আমাকে বানানো হয়েছে সোনা আর রূপা দিয়ে� একান্ত সাক্ষাৎকারে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ট্রফি

বিশ্বকাপ ফাইনাল তো চলেই এলো। তো, যাকে নিয়ে এই ক্রিকেট যুদ্ধ; সেই বিশ্বকাপ ট্রফিটার কথা তো নিশ্চয়ই তোমাদের জানতে ইচ্ছে করছে?

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 July 2013, 11:03 AM
Updated : 23 July 2013, 11:05 AM

বিশ্বকাপ ফাইনাল তো চলেই এলো। তো, যাকে নিয়ে এই ক্রিকেট যুদ্ধ; সেই বিশ্বকাপ ট্রফিটার কথা তো নিশ্চয়ই তোমাদের জানতে ইচ্ছে করছে? তার জন্ম কোথায়, আর কে-ই বা তার ডিজাইন করেছিলো? সেই একই কথা জানার ইচ্ছে ছিলো আমাদেরও। আর তাই ভাবলাম, এবারে তাহলে ট্রফিটারই একটা সাক্ষাৎকার নিয়ে নেই। তাহলে এগুলো তো জানা যাবেই, বোনাস হিসেবে ট্রফিটাও একটু ছুঁয়ে দেখা যাবে। আর বিশ্বকাপ ট্রফিও সব শুনে খুশি হয়েই রাজি হয়ে গেলো। তোমাদের জন্য সাক্ষাৎকার দিতে কে-ই বা আপত্তি করবে বলো? কিন্তু গোল বাঁধলো আরেক জায়গায়। সে তো আর যে সে ট্রফি নয়, ক্রিকেট বিশ্বকাপের ট্রফি! তাকে তো আইসিসি ওদের অফিস থেকেই বের হতে দেবে না, যদি কোনোভাবে চুরি হয়ে যায়, নয়তো হারিয়ে যায়। আর ওদিকে সাক্ষাৎকার দিতে তো ট্রফিকেও কিডজের অফিসেই আসতে হবে। কী করা যায় বলো তো? শেষমেশ ট্রফির ইচ্ছার কাছে মাথা নোয়ালো আইসিসি, আর বিশ্বকাপ ট্রফি লুকিয়ে লুকিয়ে চলে এলো কিডজের অফিসে। বলছো, লুকিয়ে লুকিয়ে কেন? নাহলে কি আর সে আসতে পারতো, সব মানুষ একটু ছুঁয়ে দেখার আবদার করলে তো সামনের কয়েক মাসেও শুধু ঢাকার মানুষেরই অনুরোধ ফুরোতো না! তো আর দেরি করে কাজ কী, চলো সাক্ষাৎকারটাই শুনে আসি।

: কেমন আছেন ট্রফি ভায়া?

: বেশ আছি। খুব আনন্দ হচ্ছে। আর কয়দিন পরেই যে আমাকে নিয়ে এবারের বিশ্বজয়ী দলটা উল্লাসে মাতবে।

: কোনো দল আপনাকে নিয়ে উল্লাসে মাতলেই বুঝি আপনার খুব খুশি লাগে?

: লাগবে না! আমাকে নিয়ে তখন ওরা কতোকিছু করে। ওদের আনন্দ দেখেই তো আমার বুক ভরে যায়।

: কিন্তু আরেক দল যে হেরে যায়, ওদের জন্য খারাপ লাগে না?

: আসলে খেলা তো খেলাই। এখানে তো আর জয়-পরাজয় আসল না। আজকে ওরা হেরেছে, সামনের বার হয়তো ওরাই বিশ্বকাপ জিতে নেবে। আর বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলাও তো কম গর্বের বিষয় না। ফাইনালে যে দল হেরে যায়, তারা কিন্তু বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা দল, ব্যাপারটা খেয়াল রেখো।

: তা-ও তো ঠিকই বলেছেন। আর খেলা তো হয় মনের আনন্দের জন্য। বিনোদনের জন্য। তাতে জিতলেই কী, আর হারলেই কী।

: এটাই আসল কথা। প্রতিটা ম্যাচ জিততে হবে, প্রতিটা টুর্নামেন্ট জিততে হবে, এমন কোনো কথা নেই। ভালো খেলাটাই বড়ো কথা। যেমন ধরো, তোমাদের বাংলাদেশ এবার ৬টা ম্যাচ খেলে ৩টাতেই জিতলো। অথচ দুটো ম্যাচে খারাপ খেলেছে বলে ওদের কতো-ই না সমালোচনা করা হচ্ছে। ঐ দুটো ম্যাচে যদি ওরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারতো, তাহলে কিন্তু কেউ আর ওদেরকে এতো গালমন্দ করতো না।

: যাই হোক, আমরা আপনার কথায় আসি। আপনি বরং আপনার সম্পর্কে কিছু বলেন।

: আমার সম্পর্কে আর কি বলবো। আমাকে তো তোমরা সবাই-ই চেনো। কেবল তোমাদের দল আমাকে জিততে বাকি রেখেছে, সে-ও হয়তো আগামী ২-৩ বিশ্বকাপের মধ্যেই জিতে নেবে। কিন্তু বিশ্বকাপ আয়োজনের বদৌলতে আমি তো তোমাদের দেশের মানুষের সামনেও ঘুরে গেছি।

: আচ্ছা, আপনার জন্ম কবে?

