আরমান সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। সে স্কুল কামাই দেওয়ার পাত্র নয়। এই বৈরি আবহাওয়ার মধ্যেও সে স্কুলে এসে দেখলো তাদের ক্লাসে মাত্র আটজন ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিত।
প্রথম পিরিয়ডে গণিত ক্লাস। যথাসময়ে গণিত স্যারের বদলে ক্লাসে হেডস্যার প্রবেশ করে জানালেন যে গণিত স্যার আজ অসুস্থ বলে আসতে পারেননি। ক্লাস তিনিই নেবেন। সবার রোল কল করার পর হেডস্যার বললেন, না, এতো কম ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে ক্লাস করানো যায় না। তারচেয়ে বরং আজ তোদেরকে দিয়ে একটা বিতর্ক প্রতিযোগিতা করাই। কী বলিস!
সবাই সম্মতিসূচক উত্তর দিলো,
-জি স্যার।
- তাহলে এবার দলগঠন করা যাক। যেহেতু তোরা আটজন এসেছিস, তাই একেক দলে চারজন করে থাকতে হবে। কিন্তু কথা হচ্ছে কীভাবে দলগঠন করা যায়। ছাত্র আর ছাত্রীর সংখ্যা সমান হলে ছাত্র-দল আর ছাত্রী-দল বানানো যেতো। কিন্তু ছাত্র পাঁচজন আর ছাত্রী তিনজন।
হেডস্যার কিছুক্ষণ ভেবে বললেন, আচ্ছা যাদের রোল জোড় তারা দাঁড়া তো।
দেখা গেলো মাত্র দুইজন দাঁড়ালো। তার মানে ছয়জনের রোল বেজোড়। অর্থাৎ জোড়-দল আর বেজোড়-দল বানানোও সম্ভব নয়।
সেকেন্ড বেঞ্চ থেকে আরিফ বললো,
- স্যার আমার মাথায় একটা বুদ্ধি আসছে।
- বলে ফেল।
- স্যার আপনি ভালো করে খেয়াল করলে দেখবেন যে আমাদের মধ্যে এখানে চারজন হিন্দু রয়েছে আর চারজন মুসলমান রয়েছে। আমি, জামাল, ফাতেমা আর আরমান মুসলমান। আর অলোক, শ্রাবন্তী, পূজা আর তপন হিন্দু।
স্যার উল্লাসিত হয়ে বললেন, ভেরি গুড আরিফ। তাহলে মুসলমান দল আর হিন্দু দল বানিয়েই বিতর্ক প্রতিযোগিতা হবে। সবাই প্রস্তুত হয়ে নে।
ফার্স্ট বেঞ্চ থেকে আরমান সাহস নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
- স্যার বেয়াদবি মাফ করবেন। দলগুলো কি অন্যভাবে গঠন করা যায় না?
- কেন? এভাবে থাকলে সমস্যা কী?
- স্যার, এভাবে দলগঠন করলে দলগুলো সাম্প্রদায়িক হয়ে যায়। বিতর্ক প্রতিযোগিতাও সাম্প্রদায়িক প্রতিযোগিতায় রূপ নেবে।
- তাতে সমস্যা কী? আমরা তো আর এখানে মারামারি করছি না।
- সমস্যা আছে স্যার। সাম্প্রদায়িকতা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী। একাত্তরে হিন্দু-মুসলমান সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেই দেশকে স্বাধীন করেছিলো। তাছাড়া আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও আমাদেরকে অসাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতার শিক্ষা দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধরে রাখা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য স্যার। আর বিতর্ক প্রতিযোগিতার জন্য তো লটারির মাধ্যমেও দলগঠন করা যায় স্যার।
আরমানের মতো এতোটুকু ছেলের সাহস ও বুদ্ধি দেখে হেডস্যার মুগ্ধ হলেন। আবেগে আপ্লুত হয়ে চশমাটা খুলে চোখ মুছতে মুছতে বললেন, এভাবে তো ভেবে দেখিনি! তুই আমার চোখ খুলে দিয়েছিস আরমান। তুই আমার ছাত্র হয়েও আজ আমাকে তুই শিক্ষা দিলি। আজ যেন তুই-ই আমার শিক্ষক আর আমি তোর ছাত্র। তোকে আমি স্যালুট জানাই আরমান।
ক্লাসের সবাই আরমানের জন্য জোরেশোরে করতালি দিলো ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হলো। অবশেষে লটারির মাধ্যমেই দলগঠন করে বিতর্ক প্রতিযোগিতা হলো।
লেখক: শিক্ষার্থী, দ্বাদশ শ্রেণি, কাদিরদী কলেজ, বোয়ালমারী, ফরিদপুর
কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না! |