হাবলের উত্তরসূরি জেমস ওয়েব

অনলাইনে আমাদের দেখা সুন্দর সুন্দর ডিপ স্পেস, নেবুলা আর গ্যালাক্সির ছবিগুলো হাবল টেলিস্কোপের তোলা ছবি। হাবলের বয়স প্রায় শেষের দিকে, তাই প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল নতুন প্রযুক্তির।

যোবায়ের ইবনে আলীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Dec 2021, 07:11 AM
Updated : 27 Dec 2021, 07:11 AM

তাই নাসার ভাষায় জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপকে  হাবল টেলিস্কোপের উত্তরসূরি হিসেবে পৃথিবীর বাইরে পাঠানো হচ্ছে  যা হাবল টেলিস্কোপের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী এবং উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন।

২৫ ডিসেম্বর দক্ষিণ আমেরিকার ফ্রেঞ্চ গায়ানা থেকে সেখানকার  স্থানীয় সময় সকাল ৯.২০ মিনিটে ( বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টা বেজে ২০ মিনিটে ) এই টেলিস্কোপ  উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। আজ থেকে ২৯ দিন পর পৃথিবী থেকে ১৫ লাখ কিলোমিটার দূরে ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্টে গিয়ে ভেসে বেড়াবে এ টেলিস্কোপ ।

এ স্থানে সব বস্তু ভেসে থাকতে পারে। সেখানে পৌঁছানোর ৫-৬ মাস পর পুরোপুরি কাজ করতে শুরু করবে এ টেলিস্কোপ। এরপর হাই-ফ্রিকোয়েন্সি রেডিও ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে এটি যোগাযোগ করবে পৃথিবীতে থাকা বিজ্ঞানীদের সঙ্গে।

নাসার ভাষ্যমতে এটি এযাবৎকালের সবচেয়ে শক্তিশালী টেলিস্কোপ। মার্কিন মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্র নাসা, ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি ও কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সি যৌথভাবে তৈরি করেছে এ টেলিস্কোপ। হাবল টেলিস্কোপের চেয়ে ১০০ গুণ শক্তিশালী এবং মূল আয়নার ব্যাস চারগুণের এ টেলিস্কোপটি তৈরিতে খরচ হয়েছে প্রায় ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং এটি তৈরিতে সময় লেগেছে ২৫ বছর!

পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে জটিল ইঞ্জিনিয়ারিংগুলোর একটি হলো এ টেলিস্কোপ। দানবাকৃতির আকারের জন্য একে ভাঁজ করে করে রকেটে পুরে পাঠানো হয়েছে। ৩০০ এরও বেশি সূক্ষ্ম যন্ত্রকে কাজ করতে হবে এ ভাঁজ খুলতে হলে। এটিকে সংস্কার করারও থাকবে না কোনো সুযোগ।  এর মধ্যে কোনো একটি যন্ত্র সময়মতো কাজ না করতে পারলে ব্যর্থ হবে এ মিশন। এজন্য দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই পাঠানো হচ্ছে এ টেলিস্কোপকে।

জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ  আমাদের মহাবিশ্বের সৃষ্টির শুরুর দিকে ছবিও দেখাতে পারবে। গবেষকরা মহাকাশে যতো দূরে তাকাবেন ততো অতীত দেখতে পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। একটি টেলিস্কোপ যতো বড় হয় মহাবিশ্বের ততো দূরের দৃশ্য দেখা সম্ভব হয়, এবং এ জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের মূল আয়নার ব্যাস  হাবল টেলিস্কোপের ৪ গুণ। এর কার্যক্ষমতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রকৌশলীরা বলেছেন, চাঁদপৃষ্ঠে থাকা একটি মৌমাছিও শনাক্ত করা যাবে এ শক্তিশালী টেলিস্কোপ দিয়ে।

পৃথিবীতে এখনও যেসব নক্ষত্রের আলো পর্যন্ত এসে পৌঁছায়নি এমন সব নক্ষত্রকে দেখতে পারা যাবে এ টেলিস্কোপ দিয়ে। গ্যাস, মেঘ কিংবা ধুলাবালির কারণে দেখা যায় না এমন নক্ষত্রকেও শনাক্ত করতে পারবে শক্তিশালী এ টেলিস্কোপ। এর ফলে আগে মহাকাশের এমন অনেক দৃশ্য দেখা যাবে যেসব এর আগে কখনই দেখতে পায়নি মানুষ। পৃথিবীর এবং মহাবিশ্বের সৃষ্টির রহস্যের সমাধান মিলবে এ টেলিস্কোপ দিয়ে, এমনটাই ধারণা করছেন মহাকাশবিজ্ঞানীরা। তারকাদের গঠন, পৃথিবীর বাইরে প্রাণীর অস্তিত্ব খুঁজে বের করা এবং পৃথিবীর বাইরে মানুষের জন্য বসবাসযোগ্য জায়গার খোঁজ নিবে এ টেলিস্কোপ।

সত্যি কি এলিয়েন আছে?  এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে কি এ টেলিস্কোপ? কোটি কোটি কৌতূহলী মানুষের জানার তেষ্টাকে কি আরও বাড়িতে দিতে পারবে বুড়িয়ে যাওয়া হাবল টেলিস্কোপের চেয়েও ১০০ গুণ বেশি শক্তিশালী এ উত্তরসূরী টেলিস্কোপ?  এমন হাজারও প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে কৌতূহলী এবং বিজ্ঞানপ্রিয় মানুষদের মনে। এবার অপেক্ষার পালা।

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!