সীতাকুণ্ডের পাহাড়ে ঝরনায়

চন্দ্রনাথ পাহাড়ের কোলে দেশের প্রথম ইকো পার্ক ‘সীতাকুণ্ড’। সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড় এবং আশপাশের এলাকায় ২০০৪ সালে গড়ে তোলা হয় এই পার্ক। পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে ইকোপার্কের ভেতরে আছে কয়েকটি আকর্ষণীয় ঝরনা।

মুস্তাফিজ মামুনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 August 2015, 12:00 PM
Updated : 7 August 2015, 12:00 PM

বর্ষায় ইকোপার্কের গাছপালায় প্রাণ সঞ্চারের পাশাপাশি এখানকার ঝরনাগুলোও প্রাণ ফিরে পায়।

চট্টগ্রাম শহর থেকে ৩৭ কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কের উত্তর পাশে অবস্থিত সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক। নানান গাছপালা আর পশুপাখি সমৃদ্ধ এই পার্কের ভেতর থেকে পিচঢালা আঁকাবাঁকা পথে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার সামনে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়া।

তবে বর্ষার সময়ে সীতাকুণ্ড ইকোপার্কের মূল আকর্ষণ হল ‘সুপ্তধারা’ এবং ‘সহস্রধারা’। দুটিই ঝরনা। তবে নামের সঙ্গে কোনোটারই চারিত্রিক সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়না।

সুপ্তধারা ঝরনা স্থানীয়ভাবে ছোট ঝরনা নামে পরিচিত। তবে এটা ছোট কোনো ঝরনাই নয়। উঁচু পাহাড়ারের উপর থেকে অনবরত তিনটি ধারা বহমান এখানে। তবে টানা কয়েকদিন বৃষ্টি না হলে তিনটি ধারার একটিতে পানি কমে যায়।

সীতাকুণ্ড ইকোপার্কের ভেতর থেকে ঝিরি পথ ধরে যেতে হয় সুপ্তধারায়। তবে টানা বৃষ্টিপাত হলে ঝিরি পথে হাঁটা কঠিন। তখন কোমর পানিরও বেশি থাকে এ পথে। ইকোপার্ক থেকে নিচে নামার পরেই ঝিরিপথ। জায়গাও বেশ নির্জন।

এ পথে প্রায় পনের মিনিট হাঁটার পর ঝরনাধারার শব্দ কানে ভেসে আসবে। একটু সামনে এগুলেই নিজের চোখকে হয়ত বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে। পাহাড়ের আড়লো লুকানো এতো সুন্দর ঝরনা! এক পাশ থেকে সুপ্তধারার উপরেও ওঠা যায়। তবে সেটা খুবই বিপজ্জনক। কারণ এখানকার পুরো জায়গাই পাথুরে। অনবরত পানি পড়ার কারণে সেখানে পাথরের উপরে শেওলা জমে থাকে।

ইকোপার্কের আরও একটু উপরে উঠে আবার নিচে নেমে সহস্রধারা ঝরনা। এরও নামের সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। স্থানীয়দের কাছে এটির নাম বড় ঝরনা। একটি মাত্র ধারা পাহাড়ের গা বেয়ে প্রবাহমান এখানে। এ ঝরনায় যেতে হলেও পাহাড়ের নিচে নামতে হয়। আর পথ বেশ দুর্গম।

সহস্রধারা দেখে এবার চলুন চন্দ্রনাথের চূড়ায়। এখান থেকে সামান্য দূরেই চন্দ্রনাথের চূড়া। এ পাহাড়ের সর্বোচ্চ  চূড়ার উচ্চতা ৩৬৫ মিটার। চূড়ায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তীর্থ স্থান চন্দ্রনাথ মন্দির। এখান থেকে দক্ষিণ দিকে তাকালে দেখা যায় বিস্তীর্ণ বঙ্গোপসাগর।

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে সড়ক, রেল ও আকাশ পথে চট্টগ্রাম যেতে পারেন। তবে সড়ক পথে গেলে একেবারে সীতাকুণ্ড ইকোপার্কের সামনেই নামা যায়। অন্য দুই পথে গেলে চট্টগ্রাম গিয়ে সেখান থেকে বাসে কিংবা গাড়ি ভাড়া করে সীতাকুণ্ড যাওয়া যায়।

ঢাকার ফকিরাপুল, কমলাপুর, সায়দাবাদ থেকে গ্রিনলাইন, সোহাগ, সৌদিয়া, টি আর, হানিফ ইত্যাদি পরিবহনের এসি বাস যায় চট্টগ্রামে। ভাড়া ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২শ’ টাকা। এছাড়া এস আলম, সৌদিয়া, ইউনিক, শ্যামলী, হানিফ, ঈগল প্রভৃতি পরিবহনের নন এসি বাসের ভাড়া ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা।

রেল পথে ঢাকা-চট্টগ্রামের মহানগর প্রভাতী ঢাকা ছাড়ে সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে। চট্টলা এক্সপ্রেস সকাল ৯টা ২০ মিনিটে। মহানগর গোধুলী ঢাকা ছাড়ে বিকেল ৩টায়। সুবর্ণ এক্সপ্রেস ঢাকা ছাড়ে বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে। তূর্ণা ঢাকা ছাড়ে রাত এগারোটায়। ভাড়া ১৬০ থেকে ১০৯৩ টাকা।

এছাড়া ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে থেকে বাংলাদেশ বিমান, নভো এয়ার, ইউএস বাংলা এয়ার, রিজেন্ট এয়ারের বিমান চলাচল করে চট্টগ্রামের পথে। বিমানে এক পথের সর্বনিম্ন ভাড়া ৩,৫০০ টাকা।

কোথায় থাকবেন

সীতাকুণ্ডে পর্যটকদের থাকার ভালো ব্যবস্থা নেই। সারাদিন বেড়িয়ে রাতে এসে থাকতে হবে চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম শহরের সর্বত্রই থাকার জন্য বিভিন্ন মানের হোটেল আছে।

প্রয়োজনীয় তথ্য

সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক বেশ নির্জন জায়গা। একাকী তাই ভ্রমণে যাওয়া নিরাপদ নয়। এখানকার ঝরনাগুলোর আশপাশ ও ঝিরি পথ বেশ শ্যাওলাযুক্ত। জায়গাগুলোতে তাই সাবধানে চলতে হবে।

বর্ষাকালে যে কোনো সময় বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে। তাই বর্ষাতি, ছাতা সঙ্গে নিতে হবে। এই ভ্রমণে ট্রেকিং স্যান্ডাল থাকলে পথচলা সহজ হবে।