্গম। পাহাড়ি পথ বেয়ে নিচে নামতে হবে বেশ কিছুটা জায়গা। হাঁটতে হাঁটতে পাওয়া যাবে পাহাড় কেটে বানানো রিসাংয়ে যাওয়ার পথে। বিশাল পাথুরে জায়গার এক প্রান্ত থেকে অঝোরে বইছে এই জলপ্রপাত। ঝিরি ঝিরি শব্দে পাহাড় বেয়ে বয়ে চলছে অবিরাম জলধারা। রিসাংয়ের চারপাশে পাহাড়ের নিস্তব্ধতা ভেঙে অবিরাম বয়ে চলছে রিসাংয়ের জলধারা। তবে শীতের শুরু থেকে গৃষ্ম অবধি ঝরনায় পানির প্রবাহ কম থাকে।

শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার পশ্চিমে মহাসড়কের পাশেই রয়েছে আলুটিলা পাহাড়। রিসাং থেকে ফেরার পথে সড়কের পাশেই আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের দুয়ার।

প্রায় এক হাজার ফুট উঁচু এ পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়ালে পুরো খাগড়াছড়ি শহর পাখির চোখে দেখা যায়। পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে সর্পিল ধারায় বয়ে চলা চেঙ্গী নদীর অপরূপ সৌন্দর্যও দেখা যায় এখান থেকে।

আলুটিলা পাহাড়ের প্রধান আকর্ষণ এর প্রাচীন একটি গুহাপথ। পাহাড়ের চূড়া থেকে ২৬৬টি ধাপের একটি সিঁড়ি নেমে গেছে গুহাপথের মুখে। গুহার ভেতর দিয়ে বয়ে চলছে শীতল জলধারা।

ভেতরের পিনপতন নিস্তব্ধতা ভেঙে বাদুর আর চামচিকার কিচির মিচির ওড়াউড়ি। অসাধারণ এ গুহার ভেতরও রক্ষা পায়নি আমাদের অবিবেচক পর্যটকদের হাত থেকে।

গুহার ভেতরেও তারা ফেলতে দ্বিধা করেননি চিপস কিংবা প্লাস্টিকের বোতল।

আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ১০ টাকা। এছাড়া প্রবেশ পথের টিকেট কাউন্টারেই কিনতে পাবেন বাঁশের তৈরি মশাল। প্রতিটির মূল্যও ১০ টাকা।

আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের পাশেই আছে সাংকসস নগর বৌদ্ধ বিহার। পাহাড় চূড়ায় অবস্থিত এ বৌদ্ধ মন্দির থেকে আশপাশের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। 

খাগড়াছড়িতে দেবতার পাহাড়ে দেবতার পুকুর।

খাগড়াছড়ি জেলা শহরের জিরো মাইল এলাকার পূর্ব পাশে পাহাড়ের উপরের একটি পর্যটন কেন্দ্র জেলা পরিষদ হার্টিকালচার পার্ক। পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে এখানে আছে হ্রদ, সেখানে নৌ ভ্রমণেরও ব্যবস্থা আছে।

এখানে দুই পাহাড় জোড়া লাগানো হয়েছে ঝুলন্ত সেতুর মাধ্যমে। ছোট্ট অথচ রোমাঞ্চকর এ ঝুলন্ত সেতু। পর্যটকদের চলাফেরায় সর্বদাই দোদুল্যমান থাকে এটি। কেউ কেউ ভয়ে মাঝপথে এসে থমকে দাঁড়ান।

ঝুলন্ত এ সেতু খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ পার্কের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। এছাড়াও কটেজ, বনভোজন কেন্দ্রসহ নানান আয়োজনও আছে এ পার্কে। প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ২০ টাকা।

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে সড়কপথে সরাসরি খাগড়াছড়ি যাওয়া যায়। এ পথে সেন্টমসার্টিন পরিবহনের এসি বাস চলাচল করে। ভাড়া ৯শ’ টাকা। এছাড়া  সেন্টমার্টিন, শান্তি, শ্যামলী, সৌদিয়া ইত্যাদি পরিবহনের নন এসি বাসও চলে এ পথে। ভাড়া ৫২০ টাকা। চট্টগ্রামের অক্সিজেন থেকে শান্তি পরিবহনের নন এসি বাস সরাসরি খাগড়াছড়ি যায়। ভাড়া ১৬০ টাকা।

কোথায় থাকবেন

খাগড়াছড়িতে ভালো মানের আবাসন ব্যবস্থা আছে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের ‘পর্যটন মোটেল’য়ে। শহরের আগে চেঙ্গি নদীর তীরে এ মোটেলে এসি দ্বৈত কক্ষ ২ হাজার ১শ’ টাকা, আর সাধারণ দ্বৈত কক্ষ ১ হাজার ৩শ’ টাকা।

এছাড়া খাগড়াছড়ি শহরের অন্যান্য সাধারণ মানের হোটেল হল— হোটেল শৈল সুবর্ণা, হোটেল চমক, হোটেল গাইরিং, হোটেল ফোর স্টার ইত্যাদি। এসব হোটেলে ৫শ’ থেকে ২ হাজার ৫শ’ টাকায় কক্ষ পাওয়া যাবে।

খাগড়াছড়িতে রিসাংয়ের জলধারা।

প্রয়োজনীয় তথ্য

পাহাড়ের এ পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে ভ্রমণে গিয় পরিবেশ নষ্ট করবেন না। ময়লা আবর্জনা নির্ধারিত জায়গায় ফেলুন। আলুটিলা গুহার ভেতরে দয়া করে প্লাস্টিক বর্জ্যসহ কোনো ময়লাই ফেলবেন না।

গুহায় প্রবেশের জন্য মশাল না নেওয়াই ভালো। কেননা অনেকে মশাল নিয়ে ঢুকলে ভেতরের সরু জায়গায় ধোয়ার কারণে অক্সিজেনের অভাব হয়। সেজন্য আগে থেকে হেড ল্যাম্প নিয়ে যেতে পারেন।

আলুটিলা গুহার ভেতরে একটি জায়গা বেশ সরু, তাতে ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। শিশুদের নিয়ে গুহার ভেতরে না যাওয়াই ভালো। খাগড়াছড়ি ভ্রমণে সহায়তার জন্য যোগাযোগ করতে পারেন ভ্রমণ সংস্থা সিএইচটি ট্রাভেলসের সঙ্গে। যোগাযোগ- ০১৫৫৬৭১০০৪৩, ০১৮১৫৮৫৬৪৯৭।