লেদার-ব্যাগ: চিরদিনের ফ্যাশন

হাতব্যাগ, ল্যাপটপ ব্যাগ, জুতো কিংবা স্যান্ডেল যাই হোক না কেনো, লেদার বা চামড়ায় রয়েছে আলাদা আভিজাত্য্।

শান্তা মারিয়াবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 August 2015, 10:16 AM
Updated : 17 August 2015, 11:56 AM

চামড়ার তৈরি সামগ্রীর ফ্যাশন কখনও পুরানো হয় না। বাংলাদেশের তৈরি চামড়া-সামগ্রীর বিদেশেও রয়েছে দারুণ চাহিদা। কারণ বাংলাদেশের লেদার মানের দিক থেকে বেশ উন্নত। গুলশান ডিসিসি এক নম্বর মার্কেট, বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্ক, নিউমার্কেট, বায়তুল মোকাররমসহ বিভিন্ন শপিং কমপ্লেক্সে চামড়া-সামগ্রীর দোকান রয়েছে। আড়ংয়ে চামড়ার তৈরি জিনিস পাওয়া যায়্। চক বা মোগলটুলিতেও রয়েছে লেদার বেল্ট, মানিব্যাগসহ বিভিন্ন সামগ্রীর দোকান।

অপেক্ষাকৃত কম দামে লেদারের সামগ্রী কিনতে চাইলে সবচেয়ে সুবিধাজনক হল ঢাকার রায়ের বাজার-হাজারিবাগে চলে যাওয়া। এখানে রয়েছে লেদার সামগ্রীর অনেক দোকান।

ট্যানারির মোড় থেকে রাস্তার দুদিকে প্রায় পঞ্চাশটি দোকান রয়েছে। এসব দোকানে লেডিস ব্যাগ, পার্স, ল্যাপটপ ব্যাগ, মোবাইল ব্যাগ, ব্রিফকেস, বেল্ট, মানিব্যাগ, জুতো, স্যান্ডেলসহ চামড়ার তৈরি বিভিন্ন রকম সামগ্রী পাওয়া যায়। এই এলাকায় চামড়ার অনেক কারখানা রয়েছে। সরাসরি এসব কারখানা থেকেও কিনতে পারেন অথবা যেতে পারেন এসব কারখানাসংলগ্ন শোরুমে। এই এলাকার দোকানগুলোতে যেসব লেদার সামগ্রী বিক্রি হয় তা মূলত তৈরি হয় বিদেশে রপ্তানির জন্য।

তাই এগুলোর গুণগত মান খুবই ভালো। প্রতিটি শোরুমেই ক্যাটালগ রয়েছে। ক্যাটালগ দেখে পছন্দসই ডিজাইনের সামগ্রী অর্ডার দিয়েও বানিয়ে নেওয়া সম্ভব।

এখানে ল্যাপটপ ব্যাগের দাম পড়বে ২ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা। লেডিজ ব্যাগ ছোট আকারের হলে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫শ’ টাকায় পাওয়া যাবে। মাঝারি থেকে বড় আকারের লেডিজ ব্যাগের দাম ১ হাজার ৫শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা। মানিব্যাগ ৪শ’ থেকে ১ হাজার টাকা। বেল্ট আড়াইশ থেকে ১ হাজার ৫শ’ টাকা। ছেলেদের জুতা ১ হাজার ২শ’ থেকে ২ হাজার ৫শ’ টাকা। স্যান্ডেল ৫শ’ থেকে ১ হাজার ২শ’ টাকা। মেয়েদের স্যান্ডেল ৫শ’ থেকে ১ হাজার ২শ’ টাকা।

শীতকালে এসব দোকান থেকে চামড়ার জ্যাকেট, ওয়েস্টকোট ও প্যান্ট কিনতে পারেন।

কথা হল জুবায়ের লেদারের কর্ণধার মোহাম্মদ হাবিবের সঙ্গে। তিনি বিসিকে চামড়াশিল্পের প্রশিক্ষক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন।

তিনি বললেন, “চামড়ার গুণগত মানের উপর এর দাম নির্ভর করে। সঠিক পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াজাত না করা হলে চামড়ার তৈরি সামগ্রীতে ছত্রাক পড়ে যাওয়ার ভয় থাকে। কেনার আগে অবশ্যই বিক্রেতাকে জিজ্ঞাসা করতে হবে এটিতে ছত্রাক পড়ার ভয় আছে কি না। প্রয়োজনে তার কাছ থেকে গ্যারান্টি লেখা মেমো নিতে হবে।”

