পানি বিশুদ্ধকরণ

শুধু বিশুদ্ধ করলেই হয় না, সঠিকভাবে পানি সংরক্ষণের জন্যেও বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হয়।

তৃপ্তি গমেজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Oct 2015, 10:52 AM
Updated : 28 Oct 2015, 10:52 AM

পানি বিশুদ্ধকরণ ও সংরক্ষণ প্রসঙ্গে কথা বলেন বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের গৃহব্যবস্থাপনা ও গৃহায়ন বিভাগের প্রভাষক শারমিন সুলতানা।

তার মতে, পানি পরিচ্ছন্ন রাখা যতটা সহজ বিশুদ্ধ করা ততটা সহজ নয়।

নানা রকম ময়লা ও রোগ জীবাণু মিশে পানিকে দূষিত করে। তাছাড়া পানিতে ভাসমান ময়লা, বিষাক্ত গ্যাস ও রোগজীবাণু সম্পুর্ণভাবে অপসারণ করা না গেলে বিশুদ্ধ করা সম্ভব নয়।

পানি বিশুদ্ধকরণের নানা উপায় সম্পর্কে পরামর্শ দেন তিনি।

ফুটানো: ফুটিয়ে পানি বিশুদ্ধ করা যায়। উচ্চতাপে ১০/২০ মিনিট পানি ভালোভাবে ফুটাতে হবে। ফলে পানিতে থাকা রোগজীবাণু ধ্বংস হয়ে যায়, ধাতব লবণ থিতিয়ে পড়ে ও দ্রবীভূত গ্যাস বের হয়ে যায়।

পানির সর্বোচ্চ বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করার জন্য ফুটানোর পরে ফিল্টার ব্যবহার করতে হবে। ফিল্টার যদি না থাকে তাহলে পানি পান করার আগে কয়েক স্তর পুর বিশিষ্ট ছাঁকনি দিয়ে তা ছেঁকে নিতে হবে।

ছাঁকন পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে দরকার গকে চারটি কলস বা মাটির চারি। চারি হচ্ছে মাটির তৈরি বড় বোল বা গামলা।

চারটি কলস বা চারি উপর নিচ করে সাজাতে হয়। প্রথমে কলসে সাধারণ পানি দেওয়া হয়। দ্বিতীয় কলসে বালু ও তৃতীয় কলসে নুড়ি পাথর রাখতে হয়। বালি ও নুড়ি পাথরে পানি পরিশোধিত হয়ে চতুর্থ কলসে পড়ে। সাধারণত গ্রামাঞ্চলে এই পদ্ধতিতে পানি বিশুদ্ধ করা হয়।

পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট:
নানা রকম ট্যাবলেট ব্যবহার করে পানি বিশুদ্ধ করা যায়। এর মধ্যে হ্যালোজেন অতি পরিচিত ট্যাবলেট। প্রতি তিন লিটার পানিতে একটি ট্যাবলেট গুলিয়ে রেখে দিলে এক ঘণ্টা পর তা থেকে বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যায়।

পটাশ: ২৪ লিটার পানিতে এক গ্রাম পটাশ মিশিয়ে ছয় ঘণ্টা রেখে দিলে সেই পানি বিশুদ্ধ হয়ে যায়।

ফিটকিরি: সামান্য পরিমাণ ফিটকিরি পানিতে মিশিয়ে ছয় ঘণ্টা অপেক্ষা করে তা থেকে বিশুদ্ধ পানি পাওয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে পাত্রের উপর থেকে পানি সংগ্রহ করতে হবে ও তলানি ফেলে দিতে হবে।

আয়োডিন: প্রতি লিটার পানিতে দুই শতাংশ আয়োডিনের দ্রবণ মিশিয়ে এত ঘণ্টা রেখে পানি বিশুদ্ধ করা যায়।

শহরে যে ট্যাপের পানি পাওয়া যায় তা মূলত ব্লিচিং ও ক্লোরিন দিয়ে পরিশোধিত করা হয়। যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চুল পড়া ও ত্বক খসখসে হয়ে যাওয়ার জন্য দায়ী। এছাড়াও যে হাঁড়িতে পানি ফুটানো হয় তার তলায় অনেক সমর শক্ত আস্তরণ পড়তে দেখা যায় এটি ক্লোরিন ও ব্লিচিংয়ের জন্য হয়ে থাকে।  

শারমিন বলেন, “এই পদ্ধতিতে পরিশোধিত পানি ত্বক ও চুলের জন্য ক্ষতিকার হলেও শহরাঞ্চলের জন্য পানি বিশুদ্ধ করার অন্য কোনো সহজ উপায় নেই। তাই বলবো এই পানি ভালো ভাবে ফুটিয়ে ও ছেঁকে পান করার উচিত।”

পানি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে তিনি বলেন, “যদি প্রাকৃতিক পানি সরাসরি সংরক্ষণ করতে হয় তবে যতটা সম্ভব সুর্যের আলো থেকে দূরে রাখতে হবে।”

বৃষ্টির পানি:
যেসব অঞ্চলে পানি সহজলভ্য নয় সেখানে বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি জমা করে রাখা হয়। এক্ষেত্রে বৃষ্টি শুরু হওয়ার ১০ মিনিট পর থেকে পানি সংগ্রহ করতে হবে। পরিষ্কার পাত্রে পানি সংগ্রহ করা উচিত। এই পানি বেশি দিন সংরক্ষণের জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সুর্যের আলো থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে। পরে ব্যবহারের আগে তা ভালো মতো ছেঁকে ব্যবহার করা যাবে।

আর “ফুটানো পানির ক্ষেত্রে তা ভালো ভাবে ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে মাটির পাত্রে বা কলসে সংরক্ষণ করলে অনেকদিন পর্যন্ত তা ভালো থাকে। প্লাস্টিকে পানি রাখলে তার নিচে তলানি জমে ও পান করার অযোগ্য হয়ে যায়।” বললেন শারমিন সুলতানা।

অনেক ব্যস্ততার ভিড়ে পানি বিশুদ্ধতার দিকে আলাদাভাবে নজর দেওয়া হয় না তাই তিনি বিসিএসআইআর’য়ের উদ্ভাবিত রাসায়নিক পদার্থভিত্তিক ফিল্টার যা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে স্বীকৃত এমন ফিল্টার ব্যবহারের পরামর্শ দেন।

এছাড়াও বাজারে নানা রকমের টাইমার যুক্ত পানি পরিশোধক যন্ত্র পাওয়া যায় তা ব্যবহারের মাধ্যমেও বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যায় এটি নিরাপদ ও ঝামেলা মুক্ত বলে মত দেন এই প্রভাষক।

ছবি: রয়টার্স।