উপরের পরিবেশের সঙ্গে নিচের পরিবেশের কোনো মিল নেই। রোমাঞ্চপ্রিয়দের ঘোরার জন্য হতে পারে আদর্শ জায়গা।
সাজেকে বেড়াতে এসে ‘ট্যাকিং টিম’গুলো একবার ঘুরে আসে কংলাক ঝরনায়। তবে অল্প কদিন হল এখানে আসা যাওয়া করছেন ভ্রমণ প্রিয়রা।
সাজেকে অনেকবার যাওয়া হলেও কংলাক ট্রেইলে পা বাড়ানো হল এ্ই প্রথমবার।
আশ্বিনের দুপুর, পথজুড়ে কাশবনের সাদা মায়া। পাহাড়ের গায়ে কেবল সবুজ আর হলুদ জুমক্ষেতের দৃশ্যপট। শরতে নীল আকাশের সাদা মেঘের দৃশ্য নিয়মিতই ক্যামেরা বন্দি হয়।
দুপুর নাগাদ সাজেকে পৌঁছে খাবার আয়োজন শেষ করলাম রুইলুই পাড়ায়। সেখান থেকে কড়কড়ে রোদ মাথায় নিয়ে রওনা কংলাক ঝরনার পথে।
পুরোটা পথ এখনও বন্য! সুর পথটা ক্রমাগত জঙ্গলে ঢেকে যাচ্ছে। কোনো রকমে পা ফেলে ফেলে পথ শেষ করতে হচ্ছে। পুরোটা পথ ঘন জঙ্গল আর প্রাচীন বৃক্ষে ঢাকা। বড় বড় লতা দেখে যে কারও মনে পড়ে যাবে টারজানের গল্প।
পাহাড় বেয়ে পুরোটাই নামার পথ। ক্রমশ নামছি। এত দিন সাজেকের উঁচু পাহাড় থেকে নিচের ভ্যালির জমানো মেঘের সৌর্ন্দয্য দেখতাম। এসব পথে সারাটা সকাল মেঘের আনাগোনা। এবার সেই পথেই হাঁটছি।
উপর থেকে যতটা মসৃণ মনে হত, ততই বন্ধুর মনে হল এই পথে হাঁটতে এসে। দলের অধিকাংশ সদস্য পাহাড়ি ট্রেইলে নতুন হওয়ায় পথ চলতে বেশ কষ্ট হচ্ছিল। অচেনা বুনো পরিবেশে ট্রেকিং করে নিচে আসার পর মিলল শীতল জলের ঝিরি পথ।
অন্যসব ঝিরির মতো এ্টাও পাথরে ঠাঁসা। দীর্ঘ পথ পাহাড় বেয়ে নামার পর এমন ঝিরিটা সবার মধ্যে কিছুটা বিশ্রামের সুযোগ করে দিল। দুটো পাহাড়ের মাঝখানে বয়ে যাওয়া ঝিরির পথে ধরে কিছুদূর হেঁটে গেলাম। আরও সামনে ছোট–বড় পাথর ডিঙিয়ে পানির স্রোত বয়ে যাচ্ছে উপর থেকে অনবরত। নিঃশব্দের পাহাড়জুড়ে ঝিরির এমন পথ চলা সত্যিকারের বন্য স্বাদ এনে দেয় প্রকৃতিতে।
ঝিরিতে বিশ্রাম সেরে আবার পাহাড়ের ধরে উঠতে হবে। দুপাশে জঙ্গল ঘেরা গভীর খাড়া পথ বেয়ে উঠছি। কিছুদূর যেতেই কানে আসল ঝরনার তীব্র আওয়াজ। সেই শব্দ হাঁটার গতি যেন বাড়িয়ে দিল। উঁচুনিচু পাহাড় বেয়ে নামতেই বড় পাথর ডিঙিয়ে চোখ পড়ে দীর্ঘ ঝরনার দিকে।
