[‘দ্য স্টোরি অব জ্যাক স্প্রিগিনস অ্যান্ড দ্য এনচান্টেড বিন’ শিরোনামে এ ইংরেজি রূপকথাটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৭৩৪ সালে, অলঙ্করণ করেন আর্থার র্যাকহাম। পরে ১৯১৮ সালে ফ্লোরা অ্যান স্টিল সম্পাদিত ইংরেজি রূপকথার বইয়ে এটি সংযোজিত হয়।]
গ্রামটি ছিল উপত্যকার নিচে। গ্রামের উপকণ্ঠে দাঁড়িয়ে ছিল একটি ছোট্ট কুটির। সেই কুটিরে একমাত্র পুত্র জ্যাকের সঙ্গে এক বিধবা নারী থাকতেন।
তারা ছিল দরিদ্র, কোনো ভালো জামাকাপড় এবং পায়ে ভালো জুতো ছিল না। তবে, শোনা যায়— তাদের কাছে অনেক দামি একটি প্রাণী ছিল— একটি দৃষ্টিনন্দন, ক্যারামেল রঙিন গরু।
জ্যাক প্রতিদিন খুব সকালে ঘুম থেকে উঠত। সকালবেলা সে গরুর দুধ সংগ্রহ করে ডেইরি ফার্মের দিকে রওনা হত। দুধের দাম ছিল মাত্র কয়েক পেনি, কিন্তু জ্যাক এতে কিছু মনে করত না। সে ডেইরির কৃষকের কাছ থেকে খুশিমনে পেনি গ্রহণ করত এবং বাজারসদাই করে ঘরে ফিরত। জ্যাক প্রতিদিন এটি করত। গরু থেকে পাওয়া দুধ জ্যাক এবং তার মায়ের ব্যয় নির্বাহে সাহায্য করার জন্য যথেষ্ট ছিল।
কোন এক বছর ভয়াবহ শীত এসেছিল গ্রামে। এত দুরন্ত বাতাস এবং বিশাল বিশাল তুষারপাত— এর আগে গ্রামবাসীরা কখনও দেখেনি।
পরের বসন্তে ঘাস বাড়েনি। ঘাস ছাড়া গাভীর কোনো খাদ্য ছিল না। জ্যাকের দুর্বল গাভীটি খুব শিঘ্রই দুধ উৎপাদন করা বন্ধ করে দিল।
‘মা’!— জ্যাক কাঁদল। ‘আজ সকালে আমাদের প্রিয় গাভীর কাছ থেকে আমি এক ফোঁটা দুধও পেলাম না।’
মা জবাব দিয়েছিলেন- ‘হায় হায়, আমি আশঙ্কা করেছিলাম যে এ দিনটি আসবে এবং তাই হল। জ্যাক, আমার প্রিয় ছেলে, এখন আমাদের মূল্যবান গরুটি বিক্রি করার সময় এসেছে। তাকে বাজারে নিয়ে যাও এবং সর্বোচ্চ দরে বিক্রি কর।’
জ্যাকের খারাপ লাগছিল। সে বলল, ‘গাভী বিক্রি করে কিছুদিনের অর্থের সঞ্চার হবে, তারপর আমরা কী করব?’
