শিশুর গলায় কিছু আটকে গেলে কী করবেন

[‘বেবিসেন্টার ডটকম’-এ প্রকাশিত এ লেখাটি লিখেছেন মা ও শিশু বিষয়ে ২০ বছর ধরে গবেষণা করা কারেন মাইলস, পর্যালোচনা করেছেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ জেনিফার শু। দরকারি এ লেখাটি বাংলাভাষী বাবা-মায়েদের জন্য অনুবাদ করা হলো।]

উম্মে হাবীবা সিলভীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 March 2022, 06:14 AM
Updated : 19 March 2022, 06:15 AM

আপনি আপনার সন্তানকে সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখতে পারবেন না, শিশুরা এটা ওটা মুখে দেয় তা-ও সবটুকু নজরে রাখা সম্ভব নয়। কিন্তু আপনি আগে থেকে সচেতন থাকতে পারেন এবং কোন ধরনের দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে তার সতর্ক ব্যবস্থাপনা ঘরে রাখতে পারেন।

শিশু যদি ধারালো কিছু গিলে ফেলে বা শ্বাসনালীতে কোনো জিনিস আটকে যায় তাহলে এখনই চিকিৎসা সহায়তা নিন। কিছু জিনিস আছে শিশুরা খেলেও মলের সঙ্গে বের হয়ে যায়। কিন্তু যদি আপনার শিশুর দম বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে কার্ডিও-পালমোনারি রিসাসিটেশন (সিপিআর) এবং প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত থাকুন।

আমাদের কাছে মা-বাবা নানা ধরনের প্রশ্ন করেন। এমন কিছু প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো-

১. আমার খালি সন্দেহ হয় আমার সন্তান একটা মার্বেল গিলে ফেলেছে। আমার কী করা উচিত?

আপনার শিশু যদি এমন কিছু গিলে ফেলে যা তীক্ষ্ণ বা বিপজ্জনক নয়, যদি এটি তার গলায় আটকে আছে বলে মনে না হয়, তাহলে সম্ভবত এটা নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যাবে, হতে পারে বস্তুটা শিশুর মলের মধ্যে দিয়ে বের হয়ে যাবে।

সতর্কতা: শিশুকে কোনভাবেই জোর করে বমি করানোর চেষ্টা করবেন না। শিশু কাশতে থাকলে কাশতে দিন।

অপেক্ষা করুন, শিশুর উপর নজর রাখুন এবং তার যদি কোন সমস্যা দেখেন তবে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। সমস্যাগুলো হতে পারে- বমি, ঢলে পড়া, অস্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস, জ্বর বা বুক, গলা, মুখ, পেট বা ঘাড়ে ব্যথা।

আপনি যদি আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আপনার সন্তানের মলের মধ্যে বস্তুটি দেখতে না পান তবে চিকিৎসকের কাছে যান। পরীক্ষা করতে শিশুকে একটি ছাঁকনিতে মলত্যাগ করান এবং এর উপর গরম পানি ঢেলে দেখুন বস্তুটি বের হলো কিনা।

তবে আপনি যদি মনে করেন যে আপনার সন্তান ধারালো কিছু যেমন টুথপিক বা সুই, আবার বিপজ্জনক বস্তু যেমন একটি ছোট ব্যাটারি বা চুম্বক গিলে ফেলেছে, তাহলে এখনই চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান, শিশুকে যদি সুস্থ মনে হয় তাহলেও।

২. খাবার খেতে বসে যদি শিশুর দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয় (চকিং), শ্বাসরোধ হয় বা বিষম খায় তাহলে কী করবো?

যদি আপনার শিশুর দম বন্ধ হয়ে যায় এবং অজ্ঞান হয়ে যায় বা শ্বাস না নেয় তাহলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান। তার আগে কার্ডিও-পালমোনারি রিসাসিটেশন (সিপিআর) দিতে পারেন। কীভাবে একটি শিশুকে সিপিআর দিতে হয় (১২ মাস বা তার বেশি) সে সম্পর্কে কোনো চিকিৎসকের সহায়তায় সচিত্র নির্দেশিকা জেনে রাখতে পারেন।

৩. এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা কীভাবে কাজ করেন?

