উৎসবের ঋতু শরৎ

নৈসর্গিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ ঋতু শরৎ, বাংলার তৃতীয় ঋতু। শ্রাবণ শেষে এর উপস্থিতি, যে ঋতু ভাদ্র আর আশ্বিন এ দু'মাস মিলে গঠিত।

শেখ একেএম জাকারিয়াবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Sept 2021, 07:20 AM
Updated : 28 Sept 2021, 07:20 AM

এ ঋতুতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দেবী দুর্গার আগমন ঘটে।  বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে মহাসমারোহে পালিত হয় দুর্গোৎসব।

শ্রাবণ শেষে মুষলধারায় বৃষ্টির সমাপ্তি ঘটলে বাংলার নিসর্গ নতুনভাবে সজ্জিত হয়। নভো-এর বুকে উড়ে বেড়ায় শুভ্রমেঘ, মেঘ-রোদের লুকোচুরি খেলায় প্রকৃতি হয়ে ওঠে ঝলমলে, বাতাস হয়ে ওঠে অমলিন।

আকাশ ওই সময়ে গাঢ় নীল রঙের হয়ে থাকে। আকাশের ওই ঝলমলে নীল রঙের আভার কিনারা ছুঁয়ে ফুলের মালার মতো দলবেঁধে উড়ে যায় নানা জাতের পাখি। নিসর্গের বুকে শরৎ নিয়ে আসে অন্য রকম এক শোভা। এসময় বিভাবসুর কিরণে হরিৎ বর্ণের ধানক্ষেত হয়ে ওঠে চিরসুখময় স্থান। মৃত্তিকা ও সবুজ ধানগাছের ডগায় রৌদ্র-ছায়ার সৌন্দর্যবিষয়ক খেলা আমাদের মনকে মোহিত করে।

সারকথা, বিয়ে হয়নি এমন মেয়ের রূপের মতই শরতের প্রকৃতি। যে ঋতুর অনিন্দ্য রূপ মানুষ-জাতিকে সবসময় মুগ্ধ করেছে। এসময়ে গাছগাছড়া হয়ে ওঠে প্রাণপূর্ণ ও মনোহরা।‌ চারপাশের পরিবেশ হয়ে ওঠে হরিৎ বর্ণের, ধানক্ষেত হয়ে ওঠে সবুজ প্রান্তর। নদীর ধারে, বিলের কিংবা খালের পাড়ে শরতের মৃদু বাতাসে দুলতে থাকে সাদা সাদা কাশফুল।

শিউলি ও বকুল গাছের নিচে শিশিরভেজা দূর্বাঘাসের ওপর চাদরের মতো বিছানো থাকে সুগন্ধিযুক্ত অসংখ্য শিউলি-বকুল ফুল। এসময়ে পুকুর-ঝিলে পদ্মফুল ফোটে, হাওর-বিলে ফোটে নানা রঙের শাপলা। তাছাড়া শেফালি, জুঁই, হাসনাহেনা, টগর, মল্লিকা, গাঁদা, হিমঝুরি, গগনশিরীষ, ছাতিম, পাখিফুল, পান্থপাদপ, বকফুল, মিনজিরি, কলিয়েন্ড্রা প্রভৃতি ফুল নৈসর্গিক শোভা আরও বাড়িয়ে দেয়। ফল হিসেবে হাটবাজারে দেখা মিলে আম, আনারস, পেয়ারা, মাল্টা, আমলকী, জলপাই, জগডুমুর, তাল, অরবরই, করমচা, চালতা, ডেউয়া ইত্যাদি। এসব ফুলফলের সুঘ্রাণে বাংলার মানুষ এসময় আনন্দের জোয়ারে ভাসে।

শরতের উপস্থিতিতে বাংলার প্রকৃতি দোয়েল, কোয়েল, চড়ুই ও ময়নার মধুর গুঞ্জনধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে। এক কথায়  প্রকৃতি সাজে অপূর্ব সাজে। বাতাসে বেজে ওঠে পুজোর বাঁশি, যে পুজো বাঙালির অন্যতম প্রধান যজ্ঞ, যার নাম দুর্গাপূজা।

শরতের প্রধান আকর্ষণ এ দুর্গাপূজাকে শারদীয় উৎসব বলা হয়। দেবী দুর্গার আগমনের জন্য বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীরা প্রতীক্ষায় থাকে সারাবছর। সেই প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে দেবী দুর্গা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রতিটি ঘরে চরম আনন্দ নিয়ে আসেন। গগনে পবনে মুখরিত হয় দেবীর আগমন-ধ্বনি। উৎসবে মাতোয়ারা হয় দু'দেশের বাঙালিরা। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা পুজোর ছুটিতে, পুজোর দিনে নেচে-গেয়ে অনেক আনন্দ করে থাকে। উৎসবের ঋতু শরৎকালে বাঙালির আনন্দ অনুষ্ঠান দুর্গাপূজা ছাড়াও লক্ষ্মীপূজা, কালীপূজা, ভাইফোঁটা, জগদ্ধাত্রী পূজা সবই শরতের উপহার। শরতের নানা উৎসব এসময় মানুষের মনকে আনন্দে ভরিয়ে রাখে।

আকাশে ভেসে বেড়ানো শুভ্রমেঘ, নদীতীরে কিংবা খালপাড়ে মৃদুমন্দ বাতাসে দোলে ওঠা শুভ্র কাশফুল, ভোরে হেসে ওঠা শিশিরভেজা শিউলি-বকুল আর দেবী দুর্গার উপস্থিতি সব মিলিয়ে শরৎ যেন শুদ্ধতার ঋতু। শরতের রাতে মেঘহীন আকাশে জোছনার সৌন্দর্য খুব মনোহর।

শৈশবে দাদি-নানির মুখ থেকে শোনা, শরতের এ রাতেই আকাশ থেকে রূপকথার ডানাওয়ালা পরীরা ডানা মেলে বাংলার মাটিতে নেমে আসে। শরৎকালে জোছনার এই মনছোঁয়া সৌন্দর্য আপন নয়নে না দেখলে বোঝা যায় না। তবে এটা সত্য যে, ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে  বহুকাল আগে থেকেই এসময় মানবদেহে বেশ কয়েকটি রোগের প্রকোপ দেখা দেয়। তার মধ্যে আমাশয়, সর্দি-জ্বর উল্লেখ করার মতো। তবু শরতের ভেতর আনন্দময় একটা ঘ্রাণ আছে যা অন্য কোনো ঋতুতে দেখা যায় না।

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!