‘চিন্তা কর না জ্যাক, আমরা কিছু ভেবে দেখব।’, মা উত্তর দিলেন।
অধ্যায়-২
জ্যাক গরুটি নিয়ে বাজারে রওনা দিল। বাজারে পৌঁছানোর আগে সে এক কসাই-বন্ধুর মুখোমুখি হল। কসাই একটি নীল এবং সাদা স্ট্রিপড অ্যাপ্রোন, একটি খড়ের টুপি পরেছিল এবং একটি ছোট, সবুজ ড্রাস্ট্রিং ব্যাগ বহন করেছিল। কসাই জ্যাকের কাছে গেল। ‘এই সুন্দর গরু নিয়ে কোথায় যাচ্ছ বন্ধু?’, কসাই জ্যাককে জিজ্ঞেস করল।
জ্যাক উত্তর দিল, ‘আমি তাকে বিক্রি করতে বাজারে নিয়ে যাচ্ছি।’
‘তুমি কি সত্যি এটা বিক্রি করবে?’, কসাই অবাকচোখে প্রশ্ন করল।
‘হ্যাঁ’, জ্যাক বলল, ‘আমার মা আমাকে বাজারে গিয়ে কেবলমাত্র সর্বোচ্চ দরদাতার কাছে এটি বিক্রি করার জন্য বলেছেন।’
‘আমি তা দেখতে পাচ্ছি’, কসাই উত্তর দিল।
কসাই বলল, ‘আমি তোমাকে আজীবনের জন্য মূল্যবান অফার দিচ্ছি। তবে, বর্তমান বাজারে অন্য কারও কাছ থেকে তুমি যা পাবে তার চেয়ে হাজার গুণ কম দামের অফার।’
জ্যাক বিস্ময়ে কসাইয়ের দিকে তাকাল। ‘এই অফার কী?’, জ্যাক জিজ্ঞাসা করল।
‘ম্যাজিক শিমের বিচি।’ কসাই বলল। এগিয়ে এসে একটি ছোট্ট সবুজ থলি খুলে ধরল। জ্যাক ভেতরে তাকাল।
‘তিনটি শিমের বিচি!’, বিস্মিত জ্যাকের প্রশ্ন।
‘তিনটি ম্যাজিক শিমের বিচি।’, কসাই জবাব দিল, ‘এটি অবশ্যই তোমার এবং তোমার প্রিয় মায়ের— জীবনের উন্নতি করবে।’
জ্যাক একটি মুহূর্তের জন্য স্থির হয়ে গেল।
‘এমন জাদুকরি মূল্যবান কিছু যা আমার মাকে সাহায্য করবে। খুব ভাল।’ জ্যাক বলল।
সে তিনটি জাদুর শিমের বিচিযুক্ত ছোট্ট থলিটির জন্য গরুটি বিনিময় করল এবং বাড়ি ফিরল।
অধ্যায়-৩
জ্যাক তার কসাইবন্ধু এবং শিমের বিচি সম্পর্কে তার মাকে জানাল। আশঙ্কায় মায়ের মুখটি কুঁকড়ে গেল।
‘তুমি এটা কী করেছ?’ মা রেগে গিয়ে বললেন।
‘কিন্তু মি...মি… মা, সে বলেছে এগুলো যাদুর শিমের বিচি এবং… এ...এবং...এ...এবং… তারা আমাদের সাহায্য করবে… এবং…’, কথা শেষ করার আগেই সে থেমে গেল। জ্যাক— এখন নিজের মুখের কথা নিজেই বিশ্বাস করতে পারছে না। এটি হাস্যকর লাগছিল। হঠাৎ লজ্জায় সে গুটিয়ে গেল।
সে কাঁদতে লাগল।
‘ওহ মা’, সে চিৎকার করে বলল, ‘আমি খুব দুঃখিত। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না আমি এত নির্বোধ কিছু করেছি। তুমি কি কখনও আমাকে ক্ষমা করতে পারো?’
‘তোমার ঘরে যাও জ্যাক।’, মা বললেন, ‘তুমি যা করেছ তা নিয়ে তোমাকে অবশ্যই দীর্ঘ ও কঠোর চিন্তা করতে হবে।’
শিমের বিচির ছোট্ট থলিটি হাতে নিয়ে জ্যাক ঘুরে দাঁড়ায়। সিঁড়ি ভেঙে তার শোবার ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। সে তার তালুতে শিমের বিচিগুলি টিপল এবং বিছানায় বসল।
‘আমি এত বোকা হতে পারলাম কী করে! তিনটি জ্বলজ্বলে ছোট্ট বিচি পুরো গরুর বিনিময়ে?’ সে নিজের প্রতি রাগ করে বলল।
প্রচণ্ড ক্রোধে সে নিজের মুঠি বন্ধ করে জানালার বাইরে বিচিগুলি ছুঁড়ে মারল। তারপর বিছানায় কুঁকড়ে গিয়ে গভীর ঘুমে পড়ল।
অধ্যায়-৪
জ্যাক যখন জাগল তখন সকাল হয়ে গিয়েছে। এ বিশেষ সকাল উজ্জ্বল এবং রোদ ছিল, অদ্ভুত । কারণ জ্যাকের শয়নকক্ষের জানালা দিয়ে সাধারণত আলো আসে না। এই বিশেষ সকালে, তার ঘর আলোকিত হয়ে ওঠে। জ্যাক ছুটে গেল জানালায়।
জানালার বাইরে তাকিয়ে নিশ্বাস ফেলল সে। আকাশে উঁচু হয়ে দশটি শক্তিশালী ওকের মতো বিশালাকার শিমের লতা উঠেছে।
‘তারা জাদুর শিমের বিচি ছিল, সম্ভবত কসাই এই ধনসম্পদের কথা বলেছিল। আমরা কি ধনী হতে চলেছি?’, জ্যাক চিৎকার করে বলল।
দ্বিতীয় চিন্তা না করেই জ্যাক তার শোবার ঘরের জানালা থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে জাদুর শিমগাছের লতার উপর। দুর্দান্ত পাতা ও লতাগুলো মইয়ের মতো ছড়িয়ে পড়ল। জ্যাকের পক্ষে আকাশচুম্বী উচ্চতায় ওঠা সহজ হয়ে যায়।
সে আরোহণ শুরু করে। উচ্চ থেকে উচ্চতর জায়গায় উঠতে থাকে সে। নিচে তাকানোর জন্য এক মুহূর্তের জন্যও থামছে না। জ্যাক এতটাই উঁচুতে ছিল যে তার কুটির, গ্রাম এবং আশপাশের সমস্ত জমি আর আর দেখা যায় না।
হঠাৎ, একটি সঙ্কীর্ণ কণ্ঠস্বর শুনতে পেল, ‘জ্যাক, তুমি কি?’
‘হ্যাঁ’, বলল জ্যাক।
একটি ছোট্ট, সুন্দর পরী এসে— জ্যাকের নাকের ডগা থেকে কয়েক ইঞ্চি দূরে বাতাসে উড়তে থাকে।
পরী বলল, আমি তোমাকে দেখতে অনেক বছর ধরে অপেক্ষায় আছি। তোমাকে বলার মতো আমার কাছে একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ রহস্য রয়েছে।’
জ্যাক অবাক হয়ে গেল। ‘তাই নাকি!’, সে বলল।
পরী বলল, ‘তোমার বাবা একসময় খুব ধনী লোক ছিলেন।’
‘আমার বাবা মারা গেছেন।’, জ্যাক বলল।
পরী বলল, ‘তবে কীভাবে তিনি মারা গেলেন তা তুমি জানতে চাও না?’
‘মা বলেছিলেন তিনি অসুস্থ হয়ে মারা গিয়েছিলেন।’, জ্যাকের উত্তর।
‘ওহে প্রিয় জ্যাক...’, পরী বলল। ‘তোমার মা তোমাকে রক্ষা করতে চেয়েছিলেন। তোমার বাবা অসুস্থ ছিলেন না। তিনি রাজ্যজুড়ে অনেক পরিচিত ছিলেন। কারণ, তিনি সমস্ত প্রাণীর মধ্যে সবচেয়ে বিরল এবং দুর্দান্ত এক রহস্যময় সোনার মুরগির মালিক ছিলেন, যে প্রতিদিন একটি সোনার ডিম দিত’।
জ্যাক হতবাক হয়ে গেল। ‘তো… তিনি কীভাবে মারা গেলেন?’, সে জিজ্ঞাসা করল।
পরী— এখনও তার সামনে স্নিগ্ধভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার হাত বাড়িয়ে একটু দূরের দিকে ইঙ্গিত করল।
‘দেখ সেই দুর্গ। সেই দুর্গে একটি দৈত্য বাস করে। আর এই অত্যাচারী দৈত্য তোমার বাবাকে খেয়েছে এবং তার সোনার মুরগি চুরি করেছে। জ্যাক অবশ্যই প্রতিশোধ নিতে হবে এবং যা ঠিক তোমার তা ফিরিয়ে নিতে হবে।’
কিন্তু জ্যাক উত্তর দেওয়ার আগে পরী নিখোঁজ হয়ে গেলো। জ্যাক নিজেকে স্থির করতে এক মুহূর্ত সময় নিয়ে দুর্গের দিকে রওনা দিল। জ্যাক এত বড় কোনও দুর্গ কখনও দেখেনি। দুর্গের দরজার দিকে যেতে তার পদক্ষেপগুলো লম্বা লাগছিল। দরজাটি একটি শক্তিশালী ওকের মতো বড়। দরজা দেখে সে যারপরনাই অবাক হল। তার সামনে দুটি বিশাল পাথরের সিংহের মূর্তি দাঁড়িয়ে।
জ্যাক গভীর নিঃশ্বাস ফেলল। কোনও ভয় ছাড়াই সে মাটিতে শুয়ে সামনের দরজা নিচের দিকে ঘুরিয়ে দিল।
অধ্যায়-৫
জ্যাক উঠে দাঁড়িয়ে নিজেকে পরিষ্কার করল। সে চারপাশে আস্তে আস্তে তাকাল, তার চারপাশের কক্ষগুলোর অবস্থা বুঝার চেষ্টা করল। বিশাল, সুন্দরভাবে খোদাই করা কাঠের দরজাগুলো তার সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াল। হঠাৎ মাটি কাঁপতে শুরু করে—শক্তিশালী পায়ের আওয়াজ চারদিক কাঁপিয়ে তুললো।
হঠাৎ একটি দরজা খুলে গেল। দৈত্যটি মুহূর্তের মধ্যে হাজির হল। জ্যাক একটি টেবিলের আড়ালে লুকিয়ে পড়ল। সোনার মুরগিটি হাতে নিয়ে দৈত্য রান্নাঘরের দরজা খুলে ফেলে।
‘আমার নৈশভোজ কোথায়?’, দৈত্য তার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করল।
‘খুব দ্রুত আসছে প্রিয়।’, দৈত্যের স্ত্রী বলল।
দৈত্য রান্নাঘরের টেবিলে বসে সাবধানে তার সামনে সোনার মুরগিটি রাখল।
জ্যাক দ্রুত আরেকটি টেবিলের নিচে নিজেকে লুকাল।
‘ওহ্! আমি চাই আপনি এই জিনিসটি রাতের খাবারের টেবিলে রাখবে না!’, দৈত্যের সামনে ধোঁয়া উঠা স্টুয়ের একটি বিশাল বাটি রেখে তার স্ত্রী বলল। দৈত্য তার দিকে তাকিয়ে রইল।
‘এই জিনিসটি আমার সোনার মুরগি। এটি আমাকে তুষ্ট করেছে তার প্রতিদিনের সোনালি ডিম দেওয়ার কারণে ...’, বলে থামল দৈত্যটি। তারপরে খুব আস্তে আস্তে চারদিকে তাকাল— তার নাকটি বাতাসে তুলল। ফি… ফি… ফম… ফম, আমি একজন মানুষের রক্তের গন্ধ পাচ্ছি! ’
তার স্ত্রী বলল, ‘যেদিন মুরগিটি চুরি করেছিলে সেদিন থেকে তুমি কোনও মানুষ খাওনি। ওইদিনই সর্বশেষ মানুষ খেয়েছিলে। তাই হয়ত... এখন তোমার রাতের খাবার খাও শীত পড়ার আগেই।’
দৈত্য তার স্টু খেল। তারপর তার মাথাটি টেবিলে রেখে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ল।
অধ্যায়-৬
‘এটি আমার সুযোগ।’, জ্যাক ভাবল।
সে দ্রুত টেবিলের নিচ থেকে বের হল। দৈত্য যাতে জেগে না ওঠে সেই ভয়ে শ্বাস বন্ধ রেখে সাহস করে— টেবিলের সামনে এগিয়ে গেল। সাবধানে সোনার মুরগিটি তার বাহুর নিচে রেখে টেবিলের শেষদিকের খোলা জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়ল। দৈত্যের স্ত্রীর গলাফাটানো চিৎকার শুনতে পেল।
দৈত্য হুড়মুড়িয়ে উঠে সব শুনে রাগে ফুঁসতে শুরু করল।
‘কোথায় সে?’, গর্জে উঠল দৈত্য।
‘ওদিকে। সে তোমার সোনার মুরগি চুরি করে পালাচ্ছে।’ জ্যাকের পালানো জানালাটির দিকে ইঙ্গিত দৈত্যের স্ত্রী বলল। কিন্তু খুব দেরি হয়ে গেল। জ্যাক পালিয়ে এলো এবং দুর্গ থেকে সুরক্ষিত অবস্থায় ফিরে এলো।
মাটিতে ফিরে আসার পরে জ্যাক জাদুর শিমগাছ কেটে ফেলল। এরপর দৈত্য বা তার স্ত্রীকে আর কখনও দেখা যায়নি। পরীর কথাই সত্য হল। মুরগিটি প্রতিদিন একটি করে সোনার ডিম দেয়।
খুব শিঘ্রই জ্যাক এবং তার মায়ের কাছে একটি নতুন গাভী কেনার জন্য যথেষ্ট পরিমাণে টাকা জমে গেল। তারপর— সেদিন থেকে তারা সুখি এবং সমৃদ্ধ জীবনযাপন করতে শুরু করল।
কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না! |