গিট্টু ইংরেজি কী

পহেলা বৈশাখের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে সবাই বের হওয়ার সময় পত পত করে শব্দ হলো। দুই থেকে তিনজন গড়িয়ে পড়ল।

রাব্বী আহমেদরাব্বী আহমেদ
Published : 9 March 2022, 08:05 AM
Updated : 9 March 2022, 08:08 AM

তাৎক্ষণিক বেগ সামলাতে অধ্যক্ষ স্যার কমান্ড দিলেন, হোয়াট ইজ হ্যাপেনিং? স্যারের উত্তর পেতে অপেক্ষা করতে হলো না। ততক্ষণে সবাই বুঝে গেছে পাঁচ থেকে ছয়জনের পাঞ্জাবিতে পর্যায়ক্রমে গিট্টু মারা হয়েছে।

গিট্টুটা এমনভাবে মারা হয়েছে যে একজনের পাঞ্জাবির সঙ্গে আরেকজনের পাঞ্জাবি সংযোগ হয়ে গেছে। এই কাজ করেছে অষ্টম শ্রেণির কিছু ক্যাডেট। আর ভিকটিম নবম শ্রেণি। কোন একটি ব্যাপার নিয়ে হয়তো মন কষাকষি চলছে। দীর্ঘসময় ধরে অনুষ্ঠান চলার কারণে সবার মধ্যেই ঘুমঘুম ভাব চলে আসে। এই দুঃসাহসিক কাজটি করা হয়েছে এসময়ে।

নবম শ্রেণির ধরাশায়ী ক্যাডেটরা তখন গিট্টু ছাড়াতে ব্যস্ত। অনুষ্ঠান শুরুর আগে সবাই ব্রাউনিয় গতির মত এলোমেলো বসে থাকায় বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে কে এই দুঃসাহসিক কাজটি করেছে। অডিটরিয়ামে তখন চাপা হাসির রোল পড়ে গেছে।

কলেজ সাংস্কৃতিক অধিনায়ক ফয়সাল কমান্ড দিয়ে সবাইকে শান্ত করলো। অধ্যক্ষ স্যার ঘোষণা দিলেন  অষ্টম এবং নবম শ্রেণির ক্যাডেটরা অডিটরিয়ামে বসে থাকবে। অষ্টম শ্রেণির বুক তখন কাঁপছে। গিট্টু রহস্য ফাঁস হলে বিপদেই পড়তে হবে।

এই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী হোসেন। গতকাল বিকেলে বাস্কেট খেলার সময় নবম শ্রেণির ক্যাডেটরা অষ্টম শ্রেণিকে তাড়িয়ে দেয়। ঘটনার সূত্রপাত সেখান থেকে। ইমিডিয়েট সিনিয়র হওয়ার কারণে সরাসরি এর প্রতিশোধ নেওয়াটা অসম্ভব। তাই কৌশলে এদের শিক্ষা দিতে হবে।

ক্লাসে ঘটনা জানাতেই স্বেচ্ছাসেবী কিছু ক্যাডেট উঠে এল। এরা এই ডেয়ারিং কাজটি করতে চায়। কাজটি করতে পারলে একদিক থেকে সুবিধা। রাতারাতি হিরো বনে যাওয়া যাবে। হোসেন আরাফাত ও এহসানকে কাজ বুঝিয়ে দিল। সিনিয়রদের চোখে আরাফাত ও এহসান দুধে ধোয়া তুলসী পাতা টাইপ। তাই ধরা পড়লেও এদের কিছু না বলার সম্ভাবনা বেশি।

প্রথমে রাজি না হলেও ক্লাসমেটদের চাপে ব্যক্তিস্বার্থ উত্‍সর্গ করতে হলো। আর অতি উত্‍সাহী ডেয়ারিং ক্যাডেটদের কাজ হলো কখন নবম শ্রেণির ক্যাডেটদের মধ্য ঘুম ঘুম ভাব চলে আসবে এই ব্যপারটা লক্ষ্য রাখা। অডিটোরিয়ামে আজ সেভাবেই প্লান করে বসা। যদিও মূল পরিকল্পনাটা হোসেনের করা, কিন্তু ও আসেনি। পেটে ব্যথার অজুহাত দেখিয়ে হাসপাতালে থেকে গেছে। কারণটা খুব স্বাভাবিক। নবম শ্রেণির চোখে হোসেন হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বিচ্ছু। হোসেন সেখানে থাকলে এই কাজ হোসেন না করলেও ওকে দোষারোপ করা হত। এই দায়ভার থেকে মুক্তি নিতেই হোসেন অডিটোরিয়ামে আসেনি।

