পাহাড়ের কোলে বিছনাকান্দি

সিলেট জেলার নবীনতম ভ্রমণ গন্তব্য বিছনাকান্দি। জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার রস্তুমপুর ইউনিয়নের সীমান্ত ঘেঁষা এ জায়গা এখন পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। পাথর বিছানো বিস্তীর্ণ প্রান্তরের উপরে বয়ে চলা মেঘালয়ের পাহাড়ি ঝরনাধারা বিছনাকান্দির মূল আকর্ষণ।

মুস্তাফিজ মামুনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 July 2015, 11:21 AM
Updated : 31 July 2015, 11:21 AM

অতীতের জাফলংয়ের সঙ্গে বিছনাকান্দির অনেকটাই মিল আছে। অস্বাভাবিকভাবে পাথর উত্তোলনের ফলে জাফলং ধ্বংস হলেও বিছনাকান্দি ঠিকঠাকই আছে। সিলেট শহর থেকে সিএনজি চালিত অটোরিকশায় চড়ে যেতে হবে হাদারপাড় পোস্ট অফিস ঘাট। সেখান থেকে পিয়াইন নদী ধরে চলতে চলতে এক সময় চোখে পড়বে মেঘালয়ের আকাশ ছোঁয়া পাহাড়।

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার বিছনাকান্দি পর্যটন কেন্দ্রের পাশে পাথরের স্তুপ। তোলা। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন।

বর্ষায় পিয়াইন থাকে পানিতে কানায় কানায় পূর্ণ। তবে শীতে শুকিয়ে পানি তলায় ঠেকে। তখন পিয়াইন হেঁটেই পার হওয়া যায়। তবে বর্ষায় ভরা পিয়াইন নদীতে চলতে চলতে এর দুই পাশের দৃশ্য দেখে বিমোহিত হবেন যে কেউ। এর চারপাশটাই যেন ছবির মতো। পিয়াইনে চলতে চলতে দূরে দেখা যাবে আকাশে হেলানো উঁচু উঁচু পাহাড়ের সারি। চারপাশের চোখ ধাঁধানো সব দৃশ্য দেখতে দেখতে এক সময় এই পাহাড়ের কোলে এসে চোখে পড়বে বিস্তীর্ণ পাথর কেয়ারি। বর্ষায় পাথর কেয়ারি পানিতে ডুবু ডুবু। এখান থেকে একটু সামনেই সীমান্ত ঘেঁষা পাথর-জলের বিছনাকান্দি।

বিছনাকান্দিতে পাথর-জলের বিছানা মুগ্ধ হওয়ার মতো। এখানে পাথরের বিছানার উপরে পাশের পাহাড় থেকে অনবরত স্বচ্ছ পানির ধারা বহমান। তবে বর্ষায় পানির প্রবাহ বেড়ে যায় কয়েকগুন। এ সময়ে মূল ধারায় স্রোত অনেক শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

বিছনাকান্দির বিছানা বাংলাদেশ আর ভারত মিলিয়ে। স্বাভাবিক ভাবে সীমানা চিহ্ণিত করা নেই এখানে। জায়গাটিতে তাই সাবধানে বেড়ানো উচিৎ। বাংলাদেশ অংশ ছেড়ে ভারত অংশে চলে যাওয়া মোটেই নিরাপদ নয়। সাঁতার জানা না থাকলে এ ভ্রমণে অবশ্যই  লাইফ জ্যাকেট নেওয়া উচিৎ। তাছাড়া ভ্রমণে গিয়ে কোনো বর্জ্য জায়গাটিতে ফেলে আসবেন না।  

কীভাবে যাবেন

গোয়াইনঘাটের বিছনাকান্দি পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটক। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন।

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার বিছনাকান্দি পর্যটন কেন্দ্রের পাশে পাথরের স্তুপ। তোলা। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন।

প্রথমে যেতে হবে সিলেট শহর। সড়ক, রেল ও আকাশ পথে ঢাকা থেকে সরাসরি সিলেট যেতে পারেন। চট্টগ্রাম থেকেও সিলেটে যাওয়া যায়।

ঢাকার ফকিরাপুল, সায়দাবাদ ও মহাখালী বাস স্টেশন থেকে সিলেটের বাসগুলো ছাড়ে। এ পথে গ্রীন লাইন পরিবহন, সৌদিয়া এস আলম পরিবহন, শ্যামলি পরিবহন ও এনা পরিবহনের এসি বাস চলাচল করে। ভাড়া ৮শ’ থেকে ১ হাজার ১শ’ টাকা। এছাড়া শ্যামলী পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, ইউনিক সার্ভিস, এনা পরিবহনের পরিবহনের নন এসি বাস সিলেটে যায়। ভাড়া ৪শ’ থেকে সাড়ে ৪শ’ টাকা। এনা পরিবহনের বাসগুলো মহাখালী থেকে ছেড়ে টঙ্গী ঘোড়াশাল হয়ে সিলেট যায়।

ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস। সপ্তাহের প্রতিদিন দুপুর ২টায় ছাড়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস এবং বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ০৯টা ৫০ মিনিটে ছাড়ে উপবন এক্সপ্রেস। শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন বিকাল ৪টায় ছাড়ে কালনী এক্সপ্রেস। ভাড়া দেড়শ থেকে ১ হাজার ১৮ টাকা। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে যায় পাহাড়িকা এক্সপ্রেস এবং শনিবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে উদয়ন এক্সপ্রেস। ভাড়া ১৪৫ থেকে ১ হাজার ১৯১ টাকা।

গোয়াইনঘাটের বিছনাকান্দি পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটক। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন।

বিছনাকান্দিতে ভারতের মেঘালয় থেকে থেকে বয়ে আসা পাহাড়ি ঝরনাধারা। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন।

ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ, ইউনাইটেড এয়ার, রিজেন্ট এয়ার, নভো এয়ার এবং ইউএস বাংলা এয়ারের বিমান প্রতিদিন যায় সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দরে।

সিলেট শহর থেকে অটো রিকশায় প্রথমে যেতে হবে হাদারপাড়। হাদারপাড়ে যাওয়ার সহজ পথ হল শহর থেকে মালনিছড়ার পথে ওসমানী বিমান বন্দরের পেছনের ভোলাগঞ্জের সড়ক ধরে। তবে এই রাস্তার বর্তমানে বেহাল অবস্থা। পাথর বোঝাই ট্রাক চলাচলের কারণে রাস্তায় প্রচুর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। তাই এ পথে সেডান কার কিংবা মাইক্রো বাস নিয়ে যাওয়া দুষ্কর।

এ পথে সবচেয়ে সহজ ও সুবিধা হল অটো রিকশা। সিলেট শহর থেকে হাদারপাড়ের যাওয়া আসার অটো রিকশা ভাড়া ১ হাজার ৫শ’ থেকে ২ হাজার টাকা। একটি অটো রিকশায় সর্বোচ্চ পাঁচজন যাওয়া যায়।

হাদারপাড় বাজারের পোস্ট অফিস ঘাট থেকে বিছনাকান্দি যাওয়ার রিজার্ভ পর্যটক নৌকা পাওয়া যাবে। ১০ থেকে ২০ জন চলার উপযোগী একটি নৌকার ভাড়া ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা।

নৌকার জন্য যোগাযোগ করতে পারেন এই নম্বরে ০১৭১২৯৭২৫৯৮।

বিছনাকান্দিতে পাথরের বিছানা। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন।

কোথায় থাকবেন

বিছনাকান্দি ও আশপাশে থাকার ভালো ব্যবস্থা নেই। সিলেট শহর থেকে খুব সকালে গিয়ে সারাদিন বেড়িয়ে রাতে এসে থাকতে হবে সিলেট শহরেই। এ শহরে থাকার জন্য বেশ কিছু ভালো মানের হোটেল আছে।

শহরের শাহজালাল উপশহরে হোটেল রোজ ভিউ (০৮২১-৭২১৪৩৯)। দরগা গেইটে হোটেল স্টার প্যাসিফিক (০৮২১-৭২৭৯৪৫)। ভিআইপি রোডে হোটেল হিলটাউন (০৮২১-৭১৬০৭৭)। বন্দরবাজারে হোটেল মেট্রো ইন্টারন্যাশনাল (০৮২১-৭২১১৪৩)। নাইওরপুলে হোটেল ফরচুন গার্ডেন (০৮২১-৭১৫৫৯০)। জেল সড়কে হোটেল ডালাস (০৮২১-৭২০৯৪৫)। লিঙ্ক রোডে হোটেল গার্ডেন ইন (০৮২১-৮১৪৫০৭)। আম্বরখানায় হোটেল পলাশ (০৮২১-৭১৮৩০৯)। দরগা এলাকায় হোটেল দরগাগেইট (০৮২১-৭১৭০৬৬)। হোটেল উর্মি (০৮২১-৭১৪৫৬৩)। জিন্দাবাজারে হোটেল মুন লাইট (০৮২১-৭১৪৮৫০)। তালতলায় গুলশান সেন্টার (০৮২১-৭১০০১৮) ইত্যাদি। এছাড়াও সিলেট শহরের সব জায়গায় বেশ কিছু হোটেল আছে।

এসব হোটেলে ১ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকায় বিভিন্ন মানের কক্ষ আছে।