ভালো বাবা

জাইয়ানের বাবা বই পড়তে ভালোবাসে। বাসায় বড় দুটি বুক শেলফ বিভিন্ন বইয়ে ঠাসা। একটি জাইয়ানের আর অপরটি তার বাবার।

শাহ্জাহান সিরাজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Sept 2021, 05:22 PM
Updated : 10 Sept 2021, 05:22 PM

জাইয়ান বই-পড়ুয়া ছেলে। শিশুতোষ গল্প, কবিতা, রূপকথা তার ভীষণ প্রিয়। জন্মদিনে বই উপহার পেলে খুশিতে হয় আটখানা। জাইয়ান তার বাবার বুক শেলফে মাঝে মাঝে উঁকি দেয়। এইতো কয়েকদিন আগে জাইয়ান তার বাবার কাছে জানতে চায়- বাবা, তোমার কবিতার বইগুলো খুব কঠিন। মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝি না। শেষে কোন মিল খুঁজে পাই না। কিন্তু আমার কিশোর কবিতাগুলো কতো মিষ্টি, কতো সুন্দর অন্ত্যমিল আর উপমা।

বাবা শোনে আর হাসে। বলে- তুমি ঠিকই বলেছো বাবা, বড় হও তখন আমার বুক শেলফের বই পড়ে বুঝতে পারবে। এখন তোমার বুক শেলফের বইগুলো মন দিয়ে পড়তে থাকো।

বাবার কথা শুনে জাইয়ান অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে। জাইয়ানের অনেক বন্ধু প্রাইভেটকারে স্কুলে আসে মা-বাবার সঙ্গে। আবার ছুটি হলে প্রাইভেটকারে বাড়ি ফেরে। জাইয়ান জানে তাদের সামর্থ্য থাকলেও বাবা গাড়ি কেনেন না। একদিন জাইয়ান বাবাকে বলে- বাবা, আমাদের একটা প্রাইভেটকার হলে সুবিধা হতো। তোমার অফিস আর আমার স্কুলে যাওয়া সুবিধা হতো।

উত্তরে জাইয়ানের বাবা বলেন- আমি জানি বাবা, ভালো হতো। কিন্তু আমি এটা চাই না। কারণ যখন তুমি প্রাইভেটকারে স্কুলে যাওয়া-আসা করবে অনেক বন্ধুর সঙ্গে তোমার দূরত্ব তৈরি হতে পারে। সবার সঙ্গে মিশতে পারবে না। বন্ধুদের সঙ্গে হেঁটে স্কুলে যাওয়া, আবার ছুটির ঘণ্টা পড়ামাত্র একসঙ্গে হৈ-হুল্লোড় করে বাড়ি ফেরার মজাটা তুমি পাবে না। অর্থাৎ তোমার জগতটা ছোট হয়ে যাবে। আমি এটা হতে দিতে চাই না। আর তুমি যদি বাবার পরিচয়ে নয় নিজের পরিচয়ে চলতে পারো তবে সবার সঙ্গে মিশতে পারবে সহজেই।

বাবার কথা শুনে জাইয়ান ভাবলো, ঠিকই তো! স্কুলের ধনী-গরিব সবাই তার বন্ধু। তার মনে পড়ে বন্ধু রহিমের কথা। মাঝে মাঝে দুই বন্ধু টিফিন ভাগ করে খায়। একটু চুপচাপ থাকে রহিম ছেলেটা। অনেকদিন ধরে লক্ষ্য করেছে ব্যাপারটা। জাইয়ান ভাবে বন্ধুটির জন্য কিছু করতে হবে। এজন্য জাইয়ান তার বাবার কাছে যায়। বাবার কাছে রহিম সম্পর্কে সব খুলে বলে।

শুনে তার বাবা বলেন, তোমরা বন্ধুরা মিলে সহায়তা করতে পারো। টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে তোমরা বন্ধুরা মিলে সুন্দর পোশাক উপহার দিতে পারো ছেলেটিকে।

প্রস্তাবটি জাইয়ানের পছন্দ হয়। জাইয়ান অন্য বন্ধুদের সঙ্গে তার বাবার আইডিয়া শেয়ার করে। বেশ সাড়া পায় জাইয়ান। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তার বন্ধুর মুখে হাসি ফোটাতে পারে। মনে মনে বাবাকে ধন্যবাদ জানায় জাইয়ান।

জাইয়ানের বন্ধুর সংখ্যা অনেক। এর কৃতিত্ব অনেকটাই জাইয়ানের বাবার। এখন স্কুলটা তার কাছে সবচেয়ে আপন মনে হয়। যেখানে সবার সঙ্গে মেশা যায়। সবার সঙ্গে মজা করা যায়। এমন ভালো বাবার জন্য জাইয়ানের গর্ব হয়।

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!