কাচ্চুম

রাফসান ঈদ করতে বাবা মায়ের সঙ্গে নানাবাড়িতে এসেছে। নানাবাড়ি খুলনা শহরে।

ঝর্না রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 March 2022, 04:27 AM
Updated : 4 March 2022, 04:27 AM

রাফসানের নানাবাড়ি অনেক বড়। বিশাল দোতলা বাড়ি। অনেকগুলো ঘর। লম্বা টানা বারান্দা। বারান্দার মেঝেতে বরফি বরফি ঘর কাটা। আর যে ঘরে রাফসানের নানা-নানি থাকেন সে ঘরের মেঝেটা হলো টুকটুকে লাল। এই ঘরটা রাফসানের খুব পছন্দ। ঘরটার নাম হলো ‘লাল ঘর’।

আর পছন্দ পুকুরঘাট। অনেক বড় পুকুর। সুন্দর পাকা করা ঘাট। তার অনেকগুলো সিঁড়ি। কয়েকটা সিঁড়ি নাকি পাতালপুরীতে চলে গেছে! টুকুন মামা বলেছে পাতালপুরীতে একটা শেকল দৈত্য আছে। যারা সাঁতার জানে না, তাদেরকে পুকুরঘাটে দেখলে সেই দৈত্য টান মেরে পাতালপুরীতে নিয়ে পানির তলায় শেকল দিয়ে বেঁধে রাখে। যাতে সাঁতার কেটে পানির ওপরে চলে আসতে না পারে।

রাফসানের আম্মু অবশ্য টুকুন মামাকে বলেছে, টুকুন, বাচ্চাদের মিথ্যে কথা বলে ভয় দেখাতে নেই। দৈত্য, রাক্ষস ভূত এসব আসলে গল্পেই থাকে। সত্যি সত্যি নেই। তবে তুমি তো সাঁতার জানো না, তাই পুকুরে পড়ে গেলে উঠতে পারবে না, এজন্য একা একা পুকুরপাড়ে যাবে না।

তারপরও রাফসান ভয় পায়। গল্পের দৈত্য যদি সত্যি সত্যি ওকে টান মেরে পানির তলায় নিয়ে যায়! রাফসান অবশ্য আর একটা জিনিসকে খুব ভয় পায় যেটা পুকুরেরপাড়ে থাকে। সেটা হলো বাদুড়।

নানাবাড়ির পুকুরের চারপাশে নানা রকম ফলের গাছ। আম, জাম, কুল, কামরাঙা আর কলাগাছের ঝোপ। এর আগেরবার যখন ওরা এসেছিলো তখন রাফসান পুকুরপাড়ের কলার ঝোপে ঝুলে থাকা মরা পাতা থেকে একটা ধরে টান দিতে গেলে পাতাটা হঠাৎ কিঁ কিঁ শব্দ করে নড়ে উঠেছিল। রাফসান প্রচণ্ড ভয়ে চেঁচিয়ে উঠে এক ছুটে বাড়ির ভেতরে। পরে নানাভাই রাফসানকে কোলে নিয়ে কলাঝোপের কাছে এনে ভয় ভাঙিয়ে ছিলেন। কলার ঝোপের মধ্যে তখনও ঝুলছিলো কয়েকটা বাদুড়।

বাদুড়রা দিনের বেলা ঘুমায় আর রাত্রিবেলা জেগে থাকে। নানাভাইয়ের কোলে চড়ে রাফসান খুব কাছ থেকে দেখেছিলো ঘুমিয়ে থাকা বাদুড়। পা ওপরে আর মাথা নিচের দিকে ঝুলিয়ে কীভাবে ওরা ঘুমায়! ঘুমিয়ে পড়লে ধুপ করে মাটিতেই বা পড়ে যায় না কেন এসব ভেবে রাফসান খুব অবাক হয়েছিলো। আর বাদুড়ের চেহারাটা একটুও ভালো লাগেনি। কেমন যেন ভয়ংকর। মানুষের মতো ছোট ছোট কান, বড় বড় ফুটোওয়ালা নাক। আর লোমে ভরা মুখ। ভ-য়ং-ক-র!

