সাদা ভেড়ার চালাকি

[মূল বই: স্কটিশ ফেইরি অ্যান্ড ফোক টেইলস, সংগ্রহ ও সম্পাদনা: স্যার জর্জ ডগলাস বার্ট, প্রকাশকাল ১৯৪৩]

তাবাসসুম আরজুবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 March 2022, 03:12 AM
Updated : 21 March 2022, 03:12 AM

অনেকদিন আগে এক দেশে বাস করতো এক কৃষক। তার ছিলো সাদা রঙের সুন্দর এক ভেড়া।

সেই দেশে একবার এক উৎসবের প্রস্তুতি শুরু হলো, কৃষক ভাবলো এবার সে তার ভেড়াটাকে খেয়ে ফেলবে, উৎসব পালন করবে।

কিন্তু ভেড়া এই পরিকল্পনার কথা জেনে গেলো! আর সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি থেকে পালিয়ে গেলো।

কিছুদূর যাওয়ার পর ভেড়ার সঙ্গে দেখা হলো ষাঁড়ের।

কী খবর ভেড়া, কই যাচ্ছো তুমি? ষাঁড় বললো।

নিজের জীবন বাঁচাতে পালিয়েছি। ওরা আমাকে উৎসবের জন্য মেরে ফেলবে।

কী বলো! তাহলে তো ওরা আমাকেও মেরে ফেলবে।

তাহলে তুমিও চলো আমার সঙ্গে। দল ভারি হলে ওরা আমাদের কিছু করতে পারবে না।

এই বলে তারা একসঙ্গে হাঁটতে শুরু করলো। পথের মধ্যে দেখা হলো এক কুকুরের সঙ্গে।

অই সাদা ভেড়া, কী করছো? কুকুর বললো।

নিজের জীবন নিয়ে পালাচ্ছি। এই উৎসবে ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।

ওরে বাবা! তাহলে তো ওরা আমার সঙ্গেও একই কাজ করবে। আমিও যাবো তোমাদের সঙ্গে।

চলো তাহলে, ভেড়া বললো।

এরই মধ্যে বেড়ালের সঙ্গে দেখা হলো। বেড়ালকেও একই কথা বলতেই ভয়ে বেড়াল তাদের দলে যোগ দিলো। একইভাবে মোরগ, হাঁসও সেই দলে ভিড়লো।

সারারাত তারা হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে পড়লো। কাছাকাছি কোনো একটা বাড়ি দেখলে সেখানে তারা থাকবে বলে ঠিক করলো। অনেক খুঁজে খুঁজে একটি বাড়ি দেখতে পেলো সবাই।

বাড়ির কাছাকাছি এসে তারা ঠিক করলো, জানালার ফাঁক দিয়ে সবাই মিলে খেয়াল করবে আদৌ বাসায় কেউ আছে কিনা।

ওমা! এই তো দেখি কয়েকজন চোর টাকা গুণছে। এই দৃশ্য দেখেই সাদা ভেড়া বললো, শুনো সবাই, আমরা এই বাড়িতে ঢুকবো। ওদের বিদায় করে দিয়ে আমরাই থাকবো। শুনেই খুশিতে সবাই চিৎকার করে বললো, আচ্ছা আচ্ছা তাই হবে।

পশুদের এই চিৎকার হঠাৎ শুনতে পেয়ে চোররা ঘর থেকে বের হয়ে গেলো। কিন্তু কাউকেই দেখতে পেলো না। এরই মধ্যে ওরা দৌড়াতে দৌড়াতে গাছেদের ভিড়ে দাঁড়িয়েছে। আর দূর থেকে সাদা ভেড়া, ষাঁড়, কুকুর, বেড়ালসহ সবাই মিলে চোরদের দিকে নজর রাখছিলো। চোরেরা ঘর থেকে বের হয়ে হাঁটার জন্য কিছুদূর চলে গেলেই সঙ্গে সঙ্গে ওরা দৌড়ে ঘরে ঢুকে পড়লো আর সব টাকা নিয়ে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিলো।

টাকা গুণতে গুণতে আর নিজেদের মধ্যে ভাগ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়লো ওরা। ভেড়া বললো, অই শুনো সবাই, দিন তো পার হয়ে গেলো। আজ রাতে কোথায় ঘুমাবে তোমরা? আমি তো ঘরের মাঝখানে ঘুমাবো।

ষাঁড় বললো, আমি সামনের দরজার পাশে ঘুমাবো।

কুকুর বললো, আমি আগুন যেখানে জ্বলচ্ছে তার পাশে ঘুমাবো।

বেড়াল বললো, আমি টেবিলের মোমবাতির পাশে ঘুমাবো।

মোরগ বললো, আমি ঘরের চালের ওপর ঘুমাবো।

হাঁস বললো, আমি বিছানায় ঘুমাবো।

এইদিকে চোরদের একজন বাড়ির পেছনের দরজা দিয়ে ঘরে ঢুকে খেয়াল করার চেষ্টা করে বাড়িতে কেউ আছে কিনা। কিন্তু এতো অন্ধকারের মধ্যে সে কিছুই দেখতে পাচ্ছিলো না।

আস্তে আস্তে চোরটা টেবিলের পাশে গিয়ে পকেট থেকে দেয়াশলাই বের করে মোমবাতি জ্বালানোর চেষ্টা করতেই বেড়াল তার হাতে খামচি দেয়। শব্দ শুনে কুকুর ঘুম থেকে উঠে চোরকে দেখে আগুন যেখানে জ্বলছিলো তার পাশে পানির বালতি ছিলো, সে ওই পানি দিয়ে মোমবাতি নিভিয়ে ফেললো।

চোর আর কিছুই দেখতে পাচ্ছিলো অন্ধকারে, সে ঘুরতে ঘুরতে ঘরের মাঝখানে আসতেই ভেড়া তাকে ঘুষি দিলো আর যেই না ঘুষি খেলো চোর সামনের দরজায় টলতে টলতে চলে গেলো আর সামনের দরজায় বসে থাকা ষাঁড় তাকে দিলো এমন এক লাথি সে বিছানার দিকে চলে গেলো।

এরমধ্যে মোরগ জানালা দিয়ে ঢুকে পড়লো। হাঁস ও মোরগ দুইজন চোরকে তাড়া দিতেই চোর দৌড়ে পালিয়ে গেলো। দৌড়েই বনের মধ্যে সে দেখতে পেলো তার দলকে। দলের সর্দারকে সে সব জানালো।

চোর অন্ধকারে কাউকে দেখতে পায়নি। সে ভাবেনি এগুলো জীবজন্তু। সে তার সর্দারকে বললো সব শক্তিশালী মানুষে ঘর ভরে আছে। সেখানে ঢুকলে মৃত্যু নিশ্চিত। এই কথা শুনে চোরের দল আর সাহসই পেলো না ঘরে ঢোকার।

আর এভাবে ভেড়া ও তার দল সুখে-শান্তিতে সেই বাড়িতে বাস করতে লাগলো।

কিডজ পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!