দোকান কর্মচারী ফয়সাল বললেন, “লেদারের সামগ্রী মাঝে মাঝে পালিশ করতে হয়। বিক্রেতার কাছে নিয়ে গেলে তিনি ব্যাগ বা যেকোনো সামগ্রী পালিশ করে দিতে পারেন। চামড়ার সামগ্রী পালিশ করার কাজে ইয়াম নামে এক ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। এটি চামড়ার উপর হালকা করে ঘষতে হয়। জোরে ঘষলে রঙ উঠে যাবে। ইয়াম ব্যবহারে চামড়ার জিনিস চকচকে হয়।”

তিনি জানান, বিভিন্ন মানের ইয়াম পাওয়া যায। কেজি প্রতি মানভেদে ইয়ামের দাম ৪শ’ থেকে ৮শ’ টাকা।

লেদার কন্ডিশনার বাজারে পাওয়া যায়। এটি ব্যবহারে চামড়ার জিনিস ভালো থাকে।

চামড়ার তৈরি সামগ্রী ব্যবহার না করে দীর্ঘদিন ফেলে রাখলে তাতে সাদা ছত্রাকের প্রলেপ পড়ে। চামড়ার সামগ্রীতে ছত্রাকের প্রলেপ পড়লে প্রথমে ভেজা ন্যাকড়া দিয়ে মুছে নিন, তারপর রোদে শুকিয়ে নিন। এরপর নারিকেল তেল দিয়ে পালিশ করতে হবে।

চামড়ার জুতা, বেল্ট, ব্যাগ কিংবা জ্যাকেট বর্ষায় পানি ও আর্দ্রতায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে উজ্জ্বলতাও নষ্ট হয়। এ ক্ষতি থেকে রক্ষা এবং এগুলোর ঔজ্জ্বল্য বজায় রাখার জন্য কিছু কৌশল অবলম্বন করা প্রয়োজন।

চামড়ার জিনিস পানিতে ভিজে গেলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তা শুকিয়ে নিন। এ জন্য শুকনো কাগজ কিংবা কাপড় ব্যবহার করতে পারেন। খবরের কাগজ দিয়ে মুছে নিতে পারেন। খবরের কাগজ খুব দ্রুত পানি শুষে নেয়। ঠাণ্ডা বাতাসের ব্লোয়ার ব্যবহার করা যেতে পারে। ব্লোয়ার না থাকলে ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ফ্যানের নিচেও শুকানো যাবে।

চুলার আগুনে চামড়ার জিনিস শুকাবেন না। আগুনের তাপে চামড়ার ক্ষতি হবে। অতিরিক্ত তাপ চামড়ার খুবই ক্ষতি করে। এতে চামড়া ভাঁজ ভাঁজ হয়ে যায় এবং ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।

তাই পানিতে ভিজে গেলেও চামড়া চুলার ওপরে শুকানো উচিত নয়। ব্যবহার করা উচিত নয় গরম হেয়ার ড্রায়ার। এ ছাড়া ঘরের ঠাণ্ডা স্থানে চামড়ার পণ্য সংরক্ষণ করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন তা দীর্ঘ সময় রোদে না থাকে।

চামড়ার জিনিস আঁটসাঁট জায়গার বদলে কিছুটা খালি স্থানে হ্যাঙ্গারে করে সংরক্ষণ করতে হবে। চামড়ার জুতো পলিথিনে মুড়ে রাখুন। ব্যাগ রাখুন পলিথিন প্যাকেটে।

চামড়ার জ্যাকেট বা অন্যান্য সামগ্রী ড্রাই ক্লিনার্সয়ে দিতে হবে পরিষ্কার করার জন্য।

মোটামুটি সবরকম পোশাকের সঙ্গেই চামড়ার সামগ্রী মানিয়ে যায়। যেকোনো পার্টিতে চামড়ার পার্স বা লেডিজ ব্যাগ পুরো সাজে বাড়তি সৌন্দর্য যোগ করে। সাজে আভিজাত্য ফুটিয়ে তুলতে চামড়ার ব্যাগের জুড়ি নেই।

ছবি: ঋত্বিকা আলী ও লেদার প্রোডাক্ট অব বাংলাদেশের ফেইসবুক পেইজ থেকে।