বেঁধেছে এমন ঘর, শূন্যের উপর পোস্তা করে

ইকোসিস্টেম বা বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষায় মরা গাছ ভূমিকা পালন করে। মরা গাছের ওপর খাদ্যজালে জড়িয়ে কত জীব যে বাসা বেঁধে বেঁচে রয়েছে তার ইয়ত্তা নেই।

শেখ আনোয়ারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 June 2021, 06:35 AM
Updated : 28 June 2021, 06:35 AM

গাছের কোটরে বাসা বানানোর এ কৌশল দেখে মনে পড়ে লালন সাঁই এর গান- ‘ধন্য ধন্য বলি তারে/ বেঁধেছে এমন ঘর/ শূন্যের উপর পোস্তা করে’। কীভাবে? পেঁচা, টিয়া, বসন্তবৌরি, কাঠঠোকরা পাখি পুরনো গাছের মোটা জালে বা গুঁড়িতে হয় ঠোঁট দিয়ে গর্ত খুঁড়ে বাসা বানায়, নয়তো প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হওয়া কোটরে বাস করে। বহু সাপ, উভচর ও স্তন্যপায়ী প্রাণী এসব কোটরে জীবন কাটায়।

কিন্তু তাদের সহায়ক হলো ছত্রাক। বৃদ্ধ কোন গাছের ডালে কোন ক্ষত সৃষ্টি হলে অথবা ঝড় বৃষ্টিতে ডালপালা ভেঙ্গে পড়লে সেই ক্ষত দিয়ে কাঠ পচাতে ওস্তাদ ছত্রাকেরা গাছের মধ্যে প্রবেশ করে কাঠ পচাতে শুরু করে দেয়। বহুদিন ধরে ক্ষতস্থানের আশপাশের কাঠ পচে তৈরি হয় বড়সড় গর্ত।

ক্ষত দিয়ে যে ছত্রাক একবার গাছের মধ্যে প্রবেশ করলো, সে কিন্তু ধীরে ধীরে ডালের একটি বড় অংশকে পচিয়ে ফেলতে পারে। গাছের প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হলে গোটা গাছটাই ছত্রাকের এ আক্রমণে মারা পড়বে।

গাছের গুঁড়ি বা মোটা ডালের মাঝখানে যে শক্ত অংশ থাকে তাকে বলে ‘হার্ট উড’। সেই কাঠের কোষগুলোর মোটা দেয়াল প্রধানত সেলুলোজ ও লিগনিন নামের রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে তৈরি। কাঠে পচন ধরানো ছত্রাক এ রাসায়নিক দুটোকে উৎসেচকের সাহায্যে অপেক্ষাকৃত সরল যৌগে ভেঙ্গে ফেলে নিজেদের খাদ্য তৈরি করে। ফলে শক্ত, ভারি কাঠ নরম ও হালকা হয়ে যায়।

এবার এই পচা নরম কাঠেই গর্ত খুঁড়ে বাসা তৈরি করে পাখিরা। তবে তাদের ঠোঁট যতই তীক্ষ্ম হোক, পুরনো গাছের নীরোগ কাঠ খুঁড়ে বাসা বানাবার সাধ্যি ওদের নেই। ছত্রাকের পক্ষে সেই নরম কাঠ খুঁড়ে বাসা তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে এবং তার বড় প্রমাণ ফলদেহ বা ফ্রুটবডি।

বর্ষাকালে গাছের ডালে বা গুঁড়িতে নানা রঙের কাঠ বহু রকমের পোকামাকড় শুধু বেঁচেই থাকে না, সেখানে তারা বংশবৃদ্ধিও করে। এসব পোকামাকড়ের দলে রয়েছে নানা ধরনের বিটল, বোলতা ও উই ইত্যাদি। পোকামাকড়ের নরম শূককীট অনেক পাখির শুধু প্রিয়ই নয়, প্রয়োজনীয় খাদ্যও। পাখিরা তাদের ছানাদের শূককীট খাইয়ে তাদের শরীরের পানির অভাব পূরণ করে।

অবাক করা ব্যাপার হলো, অনেক ছত্রাক খুব বেশি বয়সের গাছ না হলে তাদের আক্রমণ করে না। ছত্রাক আক্রমণ না করলে আবার কাঠও নরম হবে না। ফলে কোটরে পাখিরা বাসাও তৈরি করতে পারবে না। ‘বৈলনাম পিনি’ নামের ছত্রাক এক প্রজাতির পাইন গাছ আশি বছর বয়স পেরিয়ে গেলেই তাকে আক্রমণ করতে পারে, তার আগে নয়। সেই আক্রান্ত কাঠে বাসা করে এক প্রজাতির কাঠঠোকরা।

কাঠের জন্য পুরনো পাইন গাছ কেটে ফেলবার জন্য আমেরিকায় এ পাখির সংখ্যা এখন দারুণভাবে কমে আসছে। প্রায় একই কারণে সেখানে লুপ্ত হয়েছে অন্য এক প্রজাতির কাঠঠোকরাও। শুধু তাই নয়, বুড়ো গাছের অভাবে সেসব গাছের কাঠ পচানো ছত্রাকেরাও বিপন্ন হবে। কে বলতে পারে সেই ছত্রাকের মধ্যে ক্যান্সার বা মৃত্যুঘাতী করোনাভাইরাস রোগ প্রতিরোধের রাসায়নিক নেই!

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!