ভার্টিকাল গার্ডেন কী
এটা একটা বাগান করার একটা পদ্ধতি। এখানে কয়েকটি ধাপ বা তলায় একটি গাছের উপর আরেকটি গাছ লাগিয়ে একটা লম্বালম্বি বাগান করা হয়। কীভাবে এই পদ্ধতিতে বাগান করবেন তাই জানিয়েছেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. এ.এফ.এম জামাল উদ্দিন।
ধাপ তৈরি: ভার্টিকাল গার্ডেনিংয়ের সবচেয়ে জরুরি বিষয় হচ্ছে ধাপ তৈরি। একটি গাছের উপরে আরেকটি গাছ লাগানো বিষয়টি শুনতে একটু অসম্ভব মনে হতে পারে, অনেকেই ভাবতে পারেন গাছ লাগাতে মাটি লাগে, সার লাগে। আরেকটা গাছের উপরে কীভাবে এগুলো স্থাপন করা যাবে।
তবে বিষয়টি খুবই সহজ। ধরুন আপনার বাসায় বারান্দায় একটা টবে একটা গাছ বড় হচ্ছে। ঠিক তার উপরেই আপনি ছোট একটা পাত্রে আরেকটা গাছ ঝুলিয়ে দিলেন। এটিও একটি ভার্টিকাল গার্ডেন।
গুলশান-১য়ের ডিএনসিসি (ঢাকা নর্থ সিটি কর্পোরেশন) মার্কেটের ঠিক পাশে স্টাইল শেল নামের একটা দোকানের দেওয়ালে দেখবেন টিনের পাত দিয়ে একটার উপরে আরেকটা পকেটের মতো করে একটা পাত্র বানানো হয়েছে। সেই পাত্রে বোনা হয়েছে কিছু মানি প্ল্যান্ট গাছ। এটিও একটি ভার্টিকল গার্ডেন। বনানী-১১’র আড়ং’য়ের জানালার কাছে কার্নিশ জুড়েও এমন ভার্টিকল গার্ডেন দেখতে পাবেন।
বেশ কয়েক বছর ধরে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা করার স্থান কম হওয়ার কারণে পিভিসি পাইপ কেটে, একটির উপরে আরেকটি পাইপ ঝুলিয়ে ভিতরে স্ট্রবেরির চাষ করা হয়েছিল। এতে অনেক বেশি চাষ করা তো সম্ভব হয়েছিলও পাশাপাশি স্ট্রবেরিতে পোকামাকড়ের উপদ্রপ কম হয়েছে।
মেঝেতে গাছ রাখা সমস্যা হলে বারান্দার গ্রিলে একটার উপরে আরেকটি টব ঝুলিয়ে ভার্টিক্যাল গার্ডেন করা যায়। টবের বদলে যদি মগের মধ্যে গাছ বুনতে পারেন তাহলে মগের হাতলটা গ্রিলে ঝুলিয়ে দিতে পারবেন, সুবিধা মতো স্থান পরিবর্তনও করার ক্ষেত্রেও কোনো বাধা থাকবে না।
মাটি স্থাপন: উলম্ব বাগানের গাছ প্রতি মাটি খুব কম রাখা যায়। পানিও কম ধরে রাখতে পারে। এরকম অবস্থায় মাটি যতটা সম্ভব উর্বর হওয়া প্রয়োজন। তাই দোআঁশ মাটি এবং কম্পোস্ট সারের ১:১ মিশ্রণ অথবা সম্পূর্ণটুকু কম্পোস্ট সার দিয়েই করতে পারে। তবে কোনো গাছ যদি বেলে দোআঁশ মাটিতে চাষ করার উপযোগী হয় তবে তাতে সেই মাটিই দিতে হবে।
পানি প্রদান: ভার্টিকল গার্ডেনিংয়ের পাত্র ছোট হওয়ায় পানি কম ধরে রাখতে পারে। মাটি সহজেই শুকিয়ে যায়, তাই এই গাছগুলোতে নিয়মিত দুইবেলা পানি দিতে হবে।
গাছ নির্বাচন: ভার্টিকল গার্ডেনিংয়ের ক্ষেত্রে গাছ অবশ্যই বিরুৎজাতীয় হতে হবে। কেননা, এইখানে গাছ বোনার জায়গা, মাটি সবই বেশ কম থাকে। তা ছাড়াও একটির উপরে আরেকটি গাছ বোনা হলে উপরের দিকের গাছগুলোর ভর যত কম হবে ব্যবস্থাপনা তত সহজ হবে।
এ ক্ষেত্রে যে কোনো এক বর্ষজীবী বা দ্বিবর্ষজীবী বিরুৎ লাগাতে পারবেন। পিটুনিয়া, ডুরাফ মর্নিং গ্লোরি, ফার্ন, মানি প্ল্যান্ট, অর্কিড, স্ট্রবেরি, পুদিনাপাতা, ধনেপাতা ইত্যাদি গাছ এই ব্যাবস্থাপনায় ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারবে।
ছবি: দিপ্ত।