কঠিন পথ পাড়ি দিলে দেখা মিলবে সোনাইছড়ি ঝর্ণা

যারা ভ্রমণ করতে পছন্দ করে তারা সবসময় অপেক্ষা করে ছুটির দিনের জন্য। ছুটির দিন মানে তাদের জন্য ভ্রমণের দিন। ঠিক তেমনি এক ছুটির দিনে সোনাইছড়ি ঝর্ণার সৌন্দর্য উপভোগ করার সিদ্ধান্ত নিলাম বন্ধুরা মিলে।

আজহার মাহমুদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Nov 2021, 10:49 AM
Updated : 11 Nov 2021, 10:49 AM

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের পাশেই সোনাইছড়ি ঝর্ণা। এ ভ্রমণে সঙ্গী হতে নোয়াখালী থেকে দুই বন্ধু এবং একজন বড় ভাই এসেছেন। আর চট্টগ্রামে আমরা তিন বন্ধু তো আছিই। মোট ৬ জনের এ গ্রুপটি সকাল আটটায় চট্টগ্রামের একেখান থেকে রওনা দিলাম হাদি ফকিরহাটের উদ্দেশ্যে।

হাদি ফকিরহাট জায়গাটি মিরসরাইয়ের একটু আগে। আরও সহজ করে বলতে গেলে নিজামপুর কলেজের পাশে। চট্টগ্রাম নগরীর একেখান থেকে ঢাকা-কুমিল্লাগামী বাসে উঠে হাদি ফকিরহাট বললে নামিয়ে দেবে। জনপ্রতি ৫০-৬০ টাকা করে নেবে।

দুই পাহাড়ার মাঝখানে এ সরুপথ দিয়ে যেতে হবে সোনাইছড়ি ঝর্ণা

যাই হোক বাসে উঠলাম, প্রায় ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে পৌঁছলাম নির্দিষ্ট স্থানে। অর্থাৎ হাদি ফকিরহাটে। গাড়ি থেকে নেমে রাস্তা পার হয়ে যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই দেখিয়ে দেবে ঝর্ণা দেখতে যাওয়ার রাস্তা কোনটা। আবার সেখানে আছে টমটম, সিএনজি এবং রিকশা। আমরা অবশ্য যাওয়ার সময় হেঁটে গিয়েছিলাম, আসার সময় সিএনজি করে এসেছিলাম।

যেহেতু যাওয়ার সময় এনার্জি থাকে তাই হেঁটে যাওয়া যায়। মূলত ঝর্ণায় যাওয়ার পথ শুরু হবে ওই রাস্তার শেষ দিকে পাহাড়ে উঠার মাধ্যমে। পাহাড়ের কাছে যাওয়ার আগেই আছে স্থানীয় মানুষ। আছে ঘরবাড়ি। সেখানকার যুবক এবং বৃদ্ধ অনেকেই গাইড হয়ে পর্যটকদের সঙ্গে যায়। যেহেতু ঝর্ণাটি দেখতে কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয় এবং পথগুলো আঁকাবাকা, তাই প্রথমবার গাইড নেওয়াটা উচিত। আমরাও গাইড নিলাম একজন। গাইড নেওয়ার পর আমরা জয়নাল মামার দোকানে অর্ডার করে নিলাম। জয়নাল মামার দোকানটি এখানে খুব জনপ্রিয়। যারাই সোনাইছড়ি ঝর্ণা দেখতে আসে এ দোকানে খাবার অর্ডার দিয়ে যায়। এখানে খাবার অর্ডার করে তারপর যেতে হয়। মূলত অর্ডার করার পর ওরা রান্না করে। মুরগি, আলু ভর্তা, আর ডাল এ তিন আইটেম দিয়ে আনলিমিটেড ভাত রয়েছে, ১৩০ টাকা করে জনপ্রতি।

এরকম বড় বড় পাথরের উপর হেঁটে যেতে হবে ঝর্ণার শেষ পর্যন্ত

আমরা খাবার অর্ডার দিয়ে আমাদের গাইড আলমগীর ভাইকে সঙ্গে নিয়ে ঝর্ণার পথে এগিয়ে গেলাম। পাহাড়ের আঁকাবাকা পথ এবং প্রচণ্ড গরম আমাদের কিছুটা ক্লান্ত করেছে। তবে অল্প যাওয়ার পর আমরা দেখা পেলাম ঝর্ণায় যাওয়ার আসল রাস্তা। বড় বড় পাথর আর পানি তো আছেই। সঙ্গে আছে বিশাল বিশাল পাহাড়ের খাদ। ভয়ংকর কিন্তু অসম্ভব সুন্দর। দুইপাশে পাহাড় আর মাঝখানে সরু রাস্তা। রাস্তা বলতে এটা সহজ রাস্তা নয় এটা আগেই বলেছি। কখনও বড় বড় পাথর পাড়ি দিতে হবে, আবার কখনও ছোট ছোট পানির গর্ত পাড়ি দিতে হবে। এরপর আবার পাহাড়ে উঠতে হবে।