প্লান যথারীতি সফল হলো। সব ঠিক। তবে অধ্যক্ষ স্যারের চোখে পড়ায় ব্যাপারটা এলোমেলো হয়ে গেছে। অধ্যক্ষ স্যার আর্মির লোক। যদি বিকেলে সবাইকে পানিশমেন্ট দেয় তবে করার কিচ্ছু করার থাকবে না। সিনিয়রের পাঞ্জাবিতে গিট্টু। ভয়াবহ অপরাধ। এহসান আর আরাফাতের বুক দড়ফড় করে কাঁপছে। স্যারের চোখের দিকে তাকিয়ে সরাসরি মিথ্যে বলা কঠিন। স্যার যদি জিজ্ঞেস করেন কে গিট্টু মেরেছে, অকপটে স্বীকার করতে হবে।

হোসেনের পরিকল্পনায় যে একটু ভুল ছিল এখন ধরা পড়ল। জায়গাটা অডিটোরিয়াম, এরপর বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। কলেজের প্রধান প্রধান ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকবেন। এদের সামনে মিথ্যে বলার উপায় নেই।  ধরা পড়লে নির্ঘাত কলেজ থেকে বহিষ্কার । অধ্যক্ষ স্যার আয়েশী ভঙ্গিতে মঞ্চে গেলেন। সবার সামনে অষ্টম শ্রেণিকে বসিয়ে নবম শ্রেণিকে তার পেছনে বসালেন। শুরু করলেন তার বক্তব্য।

সবাই ভেবেছিল স্যার গিট্টু মারা প্রসঙ্গে কিছু বলবেন। তিনি শুরু করলেন দীর্ঘ বক্তব্য। সাধারণ আদব কায়দা সম্পর্কে বিশাল জ্ঞান। ক্যাডেট কলেজে যে এসব বাঁদরামি করতে কাউকে রাখা হয়নি এ সম্পর্কে অবহিত করলেন। এদিকে সবার অবস্থা বেশ খারাপ। এমনিতেই প্রচণ্ড ক্ষিদে পেয়েছে, তারপর স্যারের বক্তব্য। এদিকে এহসান আর আরাফাত মনে মনে দোয়া ইউনুস পড়ছে। কোনভাবে স্যার গিট্টু প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেলেই হয়।

এহসান আর আরাফাতের দোয়া আল্লাহ শুনলেন না। স্যার বলা শুরু করলেন, এই যে গিট্টুটা তোমরা মারলে এ থেকে কী লাভ হলো! পাঞ্জাবি ছিঁড়ে গেল। তোমরা দেশের এত ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ো, তোমরা যদি এই কাজ করো বস্তির ছেলেরা কী করবে। কথা বলতে বলতে তিনি রেগে গেলেন। স্যার রেগে গেলে ইংরেজিতে কথা বলেন। তিনি বললেন, হু ইজ দ্যট ব্লাডি ক্যাডেট হু ডিড দিজ...

এই পর্যন্ত এসে তিনি থেমে গেলেন। কিছুতেই আর গিট্টুর ইংরেজি খুঁজে পান না। এদিকে সবার মুখ বেশ হাসি খুশি। কিছুক্ষণ হা হুঁতাশ করার পর তিনি হতাশ চোখে ক্যাডেটদের দিকে তাকিয়ে বললেন, হোয়াট ইজ দ্য ইংলিশ অফ গিট্টু? ক্যাডেটদের মধ্য থেকে কোন উত্তর এলো না। এমন সময় স্যারের পিয়ন এসে বলল, স্যার বাসা থেকে ম্যাডামের জরুরি ফোন। স্যার কথা অসমাপ্ত রেখেই উঠে এলেন। হেঁটে যাওয়ার সময় লক্ষ্য করলেন তার পাঞ্জাবিতেই বিশাল একটা গিট্টু।

তিনি যথাসম্ভব চেষ্টা করলেন ব্যাপারটা ক্যাডেটদের যেন চোখে না পড়ে। কিন্তু লাভ হলো না। অনেকেরই চোখে ধরা পড়লো। হঠাত্‍ স্যারের মনে হল গতকাল স্যারের ছোট মেয়ে মাইশা পাঞ্জাবি নিয়ে কী যেন একটা করছিল। তিনি আজ তাড়াহুড়ো করে অনুষ্ঠানে আসাতে এতকিছু খেয়াল করেননি। কাজটা তাহলে মাইশাই করেছে।

এসব ভাবতেই তিনি অতি দ্রুত বের হয়ে এলেন। স্যার চলে যাওয়ার পর সবাই বেশ মজা পেল। এহসান আর আরাফাত মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো। মনে মনে ভাবলো, প্রিন্সিপাল স্যারের পাঞ্জাবিতে গিট্টু দেওয়ার মত দুঃসাহসী ক্যাডেটও আছে। কি জানি থাকতেও পারে, ক্যাডেটদের দ্বারা সবই সম্ভব।

লেখক: সাবেক ক্যাডেট, কবি ও গবেষক

কিডজ পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!