গল্প শোন বাঘের

সুন্দরবনের বাঘেরা মিটিং-এ বসেছে। বিষয়: নিরাপদ জীবনযাপন।

জসীম মেহবুববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 July 2022, 05:07 AM
Updated : 4 July 2022, 05:16 AM

নানা অত্যাচারে বনে বাস করা মুশকিল হয়ে পড়েছে বাঘেদের। তাছাড়া খাদ্য সংকট তো রয়েছেই। এই সংকটে পড়ে লোকালয়ে হানা দিতে হচ্ছে তাদের।

এইতো সেদিন, লোকালয়ে হানা দিয়ে কী হেনস্তাই হতে হলো একজনকে। এ সংকট থেকে মুক্তি পেতে একজোট হয়েছে ওরা। বাঁচার মত বাঁচতে হলে এক হওয়া চাই। দশের লাঠি একের বোঝা, এ কথা ওরা ভালো করেই জানে।

বনের প্রবীণ একটি বাঘ সভায় সভাপতিত্ব করছে। তার অভিজ্ঞতা বেশি। বাঘদের বিপদে-আপদে শলাপরামর্শ দেয় সে। বিচার আচারও করে। তাকে মান্য করে সবাই। প্রধান বক্তা সাহসী এক বাঘ বক্তব্য রাখছে। জ্বালাময়ী বক্তৃতায় সে বলছে, ‘ভাইসব। আমরা সুন্দরবনের বাঘ। আমাদের বলা হয় রয়েল বেঙ্গল টাইগার, যার খ্যাতি বিশ্বব্যাপী। সেই বাঘজাতি আজ অস্তিত্বের সংকটে। এই খেলার মাঠেই দেখুন না। মানুষেরা বাঘ সেজে উল্লাস করছে। কেউ বাঘের মুখোশ পরে আনন্দে নাচানাচি করছে। অথচ আমাদের খাঁচায় বন্দি করে রাখছে চিড়িয়াখানায়। সেখানে আমাদের কোন স্বাধীনতা নেই। খাবার-দাবার সীমিত। ইচ্ছেমত কিছু খেতে পাই না। মানুষের করুণার উপর আমাদের নির্ভর করতে হয়। এই অনাচার মেনে নেওয়া যায় না।’

এসব কথা বলে বাঘটা একটু থামে। সভাস্থলে গুঞ্জন ওঠে, ওঠে শ্লোগান – ‘বাঁচার মত বাঁচতে চাই, লড়াই ছাড়া মুক্তি নাই।’ বক্তা তাদের থামতে বলে আবার শুরু করে বক্তৃতা, ‘প্রিয় ভাই-বোনেরা। আমাদের দুঃখের শেষ নেই। আমরা নাকি এদেশের গর্ব। অথচ তার কোন নমুনা দেখতে পাই না। যখন তখন বনে আক্রমন চলে। চলে বাঘ নিধন। আমাদের আবাসস্থল সুন্দরবনকে রক্ষা করার কথা বললেও মানুষেরা তা মানছে না। নানা কূটকৌশলে তারা সুন্দরবনকে ধ্বংসের ফন্দি আঁটছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। প্রয়োজনে বন-মন্ত্রণালয় ঘেরাও করে আমাদের অভিযোগের কথা জানাবো। আপনারা কী বলেন?’

সবাই সমস্বরে বলে উঠলো, ‘লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই।’

বন্ধুদের নিয়ে সুন্দরবনে বেড়াতে গিয়েছিল সামীন। আড়াল থেকে সব শুনলো সে । বাঘদের জন্য খুব মায়া হলো তার। সে সারা শরীরে বাঘের খোলস পরে তাদের সামনে গিয়ে হাজির হল। সভাপতির কাছে অনুমতি নিয়ে বক্তৃতা মঞ্চে দাঁড়াল সে। সুন্দর একটি প্রস্তাব রাখলো সামীন। সে বললো, ‘ভায়েরা আমার। আমাদের ভেঙে পড়লে চলবে না। মনে রাখবেন আমরা হলাম বিশ্বসেরা রয়েল বেঙ্গল টাইগার। আমরা দেশের অহংকার। সেই অহংকার বাঘের অমর্যাদা কখনোই সহ্য করা হবে না। আমরা সরকারের কাছে আলটিমেটাম দেব। যতদিন না আমাদের স্বার্থ সংরক্ষণ হবে ততদিন রয়েল বেঙ্গল টাইগার বলা যাবে না। যদি বলতে হয়, তবে আমাদের সুখ-দুঃখের কথা বিবেচনা করতে হবে। এই পথ থেকে আমরা মোটেও পিছপা হবো না।’

একথা শুনে সবাই হতভম্ব। কে এই আগুন্তুক? হাততালি দিয়ে সব বাঘ তাকে সমর্থন জানালো। সভাপতিও তাতে সায় দিলেন। সিদ্ধান্ত হলো, বাঘকুলের হয়ে সরকারের কাছে স্মারকলিপি দেবে ওরা। সেই স্মারকলিপি তৈরি করার ভার পড়লো সামীনের উপর। সভা শেষ হলো। সামীন বসলো সভাপতির সাথে। কিন্তু এর মধ্যে ঘটলো বিপত্তি। হঠাৎ ওর শরীর থেকে বাঘের খোলস খুলে পড়লো।

অন্য বাঘেরা তো অবাক! এ যে মানুষের বাচ্চা! এখন উপায়? সামীন কী পালাবে? কিন্তু পালাবার পথ নেই। সুযোগ পেয়ে যেই পালাতে যাবে, অমনি চিৎপটাং। নিজেকে সে আবিষ্কার করলো খাটের নিচে। ঘুম ভেঙ্গে গেল মায়েরও। ফজরের নামাজ পড়তে হবে তাকে। কী রে সামীন, শব্দ হলো কীসের? মা বললেন। সামীন বললো, না মা, কিচ্ছু হয়নি। সামান্য ব্যথা পেয়েছি মাত্র।

চোখ রগড়ে সামীন খাটে ওঠে বসলো। পাশেই ঘুমাচ্ছে বড়ভাই তাসিন। না, তাসিন টের পায়নি। তা না হলে সারাদিন ক্ষেপাবে তাকে।

কিডজ পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!