টয়লেট ঠিক মত সাফসুতরো করছেন তো?

ছুটির দিন ছাড়া পরিবারের সবাইকে ঘরে পাওয়াটা মুশকিল ছিল কয়েকমাস আগেও। আর এখন দিন-রাত ঘরেই বাস; ঘর থেকেই অফিসের কাজ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 May 2020, 03:29 AM
Updated : 8 May 2020, 08:21 AM

বাসাবাড়িতে এসময় টয়লেট ব্যবহারের চাপ বেড়ে যাচ্ছে বলে নোংরাও হচ্ছে দ্রুত। আর তা আগের চেয়ে কাজ বাড়িয়ে দিচ্ছে।

তবুও করোনাভাইরাসের সংক্রমণের এই সময় পরিবারের সুস্বাস্থ্যের জন্য টয়লেট, বেসিন, শাওয়ার রাখতে হবে জীবাণুমুক্ত।

এ সময় টয়লেট ঝকঝকে তকতকে রাখার উপায় বাতলে দিতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সিএনএন। নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিনের গবেষণার বরাত দিয়ে সেখানে বলা হয়েছে, নতুন করোনাভাইরাস মেঝে বা কোনো শক্ত বস্তুর গায়ে তিন দিন পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে।  

ভ্যানডারবিল্ট ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. উইলিয়াম স্কাফনার বলেন, “কঠিন বস্তুর উপরিতল নিয়েই আমাদের যত দুশ্চিন্তা। তবে যে কোনো জীবাণুনাশকই কাজ করবে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে। এমনকি সাবান-পানি দিয়ে ধুয়ে নেওয়াও যথেষ্ট হবে।”

টয়লেট পরিষ্কারের সঠিক তরিকা

সবার আগে নিজের হাত ধুয়ে নিতে হবে। আর টয়লেট পরিষ্কার করতে কোনো জীবাণুনাশক ব্যবহার করলে সেরা মানের পণ্যটি ব্যবহার করাই ভালো।

টয়লেটের দরজার হাতল, বাতির সুইচ সব সময় হাতের সংস্পর্শে আসে বলে এগুলোও মুছে নিতে হবে।

গোসলখানায় শাওয়ার কার্টেইন থাকলে পরিষ্কার করতে হবে তাও। আর কমোডের বসার আসনটি তো অবশ্যই সাফসুতরো রাখতে হবে।

অনেকের বাথরুমে রাখা আলমারির তাকে হেয়ার ড্রায়ার, ইলেকট্রিক টুথব্রাশ, শেভার থাকে। যেহেতু হাত দিয়ে ধরা হয়, তাই শঙ্কামুক্ত থাকতে এসবও সাফ করতে হবে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, বৈদ্যুতিক ডিভাইসগুলো পরিষ্কার করার সময় সাবধান থাকতে হবে; সুইচ বোর্ড থেকে খুলে রাখতে হবে প্লাগ।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজেস কনট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন থেকে বলা হচ্ছে, ৭০ শতাংশ অ্যালকোহল মেশানো জীবাণুনাশক দ্রবণ দিয়ে এসব ডিভাইসগুলো মুছে নিলে নিরাপদ থাকা যাবে।

জার্নাল অফ অ্যাপ্লায়েড মাইক্রোবায়োলজিতে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, কমোড ফ্লাশ করার সময় পানির ছিটা ছয় ফুট পর্যন্ত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যেতে পারে।

টয়লেটের বেসিন, কাউন্টার টপ পরিষ্কার করার পর সঙ্গে সঙ্গে তা একবারে শুকনো করে না মুছে তিন থেকে পাঁচ মিনিট ওই রকম ভেজা অবস্থায় রেখে দেওয়ার কথা বলছে সিএনএনের প্রতিবেদন।

আর আমেরিকান ক্লিনিং ইনস্টিটিউটের পরামর্শ, একটু অপেক্ষা করলে জীবাণু ধ্বংস করা সহজ হবে। বাতাসে শুকিয়ে যাওয়ার পর পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।

এক জরিপের বরাতে ইনস্টিটিউটের মুখপাত্র ব্রায়ান সানসোনি বলেন, আমেরিকানদের মধ্যে ৪২ শতাংশই জানেন না, কীভাবে টয়লেট পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে হয়।

বেশিরভাগ মানুষেই জীবাণুমুক্ত করার জন্য কেনা পণ্যের গায়ে লেখা নির্দেশনা পড়ে দেখেন না বলেই এমনটা ঘটে।

আলাদা টয়লেট কখন?