এটি নির্ভর করে আপনার শিশু কী গিলে ফেলেছে, এটি গলায় আটকে আছে কিনা এবং এটি কোথায় রয়েছে এসব তথ্যের ওপর। বস্তুর অবস্থান চিহ্নিত করার জন্য সম্ভবত এক্স-রে করার নির্দেশনা দেবেন চিকিৎসক।

যদি চিকিৎসক মনে করেন যে বস্তুটি আপনার সন্তানের খাদ্য পরিপাক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিরাপদে সরে যাবে, তাহলে আপনাকে বলা হতে পারে আগামী কয়েকদিন আপনার সন্তান এবং তার মলত্যাগের উপর নজর রাখতে। চিকিৎসক সিটি স্ক্যান করার নির্দেশনা দিতে পারেন।

যদি বস্তুটি আপনার সন্তানের শ্বাসনালীতে থাকে বা তার খাদ্যনালী বা পাকস্থলীতে আটকে থাকে –এবং এটি যদি ধারালো ও বিপজ্জনক হয় তাহলে চিকিৎসক তা অপসারণের ব্যবস্থা করবেন। গিলে ফেলা বস্তু অপসারণের কয়েকটি উপায় আছে। খাদ্যনালী বা পাকস্থলীর বস্তু অপসারণ করতে ব্যবহৃত হয় ‘এন্ডোস্কোপ’, শ্বাসনালীতে আটকে থাকা বস্তু সরাতে ব্যবহার করা হয় ‘ব্রঙ্কোস্কোপ’, এবং গিলে ফেলা বস্তু অপসারণের জন্য অস্ত্রোপচারকে বলা হয় ‘সার্জারি’।

৪. অখাদ্য মুখে পুরা বা গিলে ফেলা থেকে শিশুকে বিরত রাখার কোন উপায় আছে কি?

প্রথমত না। প্রায় ৪ বছর বয়স পর্যন্ত সব শিশু এ ঝুঁকিতে থাকে। সবচেয়ে সহজাত ও গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো শিশুকে চারপাশ সম্পর্কে শেখানো, সর্বোত্তম পরিকল্পনা হলো প্রতিরোধ সম্পর্কে জানা এবং সতর্ক থাকা।

৫. সতর্ক থাকতে আমি কী কী ব্যবস্থা নেবো?

কিছু টিপস দেওয়া যেতে পারে-

ক.

চারপাশে ১ ১/৪ ইঞ্চি বা ২ ১/৪ ইঞ্চির চেয়ে ছোট যে কোন খেলনা বা বস্তু শ্বাসরোধের (চকিং) জন্য ঝুঁকি। কোন বস্তুর নিরাপত্তা মূল্যায়ন করতে ‘চোক টেস্টার’ ব্যবহার করতে পারেন। যদি বস্তুটি সিলিন্ডারের মধ্যে সম্পূর্ণ ফিট হয়ে যায় তবে এটা গিলে ফেললে দম বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি আছে।

খ.

মাঝে মাঝে আপনিও নিজেকে শিশু হিসেবে ভাবতে পারেন, একটা শিশু তার চারপাশের কোন কোন জিনিস মুখে পুরে নিতে পারে তা খুঁজে বের করুন এবং সেগুলো হাতের নাগালের বাইরে নিয়ে যান। সবচেয়ে বিপজ্জনক হলো- ছোট ব্যাটারি, বোতাম, গয়না, পুঁতি, পিন, ফলের বিচি, কাগজের ক্লিপ, ট্যাপ, স্ক্রু, পেরেক বা মার্বেল ইত্যাদি।

গ.

রেফ্রিজারেটরে চুম্বক রাখবেন না বা কাগজপত্র সেঁটে রাখার জন্য পেরেক বা পিন ব্যবহার করবেন না।

ঘ.

বিশেষ করে খাবার টেবিল এবং শিশুর ঘুমানোর জায়গার চারপাশে সতর্ক দৃষ্টি রাখুন।

ঙ.

আপনার তত্ত্বাবধানে না রেখে শিশুর মুখে রাবার বেলুন দেবেন না। বেলুন শ্বাসরোধের ঝুঁকি বাড়ায়, ফিতা বা গোলাকার রাবারও শ্বাসরোধের ঝুঁকি।

চ.

আপনার পার্স এবং ডায়াপার ব্যাগ নাগালের বাইরে রাখুন, এবং নিশ্চিত হোন যে ঘরের অন্য সদস্যরাও একই কাজ করে।

ছ.

আপনি যখন অন্য কারও বাড়িতে যাচ্ছেন তখনও শিশুর দিকে বিশেষ সতর্কদৃষ্টি রাখুন।

জ.

খেয়াল রাখুন যেন আপনার শিশু শুধু বয়স-উপযুক্ত খেলনা দিয়ে খেলে। যেমন, অনেক খেলনা ৩ বা তার বেশি বয়সী শিশুর জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করে। কারণ এসব খেলনার ছোট অংশ থাকে যা ছিটকে যেতে পারে এবং শ্বাসরোধের কারণ হতে পারে। শিশুকে অবশ্যই বয়স উপযোগী খেলনা দিন।

কিডজ পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!