এখানে কেউ ফুল ছেঁড়ে না, ফুল নিজের মতো ঝরে পড়ে
মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেন, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 09 Oct 2021 02:38 PM BdST Updated: 09 Oct 2021 02:38 PM BdST
পড়ন্ত বিকেল। বাগানের পরিচর্যায় তানিশা ব্যস্ত। সপ্তাহের প্রায় সব ক'টা দিনেই তানিশা তার বাগানের ফুল গাছগুলোয় পানি দিতে চেষ্টা করে।
পানি দেওয়ার সময় নরম সবুজ পাতাগুলো যেন মিটমিটিয়ে হাসে৷ তানিশার আনন্দ হয় খুব! মনে একটা সতেজ অনুভূতি হয় ওর! বাগানের ফুলগুলো তার ভীষণ প্রিয়। সবচেয়ে ভালো লাগে সাদা রঙের ফুলগুলো। সাদা রঙের বিভিন্ন ফুল- হাসনাহেনা, বেলী, গন্ধরাজ, কামিনী, শিউলি বাগানে যেন হাসছে। আরও রয়েছে বাহারি রঙের গোলাপসহ বেশ কিছু ফুলের গাছ।
তানিশা এবার পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে। একদিন সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্কুল পরিদর্শনে এলেন। তানিশাদের ক্লাসে এসে বললেন, বলতো ঘড়ির সব কাঁটা কখন একত্রিত হয়? প্রশ্ন শুনে সবাই খুব চিন্তায় পড়লেও তানিশার সপ্রতিভ উত্তর- স্যার দিন ও রাতের বারোটার সময় সব কাঁটা একত্রিত হয়। উত্তর শুনে শিক্ষা অফিসার তানিশাকে ধন্যবাদ দিয়ে একটি কলম উপহার দিলেন।
তানিশার ফুলের বাগান তার পড়ার রুমের পাশে। জানালা দিয়ে ফুলের উপর নানা রঙের প্রজাপতির উড়ে চলা দেখে সে। ফুলগুলো যখন মৃদু হাওয়ায় দোলে তার যে তখন কী আনন্দ! তানিশা যেন ফুলের ভাষা বোঝে, ফুল কি বলতে চাইছে। কেউ ফুল ছিঁড়লে তার চাঁদের মতো মায়াবী মুখটা দুঃখে মলিন হয়ে যায়৷ তানিশা মনে করে ফুল ছেঁড়ার অর্থ ফুলকে মেরে ফেলা, গাছের যেমন প্রাণ আছে ফুলেরও তেমনি প্রাণ আছে।
একদিন তানিশা স্কুল শেষ করে বাড়ি ফিরছে। হঠাৎ এক পরী তার সামনে এসে দাঁড়াল। তানিশা কিছুটা ভয় পেয়ে জিজ্ঞেস করল- কে তুমি? ফুলপরী বলল, আমি ফুলপরী। তানিশা বলল, তাই, তুমি ফুলপরী? খুব সুন্দর দেখতে তুমি। ফুলপরী বলল- তুমিও খুব সুন্দর তানিশা। তোমাকে আমাদের ফুলপরীদের দেশে যেতে হবে। তোমার ভীষণ প্রয়োজন। তানিশা বলল- ফুলপরীদের দেশে! কি মজা! আচ্ছা যাবো। তার আগে বল- তোমার মনটা এত খারাপ কেন? কী হয়েছে তোমার?
ফুলপরি বলল- তুমি আমার ডানায় উঠে বস, যেতে যেতে সব বলব তোমায়।
তানিশা ফুলপরীর ডানায় উঠে বসল। তানিশাকে নিয়ে ফুলপরী ছুটে চলল ফুলপরীদের দেশে। ফুলপরী বলল- জানো তানিশা আমাদের রাজ্যটা ছিল খুব সুখের। ফুলে ফুলে, পাখির গানে মুখরিত ছিল আমাদের রাজ্য। হঠাৎ একদিন এক দুষ্ট দৈত্য এসে আমাদের বাগানের সব ফুল ছিঁড়ে ফেলল। আমাদের রানি এসব দেখে যেইনা তাকে বন্দির নির্দেশ দিল, ঠিক তখনি দৈত্য আরও রেগে গিয়ে তার জাদু দিয়ে আমাদের রানিমাকে পাথরের মূর্তি বানিয়ে দিল।
যাবার সময় বলে গেল, স্কুল পড়ুয়া তানিশা নামের মেয়েকে যদি খুঁজে পাও- যে কিনা ফুলকে খুব ভালোবাসে, সত্য কথা বলে; সে যদি রানিমাকে স্পর্শ করে তবেই কেবল তোমাদের রানিমা প্রাণ ফিরে পাবে।
এটুকু বলতে বলতেই তানিশাকে নিয়ে ফুলপরী তাদের রাজ্যে উপস্থিত হলো। সবাই খুব খুশি তানিশাকে দেখে। এ দিনটার জন্য তারা অনেকদিন ধরে অপেক্ষা করছিল। তানিশা নেমেই রানিমাকে স্পর্শ করল। সঙ্গে সঙ্গে রানিমা জীবন ফিরে পেল।
পুরো রাজ্যে তখন আনন্দের বন্যা। তানিশাকে নিয়ে তারা রাজ্যের সব ফুলের বাগান ঘুরে ঘুরে দেখালো। মিষ্টি নরম রোদে বাহারি সব ফুল দেখে তানিশার চোখে অপার বিস্ময়! তানিশার আনন্দ যেন আর ধরে না! চোখে মুখে তার মুগ্ধতার ছাপ।
রানিমা বলল, দুষ্ট দৈত্য আমাকে প্রায় ১৮ মাস ধরে এমন পাথরের মূর্তি বানিয়ে রেখেছে। সে ইচ্ছে করেই এরকম শর্ত দিয়েছিল এজন্য যে, করোনাভাইরাসের প্রকোপও কমবে না, স্কুলও খুলবে না।
ফুলপরী বলল- আমরা তোমাকে খোঁজার জন্য তোমাদের প্রত্যেকটি স্কুলে নজর রেখেছিলাম। তোমাদের দেশের সবুজ শ্যামল প্রকৃতি আমাকে মুগ্ধ করেছে। তোমাদের দেশের প্রত্যেকটি স্কুল যেন আনন্দের এক রঙিন ফুল। রানিমা বলল, তানিশা তুমি কী উপহার চাও? তানিশা মৃদু হেসে বলল, আমার কিছু চাওয়ার নেই। আমি আপনার উপকারে আসতে পেরেছি এতেই আমি ধন্য। রানিমা তানিশার কথা শুনে তার মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে দিয়ে বুকে টেনে নিলেন।
রানিমা কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ফুলপরী আবার তার ডানায় তানিশাকে উঠিয়ে তার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ডানা মেলল।
কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না! |
সর্বাধিক পঠিত
- মানুষের মাংস পিঁপড়ার পছন্দ
- জয়নুলের ‘দুর্ভিক্ষের চিত্রমালা’
- এ পি জে আবদুল কালামের ৩০টি অমিয় বাণী
- জালাল উদ্দিন রুমির ৩০টি অমিয় পংক্তি
- শিশুর হঠাৎ জ্বর, ওমিক্রন হলেও দুশ্চিন্তা নেই
- একটি ভূতের গল্প লেখার পরের ঘটনা
- শিশুর দেরিতে কথা বলা, কারণ ও করণীয়
- চারটি মজার গল্প
- শরৎচন্দ্রের ছোটগল্প: জীবনের বৃহৎ ইঙ্গিত
- স্বপ্নভঙ্গ