সেই থেকে রাফসান পুকুরপাড়ের কলার ঝোপের ত্রিসীমানায়ও যায় না। যদিও গাছের মধ্যে কলা দেখতে রাফসানের খুব ভালো লাগে। সব সময়ই কোনো না কোনো গাছে কলার ছড়া ঝুলতে থাকে। ছড়ার আগায় একটা লাল টুকটুকে লম্বাটে ফল থাকে। গত বছর রাফসান যখন ওর ডালিয়া খালামনির বিয়েতে নানাবাড়ি এসেছিলো তখন ওইরকম কয়েকটা লাল কলার ফল পেড়ে নানি একটা খাবার রান্না করেছিল। মা-র কাছে রাফসান তার নাম শিখেছিলো কলার মোচা। কিন্তু খায়নি। কারণ ওই খাবারটার মধ্যে কাঁচামরিচ দেওয়া ছিল।

রাফসান মোটেও ঝাল খেতে পারে না। রাফসানের খাবার রান্না করা হয় একদম ঝাল ছাড়া।

রাফসানের ভাইয়া রায়হান ঝাল খেতে পারে। রায়হান ওকে বলে রাফসান হলো দুধের শিশু। ঝাল খেতে পারে না। ও শুধু দুধ খেতে পারে। এ কথা শুনলে রাফসান গলা ছেড়ে চেঁচায়।

বলে, না, আমি দুধের শিশু না। আমি ছেলে। আমি ভাতের ছেলে। নুডলসের ছেলে। ডিমের হালুয়ার ছেলে। আমি দুধ খাই না।

সবাই ওর কথা শুনে হেসে কুটিপাটি হয়। তাতে রাফসানের কান্না আরও বেড়ে যায়। তখন রাফসানের মা ডলি এসে রাফসানকে কোলে তুলে নেয়। রায়হানকে বকা দেয়। বলে, কেন তুমি ওকে শিশু বলছো রায়হান? দেখছো না ও বড় হয়ে গেছে! এই দেখো, রাফসান আমার বুক-সমান লম্বা হয়ে গেছে! আম্মুর কথা শুনে রায়হান দুষ্টু দুষ্টু করে মিটমিটিয়ে হাসে। ভাগ্যিস সেটা আর রাফসান দেখতে পায় না। কারণ আম্মু ততক্ষণে রাফসানের মুখটা বুকের সঙ্গে চেপে ধরে আদর করছে।

রাফসানের বয়স মাত্র পাঁচ বছর। এক বছর হলো স্কুলে ভর্তি হয়েছে। কেজি ক্লাসে। স্কুল খুব ভালো লাগে রাফসানের। স্কুলের গেম টিচার টিটো স্যারকে খুব ভালো লাগে। স্যার ওদের নানারকম খেলা শেখান। আর ভালো খেলতে পারলে ওদের সবাইকে চকোলেট আর ক্যান্ডি দেন। নায়লা মিসকেও ভালো লাগে। নায়লা মিসের চুলগুলো কার্টুন ছবির কুইনের মতো ঝিলমিল করে।

ঈদের ছুটির আগে নায়লা মিস ওদের নানারকম অ্যানিমেলের নাম শিখিয়েছেন। বলেছেন, এটা হলো কোরবানির ঈদ। কোরবানি মানে হলো স্যাক্রিফাইস। কোরবানির ঈদ হলো আল্লাহর কাছে স্যাক্রিফাইস করার ঈদ। এই ঈদে অনেক অ্যানিম্যাল কোরবানি করা হয়। মানে নানারকম পশু কোরবানি করা হয়। যেমন গরু, ছাগল, ভেড়া। আরব দেশে উট আর দুম্বাও কোরবানি করা হয়।

