কাপ্তাইয়ের ঝুলন্ত গাড়ি

মাঘের সকাল হলেও প্রকৃতিতে কনকনে শীতের আমেজ নেই। হালকা কুয়াশা ঘেরা সকাল সোনাঝরা সূর্যের গোলাপি আভায় ভরপুর। প্রকৃতির বুকে শিশির ভেজা দূর্বাঘাসে ভোরের পাখিদের কলকাকলি। ঘুমন্ত শহরের চেনা সকালে রওনা হলাম কাপ্তাইয়ের পথে।

সমির মল্লিকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Feb 2016, 09:18 AM
Updated : 15 Feb 2016, 09:36 AM

পথের দু'পাশের প্রকৃতির অবগাহন। কাপ্তাইয়ের চেনা পথ, বহুবার যাওয়ার সুযোগ হয়েছে জল আর পাহাড় ঘেরা এই পথে। তবে এবারের গন্তব্য কাপ্তাইয়ের লাগোয়া দেশের দীর্ঘতম রোপওয়ে ক্যাবল কারের চড়ার স্বাদ নিতে।

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় শেখ রাসেল পার্কে দীর্ঘতম ক্যাবল কার নির্মাণ করা হয়েছে।

সকাল শেষ হতে হতে পৌঁছে যাই লিচুবাগানে। সেখানেই সকালের নাস্তা সেরে লোকাল গাড়িতে যাত্রা শুরু হল কাপ্তাইয়ের দিকে। লিচু বাগান পার হতেই স্বাগত জানাল রাঙামাটির ছোটবড় পাহাড়। বনে ঘেরা সর্পিল পথ। 

ফাইল ছবি

লিচুবাগান থেকে অনেকটা সামনে যেতেই পাহাড় ঘেরা বাঁকের বিপরীতে শেখ রাসেল এভেয়ারি পার্ক। বহুপ্রজাতির পাখি আর জানা-অজানা গাছে ঘেরা বনের চারপাশ। সবকিছু ছাপিয়ে চোখে পড়ে শেখ রাসেল পার্কের ক্যাবল কার।

ক্যাবল কারের ব্যবধানটা নিছক কম প্রায় ২.৫ কিলোমিটার। বাংলাদেশের দীর্ঘতম ক্যাবল কার। দেরি না করে উঠে পড়লাম। কাচের গ্লাসে ঘেরা সবুজ ছোট্ট কারগুলো, প্রতিটিতে ছয়জন বসতে পারে।

ক্যাবল কারে যাত্রা করার প্রথম কয়েক মিনিটে ভয় জাগে মনে। কিছুক্ষণ পরে মনে হয় সত্যিই এক অভূতপূর্ব অনুভূতি।

ক্যাবল কারে শুরুতে ছোট কৃত্রিম লেক পারি দিয়ে উপরের দিকে এগুতে থাকে, ক্রমশ উপরের দিকে উঠতে থাকে। দীর্ঘকায় লোহার পিলারের সঙ্গে বাঁধা ক্যাবল কার এবার পাড়ি দিচ্ছে সবুজ বনানী। নিচে চোখ যেতেই মনে হল প্রায় ৮০ থেকে ৯০ ফুট নিচে জঙ্গলে ভরা।

জঙ্গল, দূরের ধান ক্ষেত, পাহাড় আর লেক সব কিছু বেশ অদ্ভুত দেখাচ্ছে। বিরামহীন যাত্রা, যেন শেষই হচ্ছে না। নিচে তাকালেই কিছুটা ভয়ও উঁকি দেয়।

পুরোটা চক্কর দিয়ে আসতে সময় লাগে প্রায় ২০ থেকে ২৫ মিনিট। ক্যাবল কার থেকেই নেমে যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। উত্তেজনায় আর রোমাঞ্চে ভরপুর। দেশের মধ্যেই এমন ক্যাবল কার ভ্রমণ শেষ করে রওনা হলাম পুরো পার্কটা ঘুরে দেখতে।

