সাজিদ ও আম গাছ

পলাশপুর গ্রামে সাজিদ নামে এক কিশোরের বসবাস ছিল। সে খুব মেধাবী কিন্তু একটু দুষ্টও বটে।

আনিসুল ইসলাম নাঈমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Sept 2021, 06:30 AM
Updated : 8 Sept 2021, 06:30 AM

প্রতি ক্লাসে সাজিদের রোল এক থেকে দুইয়ে যেত না। এজন্য সাজিদ ছিল সবার পছন্দের। পড়াশোনার পাশাপাশি গান গাওয়া ও ছবি আঁকাতেও ছিল পারদর্শী। সময় পেলেই এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে চষে বেড়াতো। স্কুল মাঠে বন্ধুদের সঙ্গে খেলা ও বিকেল হলে ঘুড়ি উড়ানো তার প্রিয় শখ ছিল। এভাবেই তার সারাদিন কেটে যেত। দুষ্টমির জন্য অবশ্য পরিবার থেকে একটু গালামন্দও শুনতে হতো! কিন্তু সাজিদ সবার আড়াল হয়ে প্রতিদিন এগুলো চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতো।

সময়টা তখন বৈশাখ মাস। এসময় প্রায় সব গাছে আমের সমাহার থাকে। কিন্তু বৈশাখের ঝড়ে প্রায় সব গাছ থেকে কিছু না কিছু আম ঝরে পড়ে। একদিন সাজিদ স্কুলের মাঠে বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করছিল। তখন হঠাৎ প্রচণ্ড বেগে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলো। সবাই স্কুলের বাড়ান্দায় বৃষ্টি থামার অপেক্ষা করছিল।

বৃষ্টির থামার পর তারা বাড়ি ফিরছিল। সবাই একটি আমগাছের নিচ দিয়ে যাচ্ছিল। তারা দেখতে পেল ঝড়ে গাছ থেকে অনেকগুলো আম মাটিতে পড়ে রয়েছে। তখন সাজিদ ও তার বন্ধুরা আমগুলো কুড়িয়ে বাড়িতে নিয়ে গেলো। আমগুলো দেখতে সুন্দর ছিল এবং সাজিদের খেতে খুব মিষ্টি ও রসালো লাগলো।

পরের দিন সাজিদ একা ওই আমগাছের কাছে যায় এবং কিছু আম পেড়ে নিয়ে আসে। এভাবে সে আবার পরের দিন কিছু আম চুরি করে আনে। তারপর থেকে সে প্রায়ই ওই গাছ থেকে আম চুরি করতো। এরমধ্যে একদিন বৃষ্টিতে ভিজে খেলাধুলা করায় সাজিদের প্রচণ্ড জ্বর হয়। জ্বরের কারণে সে বাইরে যেতে পারতো না। কয়েকদিনের মধ্যে সে সুস্থ হয়। তারপর সে আবার ওই গাছের কাছে যায় এবং দেখে ঝড়ের কবলে গাছটি ভেঙ্গে পড়ে আছে। সেখানে গাছের ডাল-পালা ছাড়া আর কিছুই নেই। তখন সাজিদ মন খারাপ করে চলে আসে।

বাড়িতে এসে পরিকল্পনা করে, সে আমগাছের চারা রোপণ করবে। সাজিদ তার ভাইয়ের সহযোগিতায় কতগুলো চারা কিনে আনে এবং খালি জায়গায় রোপণ করে। সাজিদ চারাগুলো অনেক যত্ন করতো। ফলে গাছগুলো তাড়াতাড়ি বেড়ে উঠতে থাকে। কয়েক বছরের মধ্যে গাছগুলো বড় হয় এবং কিছু গাছে আম দেওয়া শুরু হয়। এভাবে আমগুলো বড় হয়ে পাকতে শুরু করে। সাজিদ পাকা দেখে কতগুলো আম ছিঁড়ে আনে এবং মজা করে খায়। সাজিদ নিজের গাছের মধ্যে ঝড়ে ভেঙ্গে যাওয়া আমগাছের সাধ ফিরে পায়। সে বন্ধুদেরও কিছু আম দেয়। তারপর থেকে তার গাছে আরও বেশি বেশি আম ধরে।

সাজিদ এখন বড় হয়েছে। শৈশবে অন্যের গাছ থেকে না বলে আম চুরি করে খাওয়ার জন্য সে অনুতপ্ত। শৈশবের সময়গুলোকে সে অনেক মিস করে। সারাদিন স্কুল আর পড়াশোনার চাপে এখন আর আগের মতো কিছু করা হয় না। সে এখন ভাবে, পরের গাছের আম চুরি করার চেয়ে নিজের লাগানো গাছের আম খাওয়া উত্তম।

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!