সবগুলো কোরবানি অ্যানিম্যালের নাম জানে রাফসান। গরু হলো কাউ, ছাগল হলো গোট, ভেড়া হলো শিপ, উট হলো ক্যামেল। আর দুম্বার কোনো আলাদা নাম নেই। মিস বলেছেন অ্যা কাইন্ড অব শিপ। ওটার গা নাকি মোটা লোমের কম্বলে ঢাকা থাকে। রাফসানের খুব দুম্বা দেখার ইচ্ছে করছিলো তখন। মিস বলেছেন দুম্বা দেখতে হলে আরব দেশে যেতে হবে। আমাদের দেশে দুম্বা পালন করা হয় না।

রাফসানের আরেকজন নানাভাই সৌদি আরব থাকেন। তিনি ফোন করে বলেছেন একবার রাফসানকে প্লেনে চড়িয়ে সৌদি আরব নিয়ে যাবেন। তারপর দুম্বার ফার্মে নিয়ে যাবেন। সেখানে অনেক দুম্বা দেখতে পাবে।

রাফসানরা যেদিন নানাবাড়ি এলো সেদিনই রাফসানের নানাভাইয়া একটা ছাগল কিনে নিয়ে এলেন কোরবানি দেওয়ার জন্য। দুদিন বাকি আছে ঈদের। এই দুদিন ছাগলটাকে ভালো করে খাইয়ে দাইয়ে যত্ন করা হবে। ওটাকে পুকুরপাড়ে আমতলায় বেঁধে রাখা হলো।

ছাগল দেখে রাফসান খুব খুশি। ছাগলের গায়ে কোঁকড়া কোঁকড়া ঘন লোম। লালচে বাদামি লোমগুলো বেশ শক্ত। রাফসানের মনে হয় এটা বোধ হয় সৌদি আরবের মরুভূমি থেকে এসেছে, রোদের তাপে ওর লোম শক্ত হয়ে গেছে! কী যেন নাম ওই ছাগলের! মিস বলেছিলেন! ইংরেজি নামটা মনে পড়ছে। অ্যা কাইন্ড অব গোট! তারপর মনে পড়ে যায়!

নানাভাই হাসিমুখে ছাগলটার দিকে চেয়ে আছেন।

রাফসানকে বলেন, কি নানুভাই ছাগল কেমন?

রাফসান বলে, এটা কি লুম্বা নানাভাইয়া?

লুম্বা?

হ্যাঁ, ওই যে বড় বড় লোম! মিস বলেছেন, অ্যা কাইন্ড অব গোট। এটা কি আরব দেশ থেকে এনেছো নানা ভাইয়া?

রাফসানের প্রশ্ন শুনে নানাভাইয়া আগেই হাসতে শুরু করেছিলেন। এখন হো হো করে বাড়ি কাঁপিয়ে হাসতে থাকেন। বলেন, লুম্বা! হো হো হো। লুম্বা! হা হা হা। কই রে ডলি, এদিকে আয় রে। লুম্বা দেখে যা! লুম্বা!

ছাগল এসব হই চই কিছুই শুনছে না। ওটা গলার দড়ি টেনে টেনে এদিকে ওদিকে মুখ ঘুরিয়ে ঘাস খেয়ে চলছে।

হাঁক ডাকে সবাই এসে হাজির হয় পুকুরপাড়ের আমতলায়। রাফসানের আম্মু ছাগলটার গায়ে হাত বুলিয়ে সুন্দর করে বুঝিয়ে বলে, যে ছাগলের গাভর্তি বড় বড় লোম সেটার নাম দুম্বা বাবা! কিন্তু এটা দুম্বা না। তবে তোমার দেওয়া নামটাও সুন্দর হয়েছে। লুম্বা। এটার নাম লুম্বা-ই থাক।

চলবে…

কিডজ পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!