ঝর্ণায় যাওয়ার পথে একটি গুহা আবিষ্কার করলাম আমি

এর মাঝেই প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করছি। বিভিন্ন প্রজাতির পাখির দেখা মিলবে এ পথে যাওয়ার সময়। তবে ঝর্ণায় যাওয়ার এ রাস্তাটির প্রতিটি অংশ অদ্ভুত সুন্দর। যেন সবখানে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার জন্য আদর্শ জায়গা। এভাবে একসময় গাউডকে অনুসরণ করতে করতে আমরা পৌঁছে গেলাম ঝর্ণার কাছে। এ ঝর্ণা দেখার চেয়ে চারপাশের প্রকৃতি দেখার আনন্দটা বেশি। গ্রীষ্মকাল বলে ঝর্ণার পানি খুব কম। কিন্তু পানি স্পর্শ করতেই শরীর জুড়িয়ে যায়। সূর্যের এ তাপের মাঝে একটুখানি প্রশান্তি পাওয়া যায় এ ঠান্ডা পানিগুলো দিয়ে মুখ ধুয়ে নিলে। পানি পানও করা যায়।

এ কঠিন পথ পাড়ি দিতে গিয়ে অনেক সুন্দর স্থান যেমন দেখেছি তেমন ছবিও তুলেছি। স্মৃতি ধরে রাখতে কে না চায়! ঝর্ণার কাছে এসে দেখলাম এখানে প্রায় ৪০-৫০ জন পর্যটক গ্রুপে গ্রুপে এসেছে। ২০ জনের এক গ্রুপ নাকি এ গহীন পাহাড়ের খাদে ঝর্ণার পাশে রাত্রীযাপনও করেছেন।

বর্ষায় ঝর্ণার পানি থাকে প্রচুর, গ্রীষ্মে পানি খুব একটা দেখা যায় না

যাই হোক, ঝর্ণার পানি পান করলাম, ছবি তুললাম, নাস্তা করলাম এবং হালকা বিশ্রাম নিলাম। এরপর দীর্ঘ সময় ঝর্ণার মনোরম দৃশ্য উপভোগ করে রওনা দিলাম। আমরা যখন বিশ্রাম নিচ্ছি তখন একদল রওনা দিচ্ছে। আমরা যেদিক দিয়ে এসেছিলাম সেদিক দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা যখন ফিরে যাচ্ছি তখন ভিন্ন পথ দিয়ে যাচ্ছি। এ ভিন্ন পথে যাওয়ার কারণটা হচ্ছে সহজ রাস্ত। আর এ সহজ রাস্তাটা গাইড থাকার কারণেই চেনা। ঝর্ণার পাশে পাহাড়ে বেয়ে উপরে উঠতে হবে। এরপর অল্প হেঁটে পাহাড় দিয়ে শুধু নামে গেলে চলবে। মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে আমরা নেমে গেলাম। তখন বুঝলাম গাইড কেন প্রয়োজন। গাইড না থাকলে এমন সহজ পথ আছে কেউ জানত না। তবে পাহাড় বেয়ে উঠা যেমন কষ্ট নামাও তেমন কষ্ট। এটা সোনাইছড়ি ঝর্ণা ভ্রমণে না আসলে বুঝতে পারতাম না।

পুরো ভ্রমণের সার্থকতা খুঁজতে চাইলে প্রথমে বলতে হবে ট্রাকিংয়ের কথা। বড় বড় পাথর আর পাহাড়ের গহীনে যাওয়াটা সহজ বিষয় না। এছাড়া পরিবেশ প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করার স্বাদ তো পাবেনই। তবে ঝর্ণার কাছাকাছি চলে দূর হয়ে যাবে আপনার সব ক্লান্তি।

কীভাবে যাবেন?

এ ধরনের পানিভর্তি খাদগুলো পার হতে হবে সাবধানতার সঙ্গে

ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী যে কোনো বাসে উঠে হাদি ফকিরহাট বাজারে নেমে যেতে হবে। ট্রেনে করে আসলেও সীতাকুণ্ডু নেমে হাদি ফকিরহাট আসা যায়। সেখান থেকে হাদি ফকিরহাট জামে মসজিদের গলি ধরে হেঁটে অথবা সিএনজি নিয়ে বড়-পাথর যেতে হবে। সেখান থেকে শুরু করবেন ট্রাকিং। হাদি ফকিরহাট গ্রাম শেষে পাহাড়ের শুরু থেকে সোনাইছড়ি ঝর্ণা পর্যন্ত যেতে সময় লাগতে পারে তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টা। নেমে আবার সেখানে রাতে ক্যাম্পও করে থাকে অনেকে। চট্টগ্রামের একেখান থেকে হাদি ফকির হাট আসতে পারবেন বাসযোগে।

কোথায় থাকবেন?

এ ভ্রমণ একদিনের, তাই থাকার দরকার পড়বে না। তবু নিতান্ত রাতে থাকতে চাইলে সীতাকুণ্ডু বা মিরসরাইয়ে হোটেল পাবেন। ভালো হোটেলে থাকতে চাইলে চট্টগ্রাম চলে যেতে হবে। এছাড়া অনেক অ্যাডভেঞ্চার-প্রিয় লোক সেখানে রাতে ক্যাম্প করে থাকেন।

খাবেন কোথায়?

সোনাইছড়ি ট্রাকিংয়ে যাওয়ার শুরুর পথে দেখা মিলবে জয়নাল মামার দোকান। ওই এলাকার পরিচিত এ দোকানে ঘরোয়া পরিবেশে খাবার পরিবেশন করা হয়। ট্রাকিংয়ে যাওয়ার আগে অর্ডার দিয়ে গেলে ঘোরাঘুরি শেষ করে এলে খাবার খেয়ে নিতে পারবেন। এছাড়া সীতাকুণ্ডু ও মিরসরাইয়ে ভালো মানের রেস্তোরাঁ রয়েছে।

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!