ফয়’স লেকে ভ্রমণ

চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এলাকার প্রকৃতির মাঝে অনন্য সুন্দর একটি পর্যটন কেন্দ্র ফয়’স লেক। ছোট ছোট পাহাড় আর টিলার বাঁকে বাঁকে বিস্তৃত এই পর্যটন কেন্দ্র।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Jan 2016, 11:03 AM
Updated : 3 Jan 2016, 01:39 PM

চট্টগ্রামের পানি সমস্যার সমাধানে ১৯২৪ সালে প্রায় ৩৩৬ একর জায়গায় কৃত্রিম এ হ্রদ খনন করেছিল আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কর্তৃকপক্ষ। দীর্ঘ সময় অযত্নে পড়ে থাকায় একসময় জৌলুশ হারাতে বসে প্রাচীন এই লেক। ফয়’স লেকের প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ২০০৫ সালে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে আধুনিক অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ও রিসোর্ট।

চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর খুলশী এলাকার প্রধান সড়কের পাশে ফয়’স লেকের তোরণ। সেখান থেকে কিছুটা ভেতরে এর মূল প্রবেশ পথ। শুরুতেই ফয়’স লেকের অ্যামিউজমেন্ট ওয়ার্ল্ড।

বেশ কিছু আধুনিক রাইড আছে এখানে। সার্কাস সুইং, বাম্পার কার, বাম্পার বোট, ফ্যামিলি রোলার কোস্টার, জায়ান্ট ফেরিস হুইল, ড্রাই স্লাইড, ফ্যামিলি ট্রেইন, প্যাডেল বোট, ফ্লোটিং ওয়াটার প্লে, পাইরেট শিপের মতো মজাদার সব রাইড।

এখান থেকে উপরে টিলায় আছে বনভোজন কেন্দ্র। সেখান থেকে আরেকটি টিলার উপরে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। চট্টগ্রাম শহরের বার্ডস আই ভিউ দেখা যায় জায়গাটি থেকে।

অ্যামিউজমেন্ট ওয়ার্ল্ডের উত্তরে টিলার উপরে মূল ফয়’স লেক। লেকের দুইপাশে সবুজে ঘেরা উঁচু উঁচু পাহাড়। পাহাড়গুলোর নাম রাখা হয়েছে আসমানী, গগনদ্বীপ, জলটুঙ্গি ইত্যাদি। এসব পাহাড়েরর আছে সংরক্ষিত বন, সে বনে খেলা করে চিত্রা হরিণ, খরগোশ আরো কিছু বন্যপ্রাণী।

ফয়স লেকে অ্যামিউজমেন্ট পার্ক।

ফয়’স লেকে ভ্রমণেরও ব্যবস্থা আছে এখানে। বিভিন্ন আকারের আকারের ইঞ্জিন চালিত নৌকা, স্পিড বোট আর চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাম্পানও আছে লেকে।

ফয়’স লেকের ভিন্ন এক জগত সি ওয়ার্ল্ড। লেকের শেষ প্রান্তে গড়ে তোলা হয়েছে পানির রাজ্যে রোমাঞ্চকর জায়গা।

শহরের সিটি গেট সংলগ্ন সড়ক দিয়ে গেলে সরাসরি প্রবেশ করা যাবে সি-ওয়ার্ল্ডে। তবে মূল প্রবেশ পথে সি- ওয়ার্ল্ডে গেলে নৌকায় চড়ে পৌঁছুতে হয় সি ওয়ার্ল্ডে। আধুনিক ওয়াটাপার্কের বিভিন্ন রাইড আছে জায়গাটিতে।

প্রকৃতির মাঝে নির্জনতায় অবকাশ যাপনের জন্য ফয়’স লেকে আছে বেশ কিছু রিসোর্ট। সি-ওয়ার্ল্ডের পাশেই এর অবস্থান। রিসোর্টেও যেতে হয় নৌকায় চড়ে। নির্জনতায় সময় কাটানোর জন্য আদর্শ জায়গা এসব রিসোর্ট।

লেক ও পাহাড়মূখী দু ধরণের ঘরই আছে এখানে। বারান্দায় বসে লেক আর পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগের ব্যবস্থা আছে এখানে। মধুচন্দ্রিমার জন্যও এখানকার রিসোর্ট আকর্ষণীয় জায়গা।

খরচাপাতি

ফয়’স লেক ‍রিসোর্ট।

ফয়’স লেকে ছোট মাছরাঙ্গা।

ফয়’স লেকের অ্যামিউজমেন্ট ওয়ার্ল্ডের সাধারণ প্রবেশমূল্য ২৫০ টাকা। তিন ফুটের চেয়ে কম উচ্চতার শিশুদের প্রবেশ মূল্য লাগে না। এখানকার বিভিন্ন রাইডে চড়ার আলাদা আলাদা মূল্য রয়েছে। তবে প্রবেশ ও সব রাইডের বিশেষ প্যাকেজও আছে। বনভোজন দলের জন্য খাবারের আয়োজনসহ বিশেষ মূল্যও আছে ফয়’স লেকে। ফয়’স লেকের রিসোর্টের কক্ষ ভাড়া ৪,৯৩৫ থেকে ১০,৫০৮ টাকা। এছাড়া বাংলোর কক্ষ ভাড়া ৫,৫৬৩ থেকে ৯,৮৯০ টাকা। যোগাযোগ ০৩১-২৫৬৬০৮০।

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে সড়ক, রেল ও আকাশ পথে যেতে পারেন চট্টগ্রাম শহরে। ঢাকার বাসগুলো সাধারণত শহরে প্রবেশ করে ফয়’স লেকের সামনের সড়ক থেকেই।

এছাড়া চট্টগ্রাম শহরের যে কোনো জায়গা থেকে খুব সহজেই ফয়’স লেক যাওয়া যায়।

ঢাকা থেকে সড়কপথে টি আর ট্রাভেলস, দেশ ট্রাভেলস, গ্রিনলাইন পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, সৌদিয়া পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজের এসি বাস যায় চট্টগ্রামে। ভাড়া ৯৫০ থেকে ১,২৫০ টাকা। এছাড়া এস আলম, সৌদিয়া, ইউনিক, শ্যামলী, হানিফ, ঈগল প্রভৃতি পরিবহনের সাধারণ মানের নন এসি বাসও চলে এ পথে। ভাড়া ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা।

চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে ফয়’স লেক।

রেল পথে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের পথে মহানগর প্রভাতী ঢাকা ছাড়ে সকাল ৭ টা ৪০ মিনিটে, চট্টলা এক্সপ্রেস সকাল ৯টা বিশ মিনিটে, মহানগর গোধুলী ঢাকা ছাড়ে বিকেল ৩ টায়, সুবর্ণ এক্সপ্রেস ঢাকা ছাড়ে বিকেল ৪ টা ২০ মিনিটে, তূর্ণা ছাড়ে রাত এগারোটায়।

শ্রেণি ভেদে ভাড়া ১৩৫ থেকে ১,০৯৩ ভাড়া। এছাড়া ঢাকা থেকে বাংলাদেশ বিমান, ইউএস বাংলা এয়ালাইন্স, নভো এয়ার, রিজেন্ট এয়ার ও ইউনাইটেড এয়ারের বিমান যায় চট্টগ্রামে।