যদি ঘরের সদস্যদের মধ্যে কেউ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে তাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটা আলাদা টয়লেট দিতে হবে, যা অন্য কেউ ব্যবহার করবে না।  

বাড়িতে একটার বেশি টয়লেট না থাকলে আক্রান্ত ব্যক্তি কমোড, বেসিন ব্যবহার শেষে দ্রুত সবকিছু সাফ করে নিতে হবে।

অসুস্থ ব্যক্তি নিজে যদি এসব পরিষ্কার করার মত অবস্থায় না থাকেন, তাহলে অন্য কেউ সতর্কতার সঙ্গে তা করতে পারেন।

আক্রান্ত একজন টয়লেট ব্যবহার শেষে বেরিয়ে এলে কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর অন্যজন ভেতরে যেতে পারেন। তখন মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস পরে নেওয়া দরকার।    

যদি টয়লেট ব্যবহারে অসুস্থ ব্যক্তিকে সহায়তা করা জরুরি হয় তবে নিজের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশেষ খেয়াল রাখার পরামর্শ দিয়েছেন সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ উইলিয়াম স্কাফনার। এ সময় মাস্ক ও গ্লাভস ছাড়াও গায়ের পোশাকের উপর আরেকটি সুরক্ষা আস্তর দিতে হবে।  

“যদি অসুস্থ ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে যেতে হয় টয়লেটে, তবে খেয়াল রাখতে হবে, তিনি কী কী স্পর্শ করেছেন হাত দিয়ে। তারপর সেসব ধুয়ে মুছে নিতে হবে।”

কোভিড-১৯ রোগীর ডায়রিয়া ও বমির উপসর্গ দেখা দিতে পারে; সেজন্য কমোডের বসার জায়গাটিও জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে প্রতিবার।

একটু বাড়তি সতর্ক থাকতে মোছার কাজে ব্যবহার করা কাপড় ও ব্রাশ একটা প্লাস্টিক ব্যাগে ভরে ফেলে দেওয়া যেতে পারে। ঘরের পাপোশও ধুয়ে-শুকিয়ে নিতে হবে।

যারা হাতে গ্লাভস পরে টয়লেট পরিষ্কার করবেন, তারা গ্লাভস খুলে ফেলে দেওয়ার পর অবশ্যই শেষ আরেকবার হাত ভালো করে ধুয়ে নেবেন। আর এসব কাজের পর নিজের পোশাক অবশ্যই বদলে নিতে হবে।

ঘরে অসুস্থ ব্যক্তি থাকলে তার ব্যবহার করা তোয়ালে ও ময়লা কাপড়ও আলাদা রাখতে হবে।

সাবানই ভালো

সিএনএনের স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রধান প্রতিবেদক ডা. সঞ্জয় গুপ্তা এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “এতোদিনে সবাই জেনে গেছেন যে ভাইরাস, বিশেষ করে করোনাভাইরাস, মেঝে ও শক্ত বস্তুর গায়ে কয়েক ঘণ্টা টিকে থাকতে পারে। অর্থাৎ আমাদের সব সময়ই এসব জীবাণুমুক্ত করতে হবে।”

ভাইরাসের কাঠামো একটি লিপিড আবরণ দিয়ে ঢাকা থাকে; সাবান এই প্রোটিনের স্তর ভেঙে দিতে পারে। এটা অনেকটা তেল-চর্বিওয়ালা থালাবাসন ডিশ ওয়াশিং সোপ দিয়ে পরিষ্কার করে ফেলার মত।

আর তাই সবাই যখন স্যানিটাইজার, ঝাড়ু, ব্রাশ, জীবাণুমুক্ত করার পণ্য কিনতে কিনতে দোকানের তাক খালি করে ফেলছেন, তখন সাবানেই ভরসা করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।