বেশ বড় পার্কটি ঘুরে দেখতে সময় লাগে প্রায় ঘণ্টাখানেক।

পার্ক থেকে বের হয়ে রওনা হলাম কাপ্তাইয়ের দিকে, শুক্রবার হওয়ায় প্রচুর পর্যটকের আগমন। ভাড়ায় চালিত সিএনজি করে যাত্রা করলাম পাহাড়ি পথ ধরে, কাপ্তাইয়ের রাস্তা খাড়া না হলেও বেশ আঁকাবাঁকা। মাঝপথে কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান। উদ্যানের মাঝখানে বয়ে গেছে কাপ্তাইয়ের পিচঢালা সড়ক। বনের দু'পাশে অপরিচিত সব গাছ, পাখিদের নিয়মিত বিচরণ। অপরিচিত পাখির ডাক কানে আসে।

হঠাৎ চোখে পড়ে গাছের ডাল থেকে নেমে আয়েশি ঢংয়ে রাস্তা পার হচ্ছে মুখ পোড়া হনুমানদ্বয়। জাতীয় উদ্যানের বনে ঘেরা মসৃণ পথ শেষ করে দুপুর নাগাদ পৌঁছাই কাপ্তাইয়ের কোল ঘেষা নতুন বাজারয়ে। দুপুরের পেটপূজা সেখানেই শেষ করে যাত্রা করলাম জলের দেশ বিলাইছড়ির পথে।

কাপ্তাই জেটি থেকে রির্জাভ দেশি বোট নিয়ে বিলাইছড়ির দিকে যেতে হয়।  লেকের নীল রাশির স্রোতে ঢেউ কেটে কেটে পথ চলেছি। জলের পাড় ঘেঁষা পাহাড়ি বসতি।  বেলিরভাগই বিচ্ছিন্ন বসতি।

চারপাশে গড়ে উঠেছে ছোট ছোট দ্বীপ গ্রাম। জলের গ্রামে পেরিয়ে যেতে যেতে চোখে পরে কাপ্তাই লেকের বর্ণিল মানচিত্র। কোথাও পথ মিশেছে সরু খালে, কোথাও হ্রদ সমুদ্রসম বিশালতায় পূর্ণ।

পাহাড় বেয়ে সূর্যের সোনালি রংয়ের ছটায় কাপ্তাই লেকের নীল জল ক্রমশ লাল রং ধারণ করে। জল আর সূর্যের বিচিত্র সংমিশ্রণ দেখতে দেখতে বিলাইছড়ি পৌঁছাই দিনের শেষে বেলায়।

প্রয়োজনীয় তথ্য: ক্যাবল কারে ভ্রমণ স্বাদ নিতে হলে যেতে হবে কাপ্তাই। ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে করে কাপ্তাই পৌঁছানো যায়। কাপ্তাই অথবা লিচুবাগান থেকে ভাড়ায় চালিত গাড়িতে ইকো পার্ক যেতে হবে। তবে বিলাইছড়ি যেতে হবে রির্জাভ দেশি নৌকায় করে।

প্যাকেজে ভ্রমণ: ক্যাবল কার ভ্রমণসহ, কাপ্তাই-বিলাইছড়িতে নিয়মিত ভ্রমণ পরিচালনা করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম ভিত্তিক ভ্রমণ সংস্থা সিএইচটি ট্র্যাভেলস। ঢাকা থেকে শুরু করে তিন রাত দুই দিনের ভ্রমণে বাসের টিকিট, কাপ্তাইয়ে রির্সোটে রাত যাপন, বেড়ানোর সকল খরচ, খাবার, প্রবেশ মূল্যসহ জনপ্রতি খরচ ৪ হাজার ৫শ’ টাকা। যোগাযোগ: ০১৫৫৬-৭১০০৪৩, ০১৮১৫-৮৫৬৪৯৭

খেয়াল রাখবেন: ইকো পার্কে চিপস কিংবা কোন প্লাস্টিকজাতীয় দ্রব্য ফেলবেন না। কাপ্তাই লেক বেশ গভীর। ভালো সাঁতার জানা না থাকলে লেকের পানিতে নামবেনদ না।