উঁচু পাহাড়ে খাঁজ বেয়ে উপর থেকে দুভাগে পড়ছে ঝরনা। তীব্র শব্দ ঘিরে রেখেছে এই অচেনা পরিবেশ। সুনসান নীরব পাহাড়ের মধ্যে একমাত্র শব্দ যেন এই জলের ধারা। অনবরত উপর থেকে বয়ে আসা এ্ই পানির স্রোত বন্দি করে নিল সবার নজর।
পৃথিবীর আলো এখানে খুব কমই পড়ে বলে মনে হয়। বিকেল হতে হতে আলো যেন বিদায় জানাতে থাকলো ঝরনার উপর থেকে। পাহাড়ের দেয়াল আটকে দিচ্ছে সূর্যের আলোকরশ্মি।
আলোর আয়ুষ্কাল শেষ হওয়ার আগেই এই দীর্ঘ ঝরনাকে পেছনে ফেলে রওনা হলাম পাড়ার দিকে। ফিরতে ফিরতে মনে উঁকি দিচ্ছিল একটা্ই প্রশ্ন— আরও কত কত এমন ঝরনা, ক্যাসকেইড, বুনো ট্রেইল, ঝিরির পথ, ছোট ছোট খাল জালের মতো ছড়িয়ে আছে বাংলাদেশের এই উপত্যকায়!
যেভাবে যাবেন
প্রথমে যেতে হবে সাজেক। ঢাকা থেকে বিভি্ন্ন বাস সার্ভিস যেমন- শান্তি পরিবহন, বিআরটিসি (এসি বাস), সেন্ট মার্টিন (এসি বাস), শ্যামলী, সৌদিয়া, ঈগল, এস.আলমে সরাসরি খাগড়াছড়ি এবং দিঘীনালা যাওয়া যায়। ভাড়া ৫৮০ টাকা (খাগড়াছড়ি) ৬০০ টাকা (দিঘীনালা )।
চট্টগ্রাম থেকে প্রতি একঘণ্টা পর শান্তি পরিবহনের গাড়ি ছাড়ে। ভাড়া পরবে ১৯০ টাকা। তাছাড়া চট্টগ্রাম থেকে লোকাল বাসেও যাওয়া যায় ।
খাগড়াছড়ি অথবা দিঘীনলা থেকে ভাড়ায় চাঁদের গাড়ি (৩ হাজার ৫শ’ থেকে ৪ হাজার টাকা, এক দিন), সিএনজি (৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা একদিন) অথবা মোটরবাইক (১ হাজার থেকে ১ হাজার ২শ’ টাকা) রির্জাভ করে সাজেক যাবেন।
সাজেক থেকে পায়ে হেঁটে কংলাক ঝরনায় যেতে হয়।
রাতে সাজেক থাকতে হবে। তবে সেখানে থাকার জায়গা অপ্রতুল। রাতে থাকার জায়গা আগে থেকেই ঠিক করতে হবে। সাজেকে আদিবাসীদের পরিচালিত কয়েকটা দোকানে খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। তবে সেক্ষেত্রে আগেই জানাতে হবে ।
প্রয়োজনীয় তথ্য
মানুষ প্রকৃতির কাছে যাবে। তবে প্রকৃতি যাতে তার মতো করে সুন্দর থাকে সেই দায়িত্বটাও মানুষের হাতে। ব্যবহৃত কোনো প্রকার পলিথিন, পানির বোতল, প্যাকেট, ময়লা ইত্যাদি নিদিষ্ট স্থানে ফেলবেন। না হলে সঙ্গে করে নিয়ে আসবেন। সুন্দর হোক ভ্যালির পথ চলা, সুন্দর থাকুক প্রকৃতি। এই বিষয়ে যে কোন তথ্য কিংবা সহযোগিতার জন্য যোগাযোগ করতে পারেন ০১৫৫৬-৭১০০৪৩, ০১৮১৫-৮৫৬৪৯৭।
ছবি: মইনুল হাসান
আরও প্রতিবেদন: