হাতবদল

ছোটবেলায় স্কুলের বন্ধুদের নিয়ে লাল-সবুজ-হলুদ কাগজ কেটে পতাকা বানাতেন জালাল স্যার। তিন কোণা করে কাটা সেই পতাকা আটা দিয়ে চিকন দড়িতে লাগিয়ে মাঠের চারদিকে সাজাতেন।

মাসুম মাহমুদমাসুম মাহমুদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 August 2021, 06:18 AM
Updated : 26 August 2021, 06:18 AM

কত রকম খেলা হত তখন! প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীদের সেই সাজ-সজ্জা আর খেলাধুলার কিছুটা দেখাতে ইচ্ছে হলো জালাল স্যারের। এবার তাই স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠান অন্যভাবে সাজিয়েছেন। জালাল স্যার ইফাদের স্কুলের শরীরচর্চার শিক্ষক।

রঙিন পতাকায় সাজানো মাঠের চারদিক ঘুরতে দারুণ লাগছে ইফার। স্কুলের শিক্ষক আর অনুষ্ঠানে আসা অতিথিদের বসার জন্য প্যান্ডেল করা হয়েছে। প্যান্ডেলের সামনে লম্বা টেবিলের উপর থরে থরে সাজানো পুরস্কারের বই। আরও আছে টিনের বাটি, কাচের মগ, পেন্সিল বক্স, কত্ত কী! এত্ত সব পুরস্কার দেখে মজা পায় ইফা। মনে মনে ভাবে- আমার চাই বই।

ইফা দেখে চুনের পাউডারে টানা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে কয়েকজন। ওর বন্ধু সাবাও আছে। সাবা আর ইফার পাশাপাশি বাড়ি। লাইনে দাঁড়ানো সবার হাত পেছন থেকে বাঁধা। নইলে কী করে হবে! এই খেলার নাম যে বিস্কুট দৌড়। স্যার বাঁশিতে ফুঁ দিতেই সবাই দৌড়ে ওপারে গিয়ে লাফাচ্ছে বিস্কুট মুখে নিতে। ইফার খুব মজা লাগছে লাফাতে। এরকম খেলা আগে দেখেনি সে।

এক এক করে কত্তজন মুখে বিস্কুট নিয়ে ফেরত চলে এসেছে। সাবা তখনও মুখে বিস্কুট নিতে লাফিয়ে যাচ্ছে। দেখে হাসি থামছে না ইফার। বিস্কুট দৌড় শেষে মাইকে ঘোষণা বাজছে- এখন ছোটদের একশ মিটার দৌড়। অংশগ্রহণ করবে মনীষা, আসমা, আয়েশা, হোসনা, চম্পা, তানিয়া, সাবা, রিদা ও ইফা। ঘোষণায় নিজের নাম শুনে খুশি লাগে ওর। চুনের পাউডারে টানা লম্বা লাইনে ইফাই সবার আগে এসে দাঁড়ায়। ওর দুই পাশে বন্ধুরা। পেছনে শরীরচর্চার শিক্ষক ঠোঁটে বাঁশি নিয়ে প্রস্তুত। বাঁশিতে ফুঁ দিলেই সবাই দৌড়াবে।

এমন সময় ইফার বড় আপুর কথা মনে পড়ে। আপু একদিন গল্প পড়ে শুনিয়েছিল ইফাকে। অতিথি পাখির গল্প। সেদিন শ্রেণিকক্ষে পণ্ডিত স্যার যখন জানতে চেয়েছিলেন ওদের কার কি ইচ্ছে? তখনই বলেছিল ইফা- দৌড় খেলায় পুরস্কারের বই পেয়ে সেও আপুকে গল্প পড়ে শোনাবে। ইফার ইচ্ছের কথা সেদিন মন দিয়ে শুনেছিল ওর বন্ধু সাবা।

হঠাৎ খেয়াল হয় বন্ধুরা দৌড়াচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে ইফাও দৌড়ায়। ততক্ষণে সবাই অনেক দূর চলে গেছে। একেবারে পেছনে পড়ে মন খারাপ হয় ইফার। বাবার সঙ্গে রোজ সকালে দৌড় অনুশীলন করেও প্রথম হতে পারেনি। ইফা বুঝতে পারে অনুশীলনের সঙ্গে মনোযোগীও হতে হবে। নইলে সবাই ওর আগে দৌড়ে চলে যাবে।

ইফার নিজের আর কোনো খেলা নেই। ঘুরে ঘুরে তাই অন্যদের খেলা দেখছে। দৌড় খেলা, দীর্ঘ লাফ, উচ্চ লাফ, শিক্ষকদের দড়ি টানা, শিক্ষিকাদের চেয়ার খেলা দারুণ লেগেছে ইফার। সবচেয়ে মজা লেগেছে মোরগ লড়াই। একদল ছেলে গোল হয়ে এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে দুই হাতে অন্য পা ভাঁজ করে। এই দৃশ্য দেখে ইফার সেকি হাসি!

পঞ্চম শ্রেণির আলভি মজা করে মাথায় লাল কাপড়ের পট্টি বেঁধে নিয়েছে। দেখতে মোরগের ঝুঁটির মত লাগবে তাই। তারা ভাঁজ করা পায়ে একজন আরেকজনকে ধাক্কা মারছে। সেই ধাক্কায় একেকজন পড়ে যাচ্ছে দেখে হাসতে হাসতে ইফাও পড়ে যায়। আলভি শেষ অবধি টিকে ছিল। আলভির প্রথম হওয়া দেখে আবার বইয়ের কথা মনে পড়ে ইফার। প্রথম যে হবে বই তো তারই!

প্যান্ডেলের পেছনে রকমারি সাজে অপেক্ষা করছে কয়েকজন ছাত্রছাত্রী। তারা যেমন খুশি তেমন সাজ খেলবে। ইফার এক ক্লাস উপরে পড়ে জুঁই। সে ফুলওয়ালী সেজেছে। মাথায়, কানে, গলায় ফুলের অলংকার পরে গুনগুন করে গাইছে। কি যে সুন্দর লাগছে জুঁইকে! দেখে ইফারও ইচ্ছে হয় ফুলেভরা ঝুড়ি হাতে নিয়ে নাচতে।

পুরো শরীরে কাদামাটি মেখে সেজেছে দু’জন ভাইয়া। দেখেই বুঝেছে তারা মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধারা কীভাবে এই দেশ স্বাধীন করেছে রোজ রাতে মা সেই গল্প শোনায় ইফাকে। এসব দেখে দেখেই সময় পেরিয়ে যায়। হঠাৎ মাইকে ঘোষণা আসে- এবার পুরস্কার বিতরণের পালা। প্রথমেই ছোটদের একশ মিটার দৌড়। খেলায় অংশগ্রহণের পুরস্কার নিতে আসবে চতুর্থ শ্রেণির কামরুন্নেছা ইফা। নিজের নাম শুনে ভীষণ আনন্দ হয় ওর! দৌড়ে গিয়ে প্যান্ডেলের সামনে দাঁড়ায়। প্রধান শিক্ষকের হাত থেকে এত্তগুলো রং-পেন্সিল উপহার নিয়ে খুব খুশি ও।

প্যান্ডেল থেকে ফিরে ইফার খিদে পায়। স্কুলে টিফিন মানেই আলম চাচার ঝালমুড়ি। বাবার কাছে আলম চাচার গল্প শুনেছে। একই স্কুলে ইফার বাবাও পড়তেন। তিনি ডাকতেন আলম ভাই। এজন্য ইফার চাচা। ঝালমুড়ির ভ্যানে তাড়াতাড়ি পৌঁছতে ইফা দৌড়ায়। ওর পেছনে সাবাও দৌড়াচ্ছে। পৌঁছে সাবা ওর পুরস্কার পাওয়া বইগুলো ইফার দিকে বাড়িয়ে ধরে বলে, আমার বইগুলো নিয়ে তোমার রং-পেন্সিলগুলো দেবে? কত্তগুলো ছবি এঁকেছি। এখন পেন্সিল নেই, তাই রং করতে পারছি না!

কিছু একটা ভেবে ইফা বলল, যেদিন আপুকে গল্প পড়ে শোনাব তোমাকেও ডাকব। তুমি যদি আস তবে দিতে পারি। এত্তগুলা বই একা একা পড়া যায়, বলো! আলম চাচা ঝালমুড়ি বানাতে পেঁয়াজ কাটছে আর ওদের হাতবদলের কথা শুনছে। পেঁয়াজে ঝাঁজ নেই তেমন, তবু আলম চাচার চোখে পানি।

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!