জালাল উদ্দিন রুমির গল্প: টিয়ে ও বণিক

অনেক অনেক আগে পারস্যে এক বণিক বাস করতেন। তিনি বিভিন্ন দেশে ব্যবসা করতেন।

রবিউল কমলবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Nov 2021, 09:09 AM
Updated : 27 Nov 2021, 05:45 PM

দেশ-বিদেশে ঘুরতে ঘুরতে বণিকের অনেক বন্ধু হয়েছিল। তিনি ভারতেও ব্যবসা করতে আসতেন। ভারতে তার একজন ভালো বন্ধু ছিল। সেই বন্ধু বণিককে একটি সুন্দর টিয়ে পাখি উপহার দিয়েছিল। টিয়েটি খুব সুন্দর করে কথা বলত, আর মিষ্টি সুরে গান গাইত।

বণিক টিয়েকে খুব ভালোবাসতেন। তাই টিয়ের জন্য একটি সোনার খাঁচা বানালেন। সেই খাঁচাতেই থাকতো বণিকের প্রিয় টিয়ে।

এরপর পেরিয়ে গেল অনেক বছর। হঠাৎ করে বণিকের আবার ভারতে কাজ পড়ে গেল। তিনিও ভারতে আসার সিদ্ধান্ত নিলেন। তার আগে তিনি বাড়ির সবার কাছে জানতে চাইলেন, সবাই কী উপহার চায়। ও হ্যাঁ, তোমাদের বলা হয়নি টিয়ে ছাড়াও বণিকের সঙ্গে তার স্ত্রী ও কন্যা থাকতেন।

বণিকের স্ত্রী সিল্কের শাড়ি চাইল আর কন্যা একটি খেলনা গাড়ি। কিন্তু, টিয়ে মুখ গোমড়া করে রাখল এবং কিছুই চাইল না। তাই বণিক টিয়ের খাঁচার কাছে গিয়ে বললেন, ‘বন্ধু টিয়ে তোমার জন্য কী আনব? তুমি তো কিছুই চাইলে না।’

টিয়ে একটু দীর্ঘশ্বাস ফেলল তারপর বলল, ‘আমি চাই আপনি সেখানে ভালোভাবে পৌঁছান। আর সেখানে গিয়ে যদি কোনো টিয়ের সঙ্গে দেখা হয় দয়া করে তাদের জানিয়ে দেবেন আমি খুব ভালো আছি। আমি পারস্যের একটি বড় বাড়িতে সোনার খাঁচায় থাকি।’

বণিক খবরটি পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভারতে রওনা হলেন। ভারতের পৌঁছে সব কাজ শেষ করলেন। তারপর স্ত্রীর জন্য শাড়ি এবং কন্যার জন্য খেলনা গাড়ি কিনলেন। এবার বের হলেন টিয়ের খোঁজে। কারণ বন্ধু টিয়েকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তার খবর এখানকার টিয়েদের কাছে পৌঁছে দেবেন।

হাঁটতে হাঁটতে বণিক একটি বাগান খুঁজে পেলেন। যেখানে একদল টিয়ে খেলা করছিল, গান করছিল। তিনি তাদের কাছে গেলেন। তারপর বললেন, ‘বন্ধু টিয়ে, আমি তোমাদের এক বোনের খবর এনেছি। সে একসময় এখানে থাকত, এখন আমার সঙ্গে থাকে।’

একটি টিয়ে উড়ে এসে বণিকের কাঁধে বসল। তারপর বলল, ‘তাই নাকি? নিশ্চয়ই আমাদের বোনটি নিরাপদে আছে।’

বণিক তখন বলল, ‘হ্যাঁ! সে একটি সুন্দর সোনার খাঁচায় থাকে। আমি তাকে সুস্বাদু খাবার খেতে দিই। সে খুব ভালো আছে।’

বণিকের কথা শুনে কাঁধে বসা টিয়েটি হঠাৎ করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। বণিক ভয় পেলেন এবং কিছুই বুঝতে পারছিলেন না। তিনি টিয়েটিকে জাগানোর চেষ্টা করলেন। কিন্তু, টিয়ে মাটিতে পড়ে থাকল।

তখন বণিক চিৎকার করলো, ‘এ আমি কী করলাম? আমি তো শুধু খবর জানাতে এসেছিলাম। কিন্তু, এতে যে একটি টিয়ে মারা যাবে তাতো বুঝতে পারিনি!’

বণিক মন খারাপ করে বাগান থেকে বের হলো। তারপর পারস্যে রওনা দিল। বাড়িতে পৌঁছে স্ত্রী ও কন্যার হাতে উপহার তুলে দিল। তারপর মন খারাপ করে টিয়ের কাছে গেল। টিয়েটি উত্তেজিত হয়ে জানতে চাইল, ‘আপনি আমার বন্ধুদের খবরটি দিয়েছিলেন? তারা আপনাকে কী বলেছে?’

বণিক তখন বলল, ‘তুমি আমাকে যেভাবে বলেছিলে আমিও ঠিক সেভাবে বলেছি। তবে, এটি শোনার পর তোমার এক বন্ধু মাটিয়ে লুটিয়ে পড়ে। তারপর সে মারা গেছে। তার মৃত্যুতে আমি খুব কষ্ট পেয়েছি।’

বণিকের এ কথা শুনে টিয়েটি সোনার খাঁচার মধ্যে লুটিয়ে পড়ল। বণিক চিৎকার করে বলে উঠল, ‘এসব কী ঘটছে? আমার প্রিয় বন্ধুটিও মারা গেল! আমার সঙ্গে কেন এমন হচ্ছে!’

বণিক খুব কষ্ট পেল, আস্তে আস্তে খাঁচার দরজা খুলে টিয়েকে হাতে নিল। তারপর তাকে কবর দিতে বাড়ির পেছনে বাগানে নিয়ে গেল। সেখানে মাটি খোঁড়ার পর পেছনে তাকিয়ে দেখল, টিয়েটি উড়ে গিয়ে কাছের দেয়ালে বসল। এতে বণিক অবাক হলেন, কিন্তু খুশিও হলেন।

তারপর বলল, ‘বন্ধু টিয়ে, আমি তোমার জন্য খুব কষ্ট পাচ্ছিলাম। এখন তুমি বেঁচে আছ জেনে আমি খুশি। কিন্তু, বন্ধু তুমি ওভাবে খাঁচার মধ্যে লুটিয়ে পড়লে কেন?’

টিয়ে হাসতে হাসতে বলল, ‘আসলে ভারতে আমার যে বন্ধু মাটিয়ে লুটিয়ে পড়েছিল সে মারা যায়নি। সে আমাকে খাঁচা থেকে পালানোর উপায় জানিয়ে দিয়েছে। আমিও সেই পথ বেছে নিয়ে আজ মুক্তি পেলাম। তুমিই বলো, সোনার খাঁচা কি কখনো খোলা আকাশের চেয়ে ভালো হয়? আমার জন্য খোলা আকাশ ভালো, যেখানে স্বাধীনভাবে উড়তে পারব।’

বণিক তখন বলল, ‘বন্ধু টিয়ে, আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। কিন্তু, কখনো বুঝতে পারিনি তুমি খাঁচার মধ্যে কষ্টে ছিলে। ঠিক আছে বন্ধু তুমি উড়ে যাও। আমি চাই তুমি ভালো থাকো আর তোমার সুন্দর গান দিয়ে বিশ্বকে পূর্ণ করো।’

তখন টিয়ে ডানা ঝাপটিয়ে খোলা আকাশের দিকে উড়ে গেল।

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!