আমাদের ভূগোল স্যার

আমাদের ভূগোল স্যার ছিলেন হিসাবি। শুধু হিসাবি নয়, ভয়াবহ হিসাবি।

রাব্বী আহমেদরাব্বী আহমেদ
Published : 30 March 2022, 02:32 AM
Updated : 30 March 2022, 02:32 AM

কতটা হিসাবি বলি, তিনি ছিলেন আমাদের ক্লাস টিচার। ক্লাস টিচারের দায়িত্ব ছিল অনেক। ক্লাসের কোন জিনিসপত্র নষ্ট হলে তা ঠিক করার দায়িত্ব ছিল স্যারের। একবার হঠাত্‍ করে ক্লাসের ঘড়ির ব্যাটারি নষ্ট হয়ে গেল। যেহেতু আমাদের ক্যাডেট কলেজে অনেক নিয়ম-কানুন ছিল তাই চাইলেও ব্যাটারি পরিবর্তন করার সরাসরি সুযোগ ছিল না।

এদিকে পরীক্ষাও খুব কাছে চলে এসেছে। আর কলেজ ব্যবস্থায় নতুন ব্যাটারি ইস্যু করারও ঝামেলা অনেক। যেমন, প্রথমে আবেদনপত্র লেখা, পরে তা অধ্যক্ষের কাছে পাঠানো, তারপর অ্যাজুটেন্ট হয়ে স্টোর কিপারের কাছে পৌঁছানো, এরপর ব্যাটারি পাওয়া। শুধু ব্যাটারি নয়, কলেজ ব্যবস্থায় যে কোনো কিছু পাওয়ার সিস্টেম ছিল এটি। যা পেতে মোটামুটি পনের দিন সময় লেগে যায়।

আমরা স্যারকে বললাম, স্যার তার চেয়ে এক কাজ করুন, আপনি একটা ব্যাটারি কিনে আনুন। পরে কলেজ ব্যবস্থায় ব্যাটারি ইস্যু হলে আপনি তা নিয়ে যাবেন। স্যার রাজি হলেন এবং কিছুক্ষণ পর তিনি আমাদের একটা ব্যাটারি এনে দিলেন। আমরাও খুশি স্যারও খুশি। ঘড়িও চলছে ঠিকঠাক।

সেদিন রাতে টিভি রুমে গেলাম। একটা মিউজিক চ্যানেলে সদ্য মুক্তি পাওয়া ক্যাটরিনার হিন্দি গান চলছে আর আমরাও হা হয়ে উপভোগ করছি। এর মধ্যে ঢুকলেন দায়িত্বরত শিক্ষক। তাকে দেখে রিমোট হাতে নিয়ে চ্যানেল ঘোরানোর চেষ্টা করছি, কিন্তু কিছুতেই আর চ্যানেল পরিবর্তন হচ্ছে না। এদিকে স্যারও পড়লেন বিব্রতকর অবস্থায়। তিনি দু’একবার কেশে চলে গেলেন।

স্যার চলে গেলে আমরা অনুধাবন করলাম রিমোটের একটা ব্যাটারি নেই। বুঝতে কিছুই বাকি রইলো না, শুধু আমরা একে অন্যের দিকে তাকিয়ে রইলাম অসহায় দৃষ্টিতে।

আমাদের ক্লাস দেয়াল পত্রিকা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছে। সবার মধ্যে আনন্দ ও উচ্ছ্বাস। স্যারও বেশ খুশি। আমরা সবাই এবার স্যারকে ধরলাম, চকোলেট খাওয়াতে হবে। স্যারও গোবেচারা। বললেন, খাওয়াবেন।

পরদিন দেখি তিনি পকেটে একটা চকোলেট এনেছেন। চকোলেটটা ক্লাস ক্যাপ্টেনের হাতে তুলে দিয়ে বললেন, যেহেতু ও তোমাদের রিপ্রেজেনটেটিভ তাই সবার পক্ষ থেকে ওকে খাওয়ালাম। ও খাওয়া মানেই সবার খাওয়া। আমরা অসহায় কণ্ঠে বললাম, ঠিক স্যার। স্যার হাসলেন। যে হাসির মূল্য অনেক।

একবার ভূগোল ক্লাসে স্যার বিষুবরেখার সংজ্ঞা শেখাচ্ছেন। শোন, যে রেখা পৃথিবীকে উত্তর ও দক্ষিণ দুই গোলার্ধে ভাগ করেছে তার নাম বিষুবরেখা। যেমন ধর, আমার বেল্ট। এটি যদি বিষুবরেখা হয় তবে আমার উপরের অংশ উত্তর গোলার্ধ আর নিচের অংশ দক্ষিণ গোলার্ধ। বুঝেছো?

স্যারের কথা শুনে রনন বলল, স্যার সবই ঠিক আছে, কিন্তু বিষুবরেখা কি ছেঁড়া? স্যার নিজের বেল্টের দিকে তাকিয়ে দেখলেন তা খানিকটা ছেঁড়া। তিনি অসহায়ের মতো হাসি দিয়ে বললেন, ওই ধর আর কি!

কিছুদিন পর স্যার নতুন বেল্ট পরে এসেছেন। সেদিন ভূগোল ক্লাসে অংক করতে গিয়ে রনন ধরা খেল। স্যার রননকে দাঁড় করিয়ে বললেন, ওই রনন বল, বিষুবরেখা কাকে বলে? রননের সোজা সাপ্টা উত্তর, যে রেখা পৃথিবীকে উত্তর ও দক্ষিণ দুটি গোলার্ধে ভাগ করে এবং প্রথমে ছেঁড়া থাকলেও পরবর্তীতে বায়ুমণ্ডলীয় চাপে তা নতুন হয়ে যায় তাকে...।

এটুকু শুনে স্যার বললেন, থাক থাক আর বলতে হবে না। তুমি অংকই করো বাবা।

স্যারের সঙ্গে আমাদের প্রথম পরিচয়টাও মজার। সপ্তম শ্রেণিতে নতুন ভর্তি হয়েছি। কলেজে একদম নতুন।

এক একজন স্যার ক্লাসে এসে তাদের প্রথম পরিচয় দেয় এভাবে- আমি অমুক, আমি তমুক বিষয় পড়াবো। তো একদিন স্যার এসে বললেন, ক্যাডেটস, আমার নাম নবীন কুন্ডু। পেছন থেকে জনৈক ক্যাডেট চাপা স্বরে বলল, ভালোবাসি মাছের মুন্ডু।

আমরা সবাই একত্রে হেসে উঠলে স্যার ধমক দিয়ে বললেন, কে কে বলেছো? কেউ মুখ খুললো না। পিনপতন নিরবতায় শুধু স্যারের কণ্ঠস্বর প্রতিধ্বনিত হলো কয়েকবার।

আগের পর্ব

কিডজ পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!