মিয়ার দালানে একদিন
আজাহার ইসলাম, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 30 Aug 2021 04:21 PM BdST Updated: 30 Aug 2021 04:21 PM BdST
কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি/ দেশে দেশে কত-না নগর রাজধানী’।
হাজারও ব্যস্ততাকে ছুটি দিয়ে প্রকৃতির সান্নিধ্যে মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে কার না মন চায়! তাইতো অনেকে একটু অবসর পেলে কোলাহল থেকে দূরে সব ব্যস্ততাকে ছুটি দিয়ে ভ্রমণে সময় পার করে। ভ্রমণপিপাসু মন প্রতিনিয়ত নতুন কিছু জানার আগ্রহে থাকে।
ঝিনাইদহ শহর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে মুরারীদহ গ্রামে অবস্থিত ‘মিয়ার দালান’। সব ব্যস্ততাকে ছুটি দিয়ে কয়েকজন বন্ধু মিলে ঘুরতে গিয়েছিলাম সেই জমিদার বাড়িতে। দিনটি ছিল ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি। তখনও মহামারী করোনাভাইরাস আমাদের দেশে হানা দেয়নি।
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হওয়ার সুবাদে খুব বেশি টাকা গুণতে হয়নি মিয়ার দালান ভ্রমণে। দুপুরের ক্লাস শেষে হঠাৎ পরিকল্পনায় ঘুরতে গিয়েছিলাম সেখানে। ক্যাম্পাসের কাছে হওয়ায় চেপে বসলাম ক্যাম্পাসের বাসে। ক্যাম্পাস পেরিয়ে রাস্তা চিরে সাই সাই করে ছুটি চললো বাস।

বলা হয়ে থাকে, বাড়িটি থেকে নবগঙ্গা নদীর নিচ দিয়ে একটি সুড়ঙ্গ ছিল। সুড়ঙ্গের প্রবেশমুখ এখনও চিহ্নিত করা যায়। নদীতে যেভাবে বাঁধ দিয়ে ইমারতটি নির্মাণ করা হয়েছিল, সেভাবে তৈরি আর কোনও পুরোনো ইমারত ঝিনাইদহ শহরে নেই।
জানা যায়, ১২২৯ বঙ্গাব্দে দালানটি নির্মাণ আরম্ভ করেন ওই সময়ের জমিদার সলিমুল্লাহ চৌধুরী। ৭৫ হাজার টাকা খরচে বাড়িটির নির্মাণ শেষ হয় ১২৩৬ বঙ্গাব্দে। সলিমুল্লাহ চৌধুরী স্থানীয়দের কাছে ‘মিয়া সাহেব’ নামে পরিচিত ছিলেন। তাই বাড়িটি ‘মিয়ার দালান’ বলে পরিচিতি পায়। তবে যে জমিদার এ দালানটি নির্মাণ করেন তিনি ১৯৪৭ সালের দেশভাগের সময় ভবনটি বেচে দেন সেলিম চৌধুরী নামে এক লোকের কাছে। তাই ভবনটিকে ‘সেলিম চৌধুরীর বাড়ি’ নামেও কারও কারও কাছে পরিচিত।
ইমারতের প্রধান ফটকে নির্মাণ সময়ের কিছু কথা কাব্যিকভাবে খোদাই করা আছে। তাতে লেখা- ‘শ্রী শ্রী রাম, মুরারীদহ গ্রাম ধাম, বিবি আশরাফুন্নেসা নাম, কি কহিব হুরির বাখান। ইন্দ্রের অমরাপুর নবগঙ্গার উত্তর ধার, ৭৫,০০০ টাকায় করিলাম নির্মাণ। এদেশে কাহার সাধ্য বাধিয়া জলমাঝে কমল সমান। কলিকাতার রাজ চন্দ্র রাজ, ১২২৯ সালে শুরু করি কাজ, ১২৩৬ সালে সমাপ্ত দালান।’
দালানটির ব্যাপক পরিচিতির প্রধান কারণ একটি খেজুরগাছ, যে গাছটিতে একাধিক মাথা ছিল। প্রতিটি মাথা থেকেই রস আহরণ করা যেত। তবে এখন আর খেজুরগাছটি নেই। সেই গাছটি না থাকলেও দাঁড়িয়ে আছে অনেক খেজুর গাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। দালানটি দেখলে মনে হয় নদীগর্ভে দাঁড়িয়ে আছে। চুন-সুরকির সঙ্গে ইটের গাঁথুনির এ দালানে রয়েছে ছোট-বড় প্রায় ১৬টি কক্ষ।

প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়লো সেলফি আর ছবি তোলায় স্মৃতি ধরে রাখতে। বর্তমান যুগে মানুষ যতটা না ভ্রমণে যায় তার চেয়ে বেশি ব্যস্ত থাকে ছবি তুলতে। দালানের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে দেখলাম ও ছবি তুললাম। এ পুরাতন দালানের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মনমুগ্ধকর নবগঙ্গা নদীটি দর্শনার্থীদের নজর কাড়ে।
দালান দেখা শেষে হেঁটে রওনা হলাম আরাপপুরের পথে। এক বন্ধু বললো ভূমি অফিসের সামনে বাণিজ্য মেলা হচ্ছে। ইজিবাইকে চেপে গিয়ে দেখলাম মেলা শেষ হয়ে গেছে। তাই আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে ভূমি অফিস ঘুরে দেখার সুযোগ হাতছাড়া করলাম না। সন্ধ্যায় ঝিনাইদের মালাই চা খেয়ে ফেরার অপেক্ষায়। যে কোন চা-প্রেমীদের এ মালাই চা মুগ্ধ করতে সক্ষম।
এবার ফেরার পালা। ক্যাম্পাসের বাসের জন্য অপেক্ষা করছি আরাপপুর বাস-স্টপে। অপেক্ষার প্রহর পেরিয়ে বাস আসলো। বাসে চেপে ফিরলাম চিরচেনা ক্যাম্পাসে। দিনটি জায়গা করে নিল ভ্রমণপিপাসু মনের মধ্যে।
লেখক: শিক্ষার্থী, আজাহার ইসলাম, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া
কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না! |
সর্বাধিক পঠিত
- জয়নুলের ‘দুর্ভিক্ষের চিত্রমালা’
- মানুষের মাংস পিঁপড়ার পছন্দ
- এ পি জে আবদুল কালামের ৩০টি অমিয় বাণী
- জালাল উদ্দিন রুমির ৩০টি অমিয় পংক্তি
- শিশুর হঠাৎ জ্বর, ওমিক্রন হলেও দুশ্চিন্তা নেই
- একটি ভূতের গল্প লেখার পরের ঘটনা
- চারটি মজার গল্প
- শিশুর দেরিতে কথা বলা, কারণ ও করণীয়
- বঙ্গবন্ধুর বাংলা জন্ম তারিখ কি আমরা জানি!
- ঝড়ের দিনে আম কুড়ানো