আগা ফাটা চুলের যত্ন

পাশাপাশি দরকার প্রতিরোধ ব্যবস্থা।

মরিয়ম সেঁজুতিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Oct 2015, 11:19 AM
Updated : 8 Oct 2015, 11:19 AM

এই বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন আকাঙ্ক্ষা’স গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ডের কর্ণধার অ্যারোমা থেরাপিস্ট জুলিয়া আজাদ।

চুলের আগা একবার ফেটে গেলে, তা স্বাভাবিক রূপে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয় না। তাই চুলের যে অংশটুকু ফেটে গেছে সেই অংশ কেটে ফেলতে হয়। তারপর নিতে হয় প্রতিরোধ ব্যবস্থা।

চুলের আগা ফাটার সবচেয়ে কার্যকর সমাধার হল, তেল। তেল চুলে পুষ্টির জোগান দেয়। তাই নিয়মিত চুলে তেল দিতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা সবাই সাধারণত নারিকেল তেল ব্যবহার করে থাকি। এছাড়াও জলপাই-তেল, বাদাম-তেল বা তিলের-তেল ব্যবহার করা যায়।

এসময় তেল খুব ভালোভাবে মাথার ত্বকে মালিশ করার পাশাপাশি চুলেও লাগাতে হবে। ভালো ফলাফল পেতে সপ্তাহে তিনদিন তেল লাগানো উচিত।

চুলের রুক্ষভাব কমাতে এবং আগা ফেটে যাওয়ার প্রবণতা রোধ করতে, প্রতিদিন শ্যাম্পু করা বাদ দিতে হবে। কারণ চুল ধোয়ার ফলে, মাথার ত্বকের তেলও ধুয়ে যায়। তাই সপ্তাহে দুই থেকে তিনবারের বেশি শ্যাম্পু করা উচিত নয়।

শ্যাম্পুর রাসায়নিক উপাদানও চুলের ক্ষতির কারণ হতে পারে। আর শ্যাম্পু ব্যবহারের ক্ষেত্রে, শ্যাম্পুতে সালফেটের পরিমাণ লক্ষ করতে হবে। সালফেট হল ডিটারজেন্ট তৈরির প্রধান একটি উপাদান যা প্রচুর ফেনা তৈরি করে।

সালফেট চুলের কিউটিকলের আদ্রর্তা কেড়ে নেয়। ফলে রুক্ষ ও নিষ্প্রাণ হয়ে চুলের আগা ফাটার পরিমাণও বেড়ে যায়। হারবাল শ্যাম্পুতে সাধারণত সালফেট থাকে না অথবা কম পরিমাণে থাকে। তাই চুল ধোয়ার জন্য হারবাল শ্যাম্পু বেছে নেওয়া ভালো।

মনে রাখতে হবে:

- বারবার শ্যাম্পু করলে চুলের ক্ষতি ছাড়া উপকার হয় না। চুলের সঠিক পরিচর্যা করার জন্য ভালো ব্র্যান্ডে আয়ুর্বেদিক শ্যাম্পু ব্যবহার করা ভালো।

- শ্যাম্পু করার পর যে পানিতে মাথা ধোয়া হয় তাও অনেক সময় ক্ষতি করে চুলের। বিশেষ করে পানির ক্লোরিন এর জন্য দায়ী। এই ক্লোরিন যুক্ত পানি প্রতিদিন ব্যবহারের ফলে চুলের ডগা ফেটে যায়। তাই এই পানি ব্যবহারের আগে পানিকে যদি সম্ভব হয় ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে নেবেন। বাইরে বের হলে সূর্যের তাপ যেন চুলের ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য সহজ সমাধান ছাতা ব্যবহার করা।

- চুলের আগা ফেটে গেলেই বুঝতে হবে চুলের প্রচণ্ড ক্ষতি হয়েছে। এক্ষেত্রে চুলের আগা কেটে ফেলার চেষ্টা করবেন। আগা কাটার একটি নির্দিষ্ট নিয়ম আছে এবং সেটা দক্ষ হাতেই করতে হবে। এ ধরনের হেয়ার কাটকে স্পিটেন্ট কাট বলে। এ হেয়ারকাটে চুল কখনই ছোট হবে না। শুধু মাত্র নির্দিষ্ট নিয়মের মাধ্যমে চুলের ফাটা আগাগুলো আলাদা করে কেটে দেওয়া হয়। এই একটা কাটিং চুলের পুরানো উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে দিতে সক্ষম। এছাড়া চুলের রুক্ষতাও কমে যাবে এবং চুল পরার হাত থেকেও রেহাই পাওয়া যায়।

বাড়তি যত্ন

* নিয়মিত চুলে ব্রাশ করুন। ধীরে ধীরে চুল আঁচড়ান। খেয়াল রাখুন আঁচড়ানোর সময় চুল যেন না ছিড়ে।

* হেয়ার স্প্রে বেশি ব্যবহার করবেন না।

* প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন যুক্ত খাবার খান। খাদ্যে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ভিটামিস সি ভিটামিন ই যেন অবশ্যই থাকে।

* রুক্ষ চুলে শ্যাম্পু করার অন্তত এক ঘণ্টা আগে তেল লাগান। শ্যাম্পু করার পর গোড়া বাদ দিয়ে কন্ডিশনিং করতে ভুলবেন না।

* চুল প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০ বার ব্রাশ করুন। এতে রক্ত সঞ্চালন ভালো হবে ও চুল চকচকে হবে। শ্যাম্পু করার পর অবশ্যই ব্যবহৃত ব্রাশ, চিরুনি পরিষ্কার করে নিন।

* অনেক বেশি জেল চুলের ক্ষতি করে।

ঘরোয়া উপায়

প্রয়োজন হবে এক কাপ ঘন দুধ, দুটি ডিম, কয়েক ফোঁটা নারিকেল তেল।

দুধে ডিম মেশান। সাদা ফেনা বের হলে কয়েক ফোঁটা নারিকেল তেল মিশিয়ে চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত লাগিয়ে এক ঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু করুন। চাইলে একটু উষ্ণ গরম পানি দিয়ে প্রথমে ধুয়ে নিয়ে তারপর সাধারণ তাপমাত্রার পানি দিয়ে শ্যাম্পু করে কন্ডিশনিং করুন।  

ধীরে ধীরে চুলের আগা ফাটার সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।

চুলের আগা ফাটা রোধ করতে একটি প্যাকও ব্যবহার করা যায়। প্যাকটি তৈরি করতে, একটি ডিমের কুসুম, তিন টেবিল-চামচ অলিভ অয়েল এবং এক টেবিল-চামচ মধু মিশিয়ে চুলে লাগান।

একটি শাওয়ার ক্যাপ কিংবা কাপড় দিয়ে চুল ৩০ মিনিট ঢেকে রাখুন। এরপর মৃদু শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুতিন দিন ব্যবহার করুন এই মাস্ক। চুলে আগা ফাটা দূর হবে।

প্রতীকী ছবির মডেল: পাপড়ি। ছবি: আসাদুজ্জামান প্রামানিক।