: আমার জন্ম হয় ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপের কিছুদিন আগে, লন্ডনে।

: বলেন কি? তাহলে তার আগের বিশ্বকাপগুলোতে কি ট্রফি দেয়া হতো না?

: কেন দেয়া হবে না। অবশ্যই দেয়া হতো। ক্লাইভ লয়েড কিংবা কপিল দেব, ইমরান খান বা অর্জুনা রানাতুঙ্গা ট্রফি নিচ্ছে, এমন ছবি কি কখনো দেখোনি? আর কারো ছবি না দেখলেও ক্লাইভ লয়েডের ছবি তো দেখা উচিত। সে তো ইতিহাসের প্রথম দুটো ট্রফিই জিতেছিলো।

: তাহলে বললেন যে আপনার জন্ম ১৯৯৯ সালে?

: আরে, আগে তো অন্য ট্রফি দেয়া হতো। আসলে আগে বিশ্বকাপের কোনো নির্দিষ্ট ট্রফিই ছিলো না। যে বিশ্বকাপে যারা স্পন্সর হতো, তাদের নামেই টুর্নামেন্ট হতো, তাদের নামেই নামকরণ করা হতো বিশ্বকাপ ট্রফির। এই যেমন, প্রথম ৩টা বিশ্বকাপে স্পন্সর ছিলো প্রুডেন্সিয়াল কোম্পানি লিমিটেড। আর তাই সেই তিন বিশ্বকাপের নাম ও ট্রফির নামই ছিলো প্রুডেন্সিয়াল কাপ।

: পরের গুলোতে কারা স্পন্সর ছিলো?

: ১৯৮৭ বিশ্বকাপের স্পন্সর ছিলো রিলায়েন্স গ্রুপ। আর ১৯৯২ আর ’৯৬ বিশ্বকাপের স্পন্সর ছিলো বিএটি আর উইলস এন্ড কোম্পানি।

: তারপর হঠাৎ কেন আপনাকে বানানো হলো?

: ততোদিনে তো ক্রিকেট বিশ্বকাপ অনেক বড়ো একটা ক্রীড়া আসর হয়ে গেছে। এখন এতো বড়ো একটা টুর্নামেন্ট, তার একটা আনুষ্ঠানিক ট্রফি থাকা উচিত না? আর এই টুর্নামেন্টের তো একটা নামও থাকা চাই। সুতরাং, টুর্নামেন্টের নামের সঙ্গে স্পন্সরের নাম জুড়ে দেয়া বন্ধ করে দেয়া হলো। আর টুর্নামেন্টের আনুষ্ঠানিক ট্রফি হিসেবে বানানো হলো আমাকে।

: আপনাকে বানানোর দায়িত্ব কাদের দেয়া হলো?

: জেরার্ড এন্ড কোম্পানিকে। ওরা ২ মাসের মধ্যে আমাকে বানিয়েছিলো।

: আচ্ছা, আপনাকে কি দিয়ে বানানো হয়েছে?

: আমাকে বানানো হয়েছে সোনা আর রূপা দিয়ে। আর আমার ডিজাইনটা কি কখনো খেয়াল করেছো?

: অবশ্যই। তিনটা স্তম্ভের উপরে একটা গ্লোব বসানো, তাই না?

: হ্যা। এই তিনটা স্তম্ভ ক্রিকেট খেলার তিনটা প্রধান অংশ- ব্যাটিং, বোলিং আর ফিল্ডিংকে বোঝায়। আর উপরের গ্লোবটা কিন্তু শুধু পৃথিবীকেই বোঝায় না। ওটা একইসঙ্গে ক্রিকেট বলেরও প্রতীক।

: যারা বিশ্বকাপ জিতবে, তারা কি আপনাকে নিয়েই যাবে?

: কক্ষণো না। আমি সবসময়ই আইসিসির অফিসে থাকি। তবে যারা বিশ্বকাপ জিতে, তাদেরকে আমার একটা নিখুঁত রেপ্লিকা দেয়া হয়। তবে সেটাতে অবশ্য একটা পার্থক্য থাকে।

: কি পার্থক্য?

: আমার নিচের দিকে অনেকগুলো গোল গোল অংশ দেখছো না? প্রত্যেক বিশ্বকাপের শেষে ওখানে বিজয়ী দলের নাম লেখা হয়। কিন্তু রেপ্লিকাতে ওটা একটাই থাকে, আর সেখানে শুধু সেবারের বিজয়ী দলেরই নাম লেখা থাকে। আমার গায়ে আরো ১০টা বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নের নাম লেখার জায়গা আছে। ফাইনাল শেষে তার একটাতেই এবারের বিশ্বজয়ীর নাম লেখা হবে।

: তো বিশ্বকাপের ট্রফি ভায়া, অনেক-ই তো কথা হলো। আজকে না হয় আমরা সাক্ষাৎকারটা এখানেই শেষ করি, কী বলেন?

:  হ্যাঁ, সেই ভালো। নয়তো বেশি দেরি হলে আইসিসির অফিসাররা আবার চিন্তায় পড়ে যাবেন। আমি তাহলে আজকে যাই। বিদায়।



বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকম/এনজে/এসএ/এইচআর/মার্চ ৩১/১১